গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। এই সময়
সঠিক পুষ্টি গ্রহণ শিশুর সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত করে। এ সময় শিশুর মস্তিষ্ক,
হৃদপিণ্ড, স্পাইনাল কর্ড এবং অন্যান্য প্রধান অঙ্গ গঠিত হয়। গর্ভবস্থার
শুরুর দিকে অর্থ্যাৎ প্রথম তিন মাস গর্ভবতী মায়েদের মাথা ঘোরা, বমি, বমিবমি
ভাব এ ধরনের উপসর্গ সাধারনত দেখা দেয়। তাই, এই পর্যায়ে সঠিক পুষ্টি গ্রহণ
করা অত্যন্ত জরুরি। জেনে নিন প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা সম্পর্কে।
১. আঁশজাতীয় খাবারঃ গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য প্রায় সকল
গর্ভবতী মায়েদের হয়ে থাকে। তাই গর্ভাবস্থার প্রথম থেকে আঁশজাতীয় বা ফাইবার
সমৃদ্ধ খাবারগুলো খাওয়া প্রয়োজন। আঁশ বা ফাইবার গর্ভাবস্থায়
পরিপাকতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এটি কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আঁশ বা ফাইবারযুক্ত খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে ওটস, ছোলা, সবুজ মটর, ভুট্টা,
বাদামি ভাত, ব্রকলি ইত্যাদি। গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম
আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। আঁশের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি (৮-১০
গ্লাস) পান করা জরুরি, কারণ কম পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই,
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ যুক্ত করা মায়ের ও শিশুর
সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
২. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ গর্ভবস্থার শুরু থেকেই গর্ভবতী
মায়েদের প্রতিদিন প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারগুলো খাওয়া জরুরি। প্রোটিন
গর্ভাবস্থায় শিশুর টিস্যু, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, পেশী এবং মস্তিষ্কের বিকাশের
জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মায়ের শক্তি সরবরাহ করে, রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং রক্তের সঠিক প্রবাহ বজায় রাখে। তাই গর্ভবতী মায়েরা
প্রথম তিন মাস ডিম, মাছ, মাংস, ডাল ও শিমজাতীয় খাবার, দুধ ও দুগ্ধজাত
খাবার, বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার ইত্যাদি খাওয়া শুরু করবেন।
তবে সব ধরনের মাছ এবং আধাসিদ্ধ ও কাঁচা ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন ৭০-১০০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত (মায়ের ওজন
ও ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী)। প্রথম তিন মাসে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০-৭০ গ্রাম
প্রোটিন প্রয়োজন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ৮০-১০০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন
প্রয়োজন হতে পারে। গর্ভাবস্থায় সঠিক পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ মা ও শিশুর
সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। তাই, প্রাকৃতিক উৎস থেকে স্বাস্থ্যকর প্রোটিন
গ্রহণ করলে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ ভালো হবে।
৩. ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারঃ গর্ভাবস্থায় মায়ের এবং শিশুর সঠিক
বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য ভিটামিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন শিশুর
অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা
করে। ভিটামিন এ, বি, সি, ডি জাতীয় খাবারগুলো গর্ভের প্রথম তিন মাসে বেশি
প্রয়োজনীয়। এসব খাবারের মধ্যে কালারফুল শাকসবজি, ফল, দুধ, ডিমের কুসুমসহ
ডিম, শস্য, বীচি, ডাল, বাদাম, তাজা ফল, টক জাতীয় ফল, ইত্যাদি খাবারগুলো
খেতে হবে।গর্ভাবস্থায় কোনো ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে ডাক্তারের
পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করতে সুষম খাবার খাওয়া
জরুরি। ফল, শাকসবজি, মাংস, মাছ, ডিম, দুধ ও বাদাম নিয়মিত খাদ্য তালিকায়
অন্তর্ভুক্ত করুন। ভিটামিন সি এবং ফলের মাধ্যমে আয়রন শোষণ বাড়ান। তাজা,
প্রাকৃতিক খাবার বেশি করে খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং প্রসেসড খাবার এড়িয়ে
চলুন। গর্ভাবস্থায় ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া মায়ের এবং শিশুর
স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পুষ্টি এবং ভিটামিনের মাধ্যমে শিশুর
উন্নতি ও মায়ের শক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব।
৪. আয়রন সমৃদ্ধ খাবারঃ গর্ভবতী মায়েদের গর্ভধারনের আগে আয়রনে
সমস্যা হতে দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় আয়রন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি
রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে, যা মায়ের ও শিশুর শরীরে অক্সিজেন
পরিবহণে সহায়তা করে। আয়রনের অভাবে অ্যানিমিয়া (রক্তস্বল্পতা) হতে পারে, যা
মায়ের শক্তি কমিয়ে দিতে পারে এবং শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই
গর্ভধারনের শুরু থেকে আয়রনসমৃদ্ধ খাবারগুলো খাওয়া জরুরি।
আয়রনসমৃদ্ধ খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিম, কলিজা, সবুজ শাকসবজি, কচু শাক,
কলমি শাক, শুকনো ফল, পালংশাক, ছোলা ইত্যাদি। গর্ভের প্রথম তিন মাসে আয়রন
সমৃদ্ধ খাবারগুলো খাওয়ার ফলে শিশুর গঠন ও বৃদ্ধি ঠিক থাকে। গর্ভবতী মায়েদের
প্রতিদিন ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন।প্রথম তিন মাসে ২০-২৫ মিলিগ্রাম আয়রন
প্রতিদিনের জন্য যথেষ্ট হতে পারে, তবে পরবর্তী তিন মাসে ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন
দরকার হতে পারে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খান এবং ভিটামিন
সি যুক্ত খাবার খেয়ে আয়রন শোষণ বাড়ান।
৫. ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারঃ গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারগুলো খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ন। ক্যালসিয়াম
গর্ভাবস্থায় মায়ের হাড় শক্ত রাখতে, শিশুর হাড়ের বিকাশে, এবং স্নায়ুতন্ত্র
ও পেশির সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায়
ক্যালসিয়ামের চাহিদা বাড়ে, কারণ এটি শিশুর হাড় এবং দাঁত গঠনে সাহায্য করে।
ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য ভিটামিন D অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাই সূর্যের আলোতে থাকা বা ভিটামিন D সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, ডিম, চিজ, দুধ
পনীর, ব্রকলি, ঢেঁড়স, বাঁধাকপি, লাউ শাক, ডাল, শুটকি, ছোট মাছ, সয়াবিন
ইত্যাদি খাওয়া উচিত। এসব খাবার গর্ভের শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনে ভূমিকা রাখে।
গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন, এবং
গর্ভাবস্থার পরবর্তী তিন মাসে ১২০০ মিলিগ্রাম প্রয়োজন হতে পারে। শিশুর সঠিক
হাড় গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৬. পর্যাপ্ত পানি ও তরলঃ পানি গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর
হাইড্রেশন বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেহের প্রাকৃতিক কাজ
যেমন পাচন, সেলুলার কার্যকলাপ, শোষণ এবং বিষাক্ত পদার্থ বের করা নিশ্চিত
করে। গর্ভাবস্থায় দুইজনের জন্য হাইড্রেশন প্রয়োজন, একজন মা এবং তার শিশুর
জন্য। গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন ৮-১২ গ্লাস (২.৫-৩ লিটার) পানি বা তরল
গ্রহণ করা উচিত।
গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে তরলের চাহিদা বাড়ে, কারণ এটি আমনিওটিক ফ্লুইডের
(পানি) পরিমাণ বজায় রাখতে সহায়ক, যা শিশুর জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করে।
গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার খাওয়া মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্য
বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাইড্রেশন ভালভাবে বজায় রাখতে পানি,
ফলের জুস, স্যুপ, এবং প্রাকৃতিক তরল খাবার খাওয়া উচিত। এটি আপনার শারীরিক
শক্তি এবং শিশুর বিকাশে সহায়ক হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কোন ফল ও সবজি খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় কোন ফল ও সবজি খাওয়া যাবে না, তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বাড়ে, এবং এজন্য সঠিক খাবারের নির্বাচন
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ফল এবং সবজি গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য নিরাপদ
নাও হতে পারে, কারণ সেগুলিতে কিছু ক্ষতিকর উপাদান থাকতে পারে বা তারা
কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, পেটের সমস্যা বা সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভাবস্থায়
কোন ফল ও সবজি খাওয়া উচিত নয় তা আলোচনা করা হলো।
১. পেঁপেঃ বিশেষ করে অপরিপক্ব ( কাঁচা) পেঁপে গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর
হতে পারে। এতে পেপাইন নামক একটি এনজাইম থাকে, যা গর্ভপাত ঘটাতে পারে।
অপরিপক্ব পেঁপে গর্ভাবস্থায় মায়ের পেটে সঙ্কুচিততা সৃষ্টি করতে পারে।
পরিপক্ব পাঁপয়া সাধারণত নিরাপদ, তবে এর পরিমাণ সীমিত রাখা উচিত। তবে
পরিপক্ব পেঁপে মায়েদের জন্য ক্যালসিয়াম, ভিটামিন C, এবং ফোলেটের ভালো উৎস
হতে পারে, তবে এটি সঠিকভাবে পাকা অবস্থায় খাওয়া উচিত।
২. লিচুঃ লিচু অতিরিক্ত খাওয়া গর্ভাবস্থায় কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা
সৃষ্টি করতে পারে বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় হাইপোগ্লাইসেমিয়া (গ্লুকোজের কম
পরিমাণ) হতে পারে, যা মা বা শিশুর জন্য বিপজ্জনক। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে
যে, কাঁচা বা অপরিপক্ক লিচু গর্ভাবস্থায় সাময়িকভাবে বিপদ সৃষ্টি করতে
পারে। লিচু অবশ্যই পরিপক্ক অবস্থায় এবং সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
৩. অ্যাপলঃ সাধারণত অ্যাপল গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য নিরাপদ, তবে
যদি এতে পেস্টিসাইড থাকে, তা গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
পেস্টিসাইডের উপস্থিতি ভ্রূণ বা মায়ের শরীরের জন্য খারাপ হতে পারে। তবে
অ্যাপল খাওয়ার আগে সঠিকভাবে ধুয়ে নিতে হবে এবং সম্ভব হলে জৈব পদ্ধতিতে
উৎপাদিত অ্যাপল খাওয়াই উত্তম।
গর্ভাবস্থায় খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এমন কিছু সবজি
১. কাঁচা শাকঃ কাঁচা শাক (যেমন, পালং শাক, মেথি শাক)
গর্ভাবস্থায় বিশেষভাবে বিপজ্জনক হতে পারে কারণ এতে লিস্টেরিয়া নামক
ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। লিস্টেরিয়া গর্ভাবস্থায় গর্ভপাত, ভ্রূণের ক্ষতি
বা নবজাতক শিশুর সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। কাঁচা শাক বা অপরিপক্ক শাকের
পাতায় রোগজীবাণু থাকতে পারে। তবে শাক ভালোভাবে ধুয়ে, রান্না করে খাওয়া
উচিত।
২. সোয়াবিনঃ সোয়া পণ্য, বিশেষত অতিরিক্ত সোয়া বা সোয়া পণ্য
গর্ভাবস্থায় খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, কারণ এতে
ফাইটোএস্ট্রোজেন থাকে। এটি গর্ভের হরমোনাল ব্যালান্সের ওপর প্রভাব ফেলতে
পারে, যার ফলে গর্ভাবস্থায় হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে। তবে সীমিত
পরিমাণে সোয়া পণ্য (যেমন, টফু বা সোয়া দুধ) খাওয়া যেতে পারে, তবে দীর্ঘ
সময় ধরে বেশি পরিমাণে সোয়া খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
৩. ব্রাসেল স্প্রাউটঃ ব্রাসেল স্প্রাউট এবং অন্যান্য
cruciferous vegetables (যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি) গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত
খেলে গ্যাস, পেটের ফোলাভাব এবং হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, কারণ এতে
আঁশ এবং শর্করা থাকে যা হজমের জন্য ভারী হতে পারে। তবে ব্রাসেল স্প্রাউট
রান্না করে খেলে তা নিরাপদ হতে পারে, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত
নয়।
৪. এগপ্লান্টঃ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত শসা ও বেগুন খাওয়াতে
পেটের সমস্যা হতে পারে। বেগুনে সোলানিন নামক পদার্থ থাকে, যা বেশি
পরিমাণে খেলে পেটের সমস্যা বা হজমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। সঠিক পরিমাণে
এবং রান্না করা অবস্থায় বেগুন খাওয়া যেতে পারে।
গর্ভবতী মায়ের জন্য উপকারী ফলের তালিকা
গর্ভবতী মায়ের জন্য উপকারী ফল খাদ্য তালিকায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। ফলে থাকা
ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শিশুর বৃদ্ধি ও মায়ের
সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থের
সুরক্ষার উপর নির্ভর করে গর্ভের সন্তানের সুস্বাস্থ। তবে সব ফল গর্ভাবস্থায়
খাওয়া নিরাপদ নয়। তাই সঠিক ফল গর্ভাবস্থার সময়টায় বেছে নিতে হবে। জেনে নিন
গর্ভবতী মায়েরা কোন ফলগুলো খাবার তালিকায় রাখবে।
১. কলাঃ গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই উপকারী ফল হলো কলা। কলাকে
গর্ভাবস্থার সুপারফুড বলা হয় কারণ এতে প্রচুর পটাশিয়াম, আয়রন, ফাইবার,
ভিটামিন B6 ও ভিটামিন C রয়েছে। যা খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মা ও শিশুকে সুস্থ
রাখতে সাহায্য করে। এটি শক্তি বাড়ায়, হজম ভালো রাখে এবং গর্ভকালীন নানা
সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ১-২টি কলা খেলে শক্তি
বাড়ে, হজম ভালো থাকে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে ও শিশুর ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট
ভালো হয়। তবে, অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে। তাই পরিমাণমতো খাওয়া উচিত।
২. কমলাঃ গর্ভবস্থায় ভিটামিন সি’ আছে এমন ফলগুলো খাওয়া জরুরি।
আর কমলা ভিটামিস সি এর ভালো উৎস। কমলা ভিটামিন C, ফলিক অ্যাসিড, ফাইবার ও
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ একটি অত্যন্ত উপকারী ফল। কমলা শিশুর
স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সহায়তা করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং
পানিশূন্যতা দূর করে। কমলায় প্রায় ৮০-৯০% পানি থাকে, যা গর্ভাবস্থায় শরীরকে
হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতা (Dehydration) হলে
মাথা ঘোরা, দুর্বলতা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন
দুপুরের খাবারের পর বা বিকেলে ১-২টি কমলা খেতে পারেন।
৩. আপেলঃ গর্ভাবস্থায় আপেল একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও উপকারী ফল,
যা ভিটামিন C, ফাইবার, আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, যা
গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ সুরক্ষায় প্রয়োজনীয়। এটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়,
শিশুর ফুসফুসের বিকাশে সাহায্য করে এবং হজম ভালো রাখে। আপেলে ভিটামিন A, B,
C ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সহায়ক।
প্রতিদিন ১টি আপেল খেলে শিশুর ব্রেইন ও ফুসফুসের গঠনে সহায়তা হয়। তাই
গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকায় আপেল রাখবেন। সকালের নাস্তায় বা বিকেলে ১টি আপেল খাওয়া ভালো।
৪. বেদানাঃ বেদানা আয়রন, ভিটামিন C, ফলিক অ্যাসিড, ফাইবার,
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর ফল। এটি শিশুর সঠিক
বিকাশ নিশ্চিত করে, রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়,
হজমশক্তি উন্নত করে ও গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
বেদানায় ফলিক অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শিশুর মস্তিষ্কের গঠন
ও বিকাশে সহায়ক। এটি নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধে সাহায্য করে। প্রতিদিন
১/২ কাপ বেদানা খেলে আয়রনের অভাব দূর হবে।
৫. আঙুরঃ আঙুর একটি পুষ্টিকর ফল যা ভিটামিন C, ক্যালসিয়াম,
পটাশিয়াম, আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। এটি গর্ভবতী মায়ের
জন্য অত্যন্ত উপকারী, কারণ এটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে,
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমশক্তি ভালো রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
এবং শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। আঙুরে ভিটামিন C থাকায়
এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এটি ঠান্ডা,
সর্দি-কাশি ও ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়ক। প্রতিদিন ১/২ কাপ আঙুর খাওয়া নিরাপদ
ও উপকারী।
৬. খেজুরঃ খেজুর প্রাকৃতিক চিনি, ফাইবার, আয়রন, পটাশিয়াম,
ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন B এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি
সুপারফুড। এটি গর্ভবতী মায়ের শক্তি বৃদ্ধি, রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ,
হজমশক্তি উন্নত, গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর এবং প্রসব প্রক্রিয়াকে সহজ
করতে সহায়তা করে। খেজুরে উচ্চমাত্রার আয়রন থাকে, যা গর্ভাবস্থায়
রক্তস্বল্পতা (Anemia) প্রতিরোধ করে। এটি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে,
ফলে শিশুর পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত হয়। প্রতিদিন ২-৩টি খেজুর খেলে
আয়রনের ঘাটতি পূরণ হবে।
৭. কিউইঃ কিউই ভিটামিন C, ফলিক অ্যাসিড, ফাইবার, আয়রন,
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ একটি সুপারফুড। এটি শিশুর
স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজম ভালো
রাখে ও আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। এই ফল গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকায় রাখা
উপকারী। এটি শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের গঠন উন্নত করে এবং নিউরাল টিউব
ডিফেক্ট প্রতিরোধে সাহায্য করে। দুপুরের খাবারের পর বা স্ন্যাকস হিসেবে কিউই খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা
ঠিক থাকবে।
৮. অ্যাভোকাডোঃ অ্যাভোকাডো গর্ভবতী মায়ের জন্য একটি সুপারফুড,
যা ফলিক অ্যাসিড, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ফাইবার, ভিটামিন C, K, E, B6 এবং
পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। এ ফলের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো গর্ভবতী মায়ের
বিভিন্ন পুষ্টির চাহিদা পূরন করতে সহায়তা করে থাকে। এটি শিশুর মস্তিষ্কের
বিকাশে সাহায্য করে, গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, আয়রনের ঘাটতি পূরণ
করে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। সকালে নাস্তায় বা দুপুরের খাবারের সাথে হাফ
বা ১টি অ্যাভোকাডো খান। নাস্তার সাথে বা স্যান্ডউইচ, স্মুদি হিসেবে খেতে পারেন।
৯. পেয়ারাঃ গর্ভাবস্থায় যে ফলগুলো খাওয়া প্রয়োজন সেগুলোর মধ্যে
পেয়ার অন্যতম। পেয়ারা একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফল, যা ভিটামিন C, ফাইবার,
ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, আয়রন, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি গর্ভবতী
মায়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী, কারণ এটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমশক্তি
ভালো রাখে, শিশুর বিকাশে সাহায্য করে, এবং গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
সহায়তা করে, এবং গর্ভকালীন সময়ের সাধারণ ঠান্ডা, সর্দি বা ফ্লু থেকে রক্ষা
করে। এটি দেহে আয়রনের শোষণ বাড়ায়, ফলে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক। সকাল
বা দুপুরে পেয়ারা খেলে ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হবে।
গর্ভবতী মায়ের জন্য ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম
গর্ভবতী মায়ের জন্য ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায়
রেখে অনুসরণ করা উচিত। গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই
গুরুত্বপূর্ণ, আর ফল হলো প্রাকৃতিক পুষ্টির এক চমৎকার উৎস। ফল খেলে শরীরে
ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রাকৃতিক চিনি
(ফ্রুক্টোজ) পাওয়া যায়, যা মায়ের স্বাস্থ্য ও শিশুর বিকাশের জন্য অত্যন্ত
উপকারী। তবে, সঠিক নিয়ম মেনে ফল খাওয়া দরকার, নিচে কিছু পরামর্শ দেয়া হলো।
১. প্রতিদিন ২-৩ ধরনের ফল খানঃ প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ফল খেলে
শরীর প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি পায়। উদাহরণস্বরূপ, সকালে কলা, দুপুরে কমলা,
সন্ধ্যায় পেয়ারা খেতে পারেন। একই ফল প্রতিদিন খাওয়া এড়িয়ে চলুন একদিন কলা,
আপেল, কমলা খেলে, পরের দিন পেয়ারা, আঙুর, খেজুর খেতে পারেন। বিভিন্ন ফল
খেলে পুষ্টির ভারসাম্য বজায় থাকবে পুষ্টি সমৃদ্ধ হবে এবং খেতে বিরক্ত লাগবে
না।
২. প্রাকৃতিক এবং তাজা ফল খানঃ প্রাকৃতিক এবং তাজা ফল গর্ভবতী
মায়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী, কারণ এগুলি ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার, এবং
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা মা ও শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি প্রদান
করে। প্রাকৃতিক ফলগুলি সাধারণত পুষ্টির দিক থেকে অধিক সমৃদ্ধ থাকে। এই
ফলগুলিতে ভিটামিন (যেমন ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬), খনিজ (যেমন
ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম), এবং প্রাকৃতিক সায়ানিন ও ফাইটোকেমিক্যাল্সের মতো
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা মায়ের শরীর এবং শিশুর বিকাশের জন্য খুবই
উপকারী।
৩. ফল খাওয়ার পরিমাণঃ গর্ভবতী মায়ের জন্য ফল খাওয়ার পরিমাণ
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ফল খেলে পেটে অস্বস্তি বা গ্যাসের সমস্যা হতে
পারে। সাধারণত ২-৩ পিস ফল প্রতিদিন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, তবে এটি আপনার
শরীরের প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। যদি মা বেশি
শারীরিক পরিশ্রম করেন বা বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়, তাহলে ফলের পরিমাণ বাড়ানো
যেতে পারে। পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে উপযুক্ত পরিমাণ নির্ধারণ করা যেতে
পারে।
৪. ফল কেটে রেখে দেবেন নাঃ কেটে রাখা ফল সাধারণত তাজা থাকেনা এবং দ্রুত পচে যায়, যা গর্ভবতী
মায়ের জন্য কিছু সমস্যা তৈরি করতে পারে। ফল কেটে রাখলে তার ভিতরে ব্যাকটেরিয়া এবং মাইক্রোবসের বৃদ্ধি হতে পারে।
কাটা ফল পরিবেশের সাথে সরাসরি যোগাযোগে আসে, যা বিভিন্ন ধরনের
অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং তা গর্ভবতী মায়ের জন্য
ক্ষতিকর হতে পারে। এছাড়া কাটা ফল তাজা না থাকলে খাবারে বিষাক্ততা তৈরি
হতে পারে। অনেকক্ষণ আগে ফল কেটে রাখলে ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। ফল কাটার পর ১৫-২০
মিনিটের মধ্যে খেয়ে ফেলুন। তাজা ফল খেলে পুষ্টি অক্ষুণ্ণ থাকে।
৫. সিজনাল ফল খানঃ সিজনাল ফল খাওয়া
গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই উপকারী, কারণ এই ফলগুলো তাজা, পুষ্টিকর এবং
সাধারণত রাসায়নিক বা কৃত্রিম উপাদান কম থাকে। মৌসুমি ফলগুলি গর্ভাবস্থায়
মায়ের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং শক্তি সরবরাহ করতে সহায়ক। সিজনাল ফলগুলো
সাধারণত পাকা অবস্থায় পাওয়া যায় এবং এগুলি বেশি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
সিজনাল ফলগুলোর মধ্যে পাকা এবং ভালো মানের ফল খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি
থাকে। যেমন: গরমের সময়ে: আম, তরমুজ, আনারস, পেঁপে ইত্যাদি। শীতের সময়ে:
কমলা, আপেল, কমলালেবু, আঙুর ইত্যাদি।
৬. খাবারের সময়ঃ ফল খাওয়ার জন্য সেরা সময় হলো খাবারের আগে বা
পরে। তবে, খুব বেশি খাবারের সাথে ফল খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি হজমে সমস্যা
সৃষ্টি করতে পারে এবং পেটের গ্যাস বৃদ্ধি করতে পারে। ফাঁকা পেটে ফল খাওয়ার
পরিমাণ সামান্য রাখা ভাল। কিছু ফল (যেমন আম) বেশি খাওয়ার ফলে গ্যাসের
সমস্যা হতে পারে, তাই পরিমাণটা সামাল দিয়ে খাওয়া উচিত।
৭. ফল খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পানি পান করাঃ ফল খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পানি পান করা গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণফল খাওয়ার পর পরিমাণমতো পানি
পান করুন। তবে খুব বেশি পানি একসাথে পান না করার চেষ্টা করুন। এটি হজমে
সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পানের গুরুত্ব
গর্ভাবস্থায় অনেক বেশি, কারণ পানি পান করলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে, যা
গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই উপকারী। তবে, কিছু ভুল ধারণাও রয়েছে যে, ফল খাওয়ার
পর সরাসরি পানি খাওয়া উচিত, কিন্তু এর কিছু প্রভাব হতে পারে।
৮. অত্যধিক মিষ্টি ও টক ফল এড়িয়ে চলাঃ গর্ভবতী মায়ের জন্য খুব
বেশি মিষ্টি বা টক ফল খাওয়া ভালো নয়। এসব ফল অতিরিক্ত চিনির পরিমাণ বা
এসিডিক হতে পারে, যা গ্যাস বা হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে
অতিরিক্ত পাকা আম, মিষ্টি আনারস, বা টক ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
লেবু, কমলা, আনারস, বেদানা, কিউই ইত্যাদি খালি পেটে খেলে অ্যাসিডিটি বা
গ্যাস্ট্রিক হতে পারে। সকালে খেতে চাইলে খাওয়ার পর একটু দুধ বা খেজুর খেলে
ভালো হবে। সকালে হালকা মিষ্টি ফল (কলা, আপেল, পেঁপে) বেশি ভালো।
৯. কাঁচা ফল এড়িয়ে চলাঃ গর্ভাবস্থায় কাঁচা ফল খাওয়া এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কিছু কাঁচা বা
অপরিপক্ক ফলের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকতে পারে যা গর্ভবতী মায়ের এবং তার
শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গর্ভাবস্থায় কাঁচা বা অপরিপক্ক ফল খেলে হজমে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে এবং
কিছু ফলের মধ্যে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। ফলে সেগুলি ভালোভাবে
পাকিয়ে খাওয়া উচিত।
১০. অ্যালার্জির বিষয় সতর্কতাঃ গর্ভবতী মায়ের জন্য অ্যালার্জি
বিষয়ে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ গর্ভাবস্থায় শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা
কিছুটা পরিবর্তিত হয় এবং খাবারের প্রতি প্রতিক্রিয়া বদলাতে পারে। গর্ভবতী
অবস্থায় কিছু মায়ের ফলের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে, যেমন স্ট্রবেরি,
পীচ, আঙুর, বা কিছু ধরনের সাইট্রাস ফল। যদি আপনার কোন ফলের প্রতি
অ্যালার্জি থাকে, তাহলে তা খাওয়ার পরামর্শ নেয়া উচিত নয়।
১১. পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শঃ গর্ভাবস্থায় পুষ্টির
প্রয়োজনীয়তা অনেক পরিবর্তিত হতে পারে, তাই ফল খাওয়ার পূর্বে একজন পুষ্টিবিদ
বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ফলের ধরন এবং
পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে। এভাবে গর্ভবতী মায়ের ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম অনুসরণ
করলে তার শরীর এবং শিশুর উন্নতির জন্য সহায়ক হতে পারে।
গর্ভবতী মায়ের জন্য ফল খাওয়ার সঠিক সময়
গর্ভবতী মায়ের জন্য ফল খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন।
গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে ভিটামিন, মিনারেল,
ফাইবার, এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে যা মা ও শিশুর জন্য উপকারী। তবে,
ফল খাওয়ার সঠিক সময় নির্বাচন করলে এর পুষ্টিগুণ আরো ভালোভাবে শোষিত হয় এবং
কোনো ধরনের সমস্যা এড়িয়ে চলা যায়। তাহলে চলুন গর্ভবতী মায়ের জন্য ফল খাওয়ার
সঠিক সময় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
১. খালি পেটে ফল খাবেন নাঃ অনেকে সকালে খালি পেটে ফল খাওয়ার অভ্যাস
করেন, তবে গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। খালি পেটে ফল
খেলে অ্যাসিডিটি, হজমের সমস্যা, রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত ওঠানামা এবং
গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। গর্ভবতী মায়েদের হরমোনের পরিবর্তনের কারণে
এমনিতেই অ্যাসিডিটি বেশি হয়, তাই খালি পেটে ফল না খাওয়াই ভালো। খাবারের
৩০-৬০ মিনিট পর ফল খাওয়া সবচেয়ে ভালো।
২. সকালে নাশতার পরঃ সকালে নাশতার পর ফল খাওয়া সবচেয়ে উপকারী, কারণ
এ সময় শরীরের পুষ্টি শোষণ ক্ষমতা বেশি থাকে এবং হজম ভালো হয়। সকালেই বেশি
ক্যালোরি দরকার হয়, ফল খেলে তা সহজেই পূরণ হয়। সকালে বিপাকক্রিয়া
(metabolism) বেশি সক্রিয় থাকে, ফলে ফল সহজে হজম হয়। অনেক গর্ভবতী মায়ের
সকালে বমিভাব হয়, ফল খেলে তা কমে। আয়রন ও ভিটামিন C সমৃদ্ধ ফল (বেদানা,
কমলা) সকালে খেলে আয়রন শোষণ ভালো হয়। নাশতার ৩০-৬০ মিনিট পর ফল খান।
৩. দুপুরের খাবারের পরঃ দুপুরের খাবারের পর ফল খাওয়ার সময়টা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণে সাহায্য করে এবং হজমের
জন্য ভালো। দুপুরের খাবারের পর, শরীর হজমে ব্যস্ত থাকে, তাই ফল খাওয়ার জন্য
এই সময়টা আদর্শ। খাবার ও ফলের মধ্যে ১-২ ঘণ্টা গ্যাপ রেখে ফল খাওয়ার
মাধ্যমে হজমের প্রক্রিয়া অটুট থাকে। দুপুরের খাবার খাওয়ার পর ফল শরীরে
ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার ও প্রাকৃতিক চিনির চাহিদা পূরণ করে। ফলে শক্তির
অভাব অনুভূত হয় না এবং গর্ভবতী মা এবং শিশুর জন্য উপকারী।
৪.বিকেলে হালকা নাশতার সময়ঃ গর্ভবতী মায়ের জন্য বিকেলে হালকা নাশতার
সময় ফল খাওয়া একটি দারুণ উপায়, যা শক্তি এবং পুষ্টি সরবরাহ করে। বিকেলে
আমাদের শরীরের শক্তির প্রয়োজন অনুভূত হয়, এবং এই সময় ফল খেলে তা দ্রুত
পূর্ণ হয়, এছাড়া শরীরের পুষ্টির চাহিদাও পূর্ণ হয়। বিকেল বেলা আমাদের শরীর
খানিকটা ক্লান্ত হতে শুরু করে, তাই একটি হালকা ফল শক্তি এবং সতেজতা প্রদান
করতে সহায়ক হতে পারে। ফলের প্রাকৃতিক চিনি এবং ভিটামিন তৎক্ষণাৎ শক্তির উৎস
হিসেবে কাজ করে। বেশ কিছু ফলের মধ্যে ফাইবার থাকে, যা হজমে সহায়ক এবং
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে, যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই
গুরুত্বপূর্ণ।
৫. রাতের খাবারের পরে ফল খাবেন নাঃ গর্ভবতী মায়েদের রাতের খাবারের
পরে ফল খাওয়া সাধারণত পরামর্শযোগ্য নয়, কারণ এটি হজমের সমস্যা,
গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি ও ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। রাতে বিপাক হার
(metabolism) ধীর হয়ে যায়, ফলে ফলের চিনি (fructose) সহজে হজম হয় না এবং
গ্যাস, ফাঁপা ভাব বা কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করতে পারে। ফলের প্রাকৃতিক চিনি
(fructose) রাতের দিকে শরীরে সঠিকভাবে ভাঙতে সময় নেয়, যা গর্ভকালীন
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৬. রাতে অল্প পরিমাণেঃ রাতের খাবারের পর ফল খাওয়ার ব্যাপারে কিছু
সতর্কতা আছে, তবে কম পরিমাণে ও হালকা ফল খাওয়া যেতে পারে। রাতের বেলায়
আমাদের বিপাকক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। অতিরিক্ত ফল খেলে খাবারের সাথে তা মিশে না
গিয়ে গ্যাস, অ্যাসিডিটি বা কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে। তবে, অল্প
পরিমাণে ফল খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। কিছু ফল যেমন কিউই, পেয়ারা, এবং
ডাবের শাঁস শরীরকে শান্ত করে এবং ঘুমে সহায়তা করে। এরা হালকা এবং সুষম
পুষ্টি সরবরাহ করে।রাতে বেশি মিষ্টি বা টক ফল খাওয়ার কারণে রক্তে শর্করার
পরিমাণ বাড়তে পারে, যা সুস্থ ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। সুতরাং, অল্প
পরিমাণে ফল খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া মায়ের এবং গর্ভস্থ শিশুর জন্য
গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় মায়েরা যদি সঠিক ভাবে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না
পায় তাহলে ক্যালসিয়ামের অভাবে গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে
পারে। এটি শিশুর হাড়, দাঁত, হৃদযন্ত্র, পেশী ও স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশে
সাহায্য করে। এছাড়া, এটি মায়ের হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করে, বিশেষ করে যদি
মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকে। জেনে নিন ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার
সঠিক নিয়ম।
সাধারণত, গর্ভবতী মায়েদের জন্য দৈনিক ১,০০০-১,২০০ mg ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
যদি খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না পান, তাহলে ডাক্তার ৫০০-৬০০ mg
ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট গ্রহণের পরামর্শ দিতে পারেন। শরীর একবারে ৫০০-৬০০
mg-এর বেশি ক্যালসিয়াম শোষণ করতে পারে না। তাই যদি দৈনিক ১,০০০ mg প্রয়োজন
হয়, তাহলে দুই ভাগে ভাগ করে সকাল ও রাতে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট গ্রহণ করতে পারেন।
ক্যালসিয়াম ভালোভাবে শোষিত হয় খাবারের পর বা খাবারের সঙ্গে খেলে। বিশেষ করে
ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ট্যাবলেট খাবারের সঙ্গে খাওয়া উচিত। ক্যালসিয়াম ও
আয়রন একসঙ্গে নিলে শরীর কোনোটাই ঠিকমতো শোষণ করতে পারে না। তাই আয়রন ও
ক্যালসিয়াম ২-৩ ঘণ্টার ব্যবধানে খেতে হবে। ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়ামের
শোষণ বাড়ায়। তাই সূর্যের আলোতে ১৫-২০ মিনিট থাকুন এবং প্রয়োজনে ভিটামিন ডি
সাপ্লিমেন্ট নিন।
বেশি চা, কফি বা সোডা পান করলে ক্যালসিয়ামের শোষণ কমে যেতে পারে।
উচ্চমাত্রার ফাইবারযুক্ত খাবারের (যেমন গমের ভূষি) সঙ্গে ক্যালসিয়াম খেলে
তা শোষণে বাধা দেয়। যদি সম্ভব হয়, খাবার থেকেই ক্যালসিয়াম গ্রহণ করাই
সবচেয়ে ভালো। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ কিছু খাবার হলোঃ দুধ, দই, পনির, ছোট মাছ,
শাকসবজি-যেমন পালং শাক, কলমি শাক,বাদাম, ডাল ও সোয়াবিন অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম
(২,৫০০ mg-এর বেশি) খাওয়া কিডনিতে পাথর ও অন্যান্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় যেসব ভিটামিন ও খনিজ দরকার
গর্ভাবস্থায় একজন মা ও তার গর্ভস্থ শিশুর জন্য পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ভিটামিন ও খনিজ গ্রহণ করলে গর্ভস্থ শিশুর স্বাভাবিক
শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে সহায়তা পাওয়া যায়, পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় নানা
স্বাস্থ্য জটিলতা প্রতিরোধ করা যায়। এখানে গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় ভিটামিন
এবং খনিজের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো, তাদের ভূমিকা, প্রস্তাবিত দৈনিক
পরিমাণ এবং খাবারের উৎসসহ।
১. ফোলিক অ্যাসিডঃ ফোলিক অ্যাসিড গর্ভাবস্থায় নিউরাল টিউব ডিফেক্ট
(যেমন, স্পাইনাল ডিসর্ডার বা স্পাইনাল বিটিডা) প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
এটি গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের এবং মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশে সাহায্য করে।
এ ছাড়াও এটি রক্ত উৎপাদনে সহায়তা করে এবং মায়ের সেল ডিভিশনকে স্বাভাবিক
রাখে। গর্ভাবস্থায় দৈনিক ৪০০-৮০০ মাইক্রোগ্রাম (µg) ফোলিক অ্যাসিড
প্রস্তাবিত। পালং শাক, ব্রকলি, সাইট্রাস ফল (কমলা, লেবু), মটর, ছোলা,
বাদাম, ওটস, অর্গানিক সিরিয়াল, রুটি, এবং ফলমূল (যেমন, কলা, আপেল, আনারস)।
২. ভিটামিন ডিঃ ভিটামিন D ক্যালসিয়ামের শোষণ এবং হাড়ের গঠনকে সহায়তা
করে, যা গর্ভাবস্থায় শিশুর হাড় এবং দাঁতের সুস্থ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ। এটি
মায়ের হাড়ের শক্তি বজায় রাখে এবং শিশু ও মায়ের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী
করে। দৈনিক গর্ভাবস্থায় ৬০০ IU (International Units) ভিটামিন D
প্রয়োজন।সূর্যের আলো (প্রাকৃতিক উৎস), মাখন, ডিম, স্যামন, মাকেরেল, তেল,
ভিটামিন D সমৃদ্ধ দুধ এবং সেরিয়াল।
৩. ভিটামিন-সিঃ ভিটামিন C একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে
কাজ করে, যা শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষিত রাখে এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী
করে। এটি গর্ভস্থ শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিকাশে সহায়ক এবং গর্ভাবস্থায়
মা'র ত্বক এবং আঙ্গুলের সুরক্ষাও নিশ্চিত করে। গর্ভাবস্থায় দৈনিক ৮৫
মিলিগ্রাম ভিটামিন C প্রয়োজন। কমলা, স্ট্রবেরি, লেবু, টমেটো, ক্যাপসিকাম
(বেল মরিচ), ব্রকলি, কিউই, আমলা ভিটামিন C এর ভালো উৎস।
৪. ভিটামিন-এঃ ভিটামিন A গর্ভাবস্থায় গর্ভস্থ শিশুর চোখের এবং ইমিউন
সিস্টেমের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষিত রাখে এবং
ভ্রূণের স্নায়ু, ত্বক ও অন্যান্য অঙ্গের গঠন করতে সহায়তা করে।প্রস্তাবিত
দৈনিক পরিমাণ গর্ভাবস্থায় ৭৩০ µg ভিটামিন A প্রয়োজন। উৎস- গাজর, মিষ্টি
আলু, পালং শাক, কুমড়া, ডিম, দুধ, পেঁপে, আনারস।
৫. ভিটামিন বি-১২ঃ ভিটামিন বি-১২ গর্ভাবস্থায় কোষ বিভাজন এবং রক্ত
তৈরিতে সহায়তা করে। এটি নিউরাল সিস্টেমের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ এবং গর্ভস্থ
শিশুর জন্য অপরিহার্য। গর্ভাবস্থায় দৈনিক ২.৬ µg ভিটামিন B12 প্রয়োজন।
উৎস-মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, দুধজাত পণ্য, টোফু, সয়া দুধ।
৬. আয়রনঃ গর্ভাবস্থায় শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে
আয়রনের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। আয়রন রক্ত তৈরিতে সহায়ক, এবং এনিমিয়া
(রক্তস্বল্পতা) প্রতিরোধে সাহায্য করে। দৈনিক পরিমাণ গর্ভাবস্থায় ২৭
মিলিগ্রাম আয়রন প্রস্তাবিত।লাল মাংস, মসুর ডাল, পালং শাক, শুকনো ফল (খেজুর,
কিসমিস), ওটস, বাদাম, ডিম, টোফু, শস্য আয়রনের ভালো উৎস।
৭. ক্যালসিয়ামঃ ক্যালসিয়াম গর্ভস্থ শিশুর হাড় এবং দাঁতের গঠন এবং
বিকাশে সাহায্য করে। এটি মায়ের হাড়ের শক্তি বজায় রাখে এবং রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। দৈনিক গর্ভাবস্থায় ১,০০০-১,৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
প্রস্তাবিত। উৎস-দুধ, পনির, দই, শাকসবজি (যেমন, পালং শাক, ব্রকলি), বাদাম,
সয়া পণ্য, সাদা বীজ।
৮. জিঙ্কঃ জিঙ্ক গর্ভাবস্থায় কোষের বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং ইমিউন
সিস্টেম সুস্থ রাখে। এটি গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ু, ত্বক এবং কোষের সঠিক বিকাশে
সহায়ক। দৈনিক গর্ভাবস্থায় ১১ মিলিগ্রাম জিঙ্ক প্রস্তাবিত। উৎস-মাংস, শামুক,
মটর, বাদাম, শস্য, টোফু, শাকসবজি।
৯. ম্যাগনেসিয়ামঃ ম্যাগনেসিয়াম গর্ভাবস্থায় পেশী এবং স্নায়ু
কার্যকলাপ বজায় রাখে এবং হার্টের সুস্থতা নিশ্চিত করে। এটি গর্ভাবস্থায়
পায়ের পেশী শক্ত হওয়া (ক্র্যাম্প) এবং অন্যান্য অস্বস্তি কমাতে সহায়ক।
দৈনিকগর্ভাবস্থায় ৩ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম প্রস্তাবিত। বাদাম, সবুজ
শাকসবজি, মটর, ভুট্টা, কলা, সয়া পণ্য ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।
১০. পটাসিয়ামঃ পটাসিয়াম শরীরের তরলের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য
করে, এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি স্নায়ু এবং পেশীর কার্যকলাপের
জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। দৈনিক গর্ভাবস্থায় ২,৯০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম
প্রস্তাবিত। উৎস-কলা, টমেটো, আলু, সবুজ শাকসবজি, আপেল, কমলা, মিষ্টি আলু।
১১. কোলিনঃ কোলিন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা ভিটামিন
B-কমপ্লেক্সের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ,
স্মৃতিশক্তির উন্নয়ন এবং নার্ভ ফাংশন সঠিকভাবে কাজ করার জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। আপনার গর্ভের ভ্রুণের মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড বিকাশে প্রয়োজনীয়
পুষ্টি উপাদান কোলিন। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন আপনাকে এটা ৪৫০ মিলিগ্রাম করে
গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য দুধ, ডিম, বাদাম ও সয়া পণ্য খাদ্য তালিকায় রাখতে
হবে।
১২. আয়োডিনঃ আয়োডিন (Iodine) একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা থাইরয়েড
হরমোনের উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য। এটি গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্ক,
স্নায়ুতন্ত্র এবং শারীরিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনার সন্তানের
মস্তিষ্কের যথাযথ বিকাশের জন্য প্রতিদিন ২২০ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন প্রয়োজন।
আয়োডিনযুক্ত লবণ, সামুদ্রিক মাছ, ডেইরি পণ্য ও ডিম খেলে সহজেই প্রয়োজনীয়
আয়োডিন পাওয়া যায়।
শেষকথাঃ গর্ভবতী মা-দের নিষিদ্ধ খাবারের তালিকা
গর্ভবতী মা-দের নিষিদ্ধ খাবারের তালিকা সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য
তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। নিয়মিত পর্যাপ্ত খাবার খাওয়া প্রত্যেক মানুষের
জন্য খুব দরকারি এবং গর্ভাবস্থায় এটা আরও বেশি প্রয়োজনীয় বটে। এই সময়
খাবারের মঝে যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি, ভিটামিন থাকতে হবে যা থেকে গর্ভের
সন্তান পর্যাপ্ত পুষ্টি, মিনারেল এবং ভিটামিন পেয়ে থাকে। তাই অনেক সময় আমরা
না বুঝে অনেক ধরনের খাবার খেয়ে ফেলি যা গর্ভের সন্তান এবং মা উভয়ের জন্য ই
ক্ষতির কারন হয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থায় একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি মা এবং অনাগত
শিশু উভয়কেই প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করে। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীর
কেবল নিজের জন্য নয়, বরং একটি নতুন জীবনের জন্যও পুষ্টি সরবরাহ করে। এ
সময় সঠিক ভিটামিন, পরিপূরক, এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
পুষ্টির অভাব শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং মায়ের
স্বাস্থ্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। আশা করি গর্ভবতী মা-দের নিষিদ্ধ
খাবারের তালিকা সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url