এক নজরে মেট্রোরেল সম্পর্কে কিছু তথ্য
মেট্রোরেল একটি দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা যা মূলত শহুরে এলাকায় যাত্রী
পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত উড়ালপথে, ভূগর্ভস্থ বা উভয় ধরণের
ট্র্যাকে চলে। মেট্রোরেল সাধারণত বিদ্যুৎচালিত এবং স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ
ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এটি দ্রুতগতির এবং অন্যান্য যানবাহনের
তুলনায় কম কার্বন নির্গমন করে, যা পরিবেশবান্ধব। মেট্রোরেলের টিকিট কাটার
নিয়ম এবং ভ্রমন সম্পর্কে জানার আগে দেখা নেওয়া যাক এর সম্পর্কে কিছু তথ্য।
- ২০১৩ সালে ঢাকা মহানগরীর দুঃসহ যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকায়
মেট্রোরেল স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। এই দুরবস্থা কাটাতে মেট্রোরেলের
জন্য প্রথম সুপারিশ করেন বিশ্বব্যাংক।
-
বাংলাদেশী ও বিদেশী নানা বিশেষজ্ঞের পরামর্শে জাইকা ২০১৬ সালে এর
বিস্তারিত ডিজাইন প্রস্তুত করেন।
-
ঢাকা মেট্রোরেলের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে ঢাকা ম্যাস ট্রানসিট
কোম্পানি লিমিটেড (Dhaka Mass Transit Company Limited – DMTCL)।
-
২০১৬ সালে মেট্রোরেলের লাইনের সংখ্যা ৩টি থেকে বাড়িয়ে ৫টি করা হয়।
বর্তমানে একটি লাইন চালু হলেও সমগ্র ঢাকা জুড়ে মোট ৬টি লাইন চালু করার
পরিকল্পনা রয়েছে।
-
প্রাথমিক পর্যায়ে নির্মাণের জন্য উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১
কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন ৬-কে নির্বাচন করা হয়।
-
২০১৬ সালের ২৬ জুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এমআরটি লাইন-৬ এর
নির্মাণকাজ শুরু হয়। যা বাংলাদেশের বড় প্রজেক্টগুলির মধ্যে ঢাকা
মেট্রোরেল একটি।
-
বাঙালি জাতির স্বপ্নের মেট্রোরেল ২০২৩ সালের ২৮ শে ডিসেম্বর সাবেক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমআরটি লাইন-৬ উত্তরা থেকে আগারগাও পর্যন্ত
প্রথমবারের মত বাংলাদেশে মেট্রোরেল চালু করেন।
-
এই লাইনটি উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বিস্তৃত। পরে মতিঝিল থেকে আরও একটি অতিরিক্ত লাইন কমলাপুর রেলস্টেশনকে মূল লাইনের সাথে যুক্ত করে। এবং
লাইনটির মোট বিস্তৃতি দাড়ায় ২১.১৭ কিলোমিটার।
-
এই লাইনে স্টেশন রয়েছে মোট ১৭টি। নিচের একটি চিত্রের সাহায্যে আপনারা
সহজেই এই স্টেশনগুলোর ধারাবাহিক কার্যক্রম সম্পর্কে ধারনা পাবেন।

মেট্রোরেলের টিকিট কাটার নিয়ম
মেট্রোরেলের টিকিট কাটার নিয়ম সম্পর্কে আর্টিকেলের এই অংশে আমি ধাপে ধাপে
বিস্তারিত বর্ণনা করব। পোস্টের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়লে আপনি নিজে থেকেই
খুব সহজেই মেট্রোরেল স্টেশনে গিয়ে টিকিট ক্রয় করতে পারবেন। মেট্রোরেলের টিকিট
কাটার নিয়ম সাধারণত নির্দিষ্ট শহরের মেট্রো ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। তবে,
সাধারণত মেট্রোরেলের টিকিট কাটার দুটি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে
ধাপ ১ঃ মেট্রোরেল স্টেশনে গমনঃ বর্তমানে আংশিক ভাবে চালু থাকা এমআরটি – ৬ এর মাত্র চারটি স্টেশন এখন
ব্যবহারযোগ্য। সেগুলো হলো উত্তরা উত্তর, উত্তরা মধ্য, পল্লবী এবং আগারগাঁও
যা যথাক্রমে এমআরটি – ৬ এর ১, ২, ৪ ও ৯ নম্বর স্টেশন। মেট্রোরেল প্রথমে
উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে সরাসরি আগারগাঁও স্টেশন অবধি সার্ভিস দিয়ে আসলেও
বর্তমানে উত্তরা মধ্য ও পল্লবী স্টেশন এই কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে। তাই
মেট্রোরেলে উঠতে হলে আপনাকে প্রথমেই চলে যেতে হবে এই চারটি স্টেশনের
একটিতে।
-
উত্তরা উত্তরঃ উত্তরা উত্তর স্টেশনে যেতে উত্তরার হাউজবিল্ডিং থেকে
মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত সরাসরি লেগুনা যায়। এছাড়াও বিআরটিসি বাস থাকে
যাত্রীদের আনা নেওয়ার জন্য।
-
উত্তরা মধ্যঃ উত্তরা মধ্য স্টেশনে পৌছাতে দিয়াবাড়ি ৫ নম্বর ব্রীজ
দিয়ে এগোতে হবে। স্টেশনের স্থানটি বাকারা চত্ত্বর নামেও পরিচিত।
-
পল্লবীঃ পল্লবী স্টেশনের নাম ‘পল্লবী’ হলেও এটি আসলে মিরপুর-১২
স্টেশন হিসেবেই বেশি পরিচিত। এই স্টেশনে যেতে আপনাকে চলে যেতে হবে
মিরপুর-১২ নম্বরের বাসস্ট্যান্ডে।
-
আগারগাঁওঃ আগারগাঁও স্টেশনটি স্বভাবতই আগারগাঁও এ অবস্থিত। আরও
নির্দিষ্ট করে বললে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ঠিক সামনেই আগারগাঁও
স্টেশন।
ধাপ ২ঃ টিকিট ভেন্ডিং মেশিনের লাইনে দাঁড়ানোঃ সিড়ি অথবা চলন্ট সিড়ি
বেয়ে স্টেশন ঢোকার পরেই সাইনবোর্ডের নির্দেশনা দেখতে পাবেন। এছাড়াও ডিজিটাল
ডিসপ্লেতে পরবর্তী ট্রেন কখন কোন স্টেশনে থামবে এবং আপনার স্টেশনে কখন আসবে
তা নিখুঁত ভাবে দেওয়া থাকবে। টিকিট ভেন্ডিং মেশিন থেকে টিকিট ক্রয় করার জন্য
লাইনে দাঁড়াতে হবে।
ধাপ ৩ঃ যাত্রার ধরন নির্ধারণ করাঃ টিকিট ভেন্ডিং মেশিনের স্ক্রিনের
প্রথমেই নিচের চিত্রের ন্যায় দৃশ্য ভেসে উঠবে। স্ক্রিনের সর্ববামে তিনটি অপশন
রয়েছে যেমন- একক যাত্রার টিকিট, টপ-আপ এবং কার্ডের তথ্য।
-
একক যাত্রা টিকিটঃ আপনি যদি মেট্রোরেলে স্বাভাবিক ভাবে একবার ভ্রমণ
করতে চান তাহলে এই অপশনটি নির্ধারণ করুন।
-
টপ-আপঃ আপনার যদি এমআরটি পাস থেকে থাকে এবং কার্ডে টাকা ভরার
প্রয়োজন হয় তাহলে এই অপশনটি নির্ধারণ করুন।
-
কার্ডের তথ্যঃ আপনার কার্ডের তথ্য জানতে হলে এই অপশনটি নির্ধারণ
করুন।
ধাপ ৪ঃ যাত্রার গন্তব্য নির্ধারণঃ সাধারণত যেই স্টেশন থেকে আপনি
যাত্রা করছেন সেই স্টেশনই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘যাত্রার স্টেশন’ হিসেবে নির্ধারিত
হয়ে থাকে। এবার আপনাকে আপনার গন্তব্যের স্টেশনটি নির্ধারণ করতে হবে। প্রতিটি
স্টেশনের একটি নম্বর রয়েছে এবং সেই নম্বরের পাশে স্টেশনের নাম লেখা রয়েছে।
যেমন আমি পল্লবী স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করেছি যা ৪ নম্বর
স্টেশন। গোল বৃত্তের ভেতরে ৪ লেখার পাশে বৃত্তের বাইরে ‘পল্লবী’ লেখা রয়েছে।
ধাপ ৬ঃ টিকিটের মূল্য পরিশোধঃ এবার টিকিটের মূল্য পরিশোধের পালা। ‘ঠিক
আছে’ বাটনে স্পর্শ করার পরেই স্ক্রিনের বাম দিকে আপনার সকল টিকিটের সর্বমোট
মূল্য, প্রবেশকৃত অর্থের পরিমাণ এবং আপনি কতটাকা ফেরত পাবেন তা দেখাবে। আবার
স্ক্রিনের ডান দিকে আপনার টিকিট ক্রয়ের সারাংশ থাকবে। স্ক্রিনের ডানে আপনি
দেখতে পারবেন যাত্রার ধরন, যাত্রার স্টেশন, গন্তব্য, টিকিটের মূল্য, টিকিটের
সংখ্যা এবং সর্বমোট মূল্য।
স্ক্রিনে যদিও লেখা উঠবে যে ১০০০, ৫০০, ২০০ এবং ১০০ টাকার নোট গ্রহণযোগ্য নয়
কিন্তু বস্তুত এ সকল নোট আপনি দিতে পারবেন। তবে ভাংতি টাকা থাকলে ভাংতি
দেওয়াই ভাল। যদি আপনার টিকিট ক্রয়ের প্রক্রিয়ায় কোনো ভুল হয়ে থাকে তবে
‘বাতিল’ বাটনে স্পর্শ করে ক্রয় প্রক্রিয়া বাতিল করতে পারবেন। টাকা প্রবেশ
করানোর স্লটে টিকিটের মূল্যের সমান বা বেশি টাকা প্রবেশ করান। প্রয়োজনীয় অর্থ
প্রবেশ করানোর পরে যদি আপনি কোনো টাকা ফেরত পান তাহলে তা টাকা ফেরত পাওয়ার
স্লটের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিকিট প্রদানের প্রক্রিয়া
শুরু হয়ে যাবে।
ধাপ ৭ঃ টিকিট সংগ্রহ করাঃ টিকিটের মূল্য পরিশোধের পরে টিকিট বিক্রয়
মেশিনের অর্থাৎ ভেন্ডিং মেশিনের স্ক্রিনের ঠিক নিচে অবস্থিত স্লটের মাধ্যমে
টিকিট বেরিয়ে আসবে। এই স্লট থেকে টিকিট বেরিয়েই কার্ড হোল্ডারে টিকিটটি জমা
হয়। আপনি যেই কয়টি টিকিটক্রয় করেছেন, একে একে সেই কয়টি কার্ডই এখানে জমা হবে।
এবার কার্ড হোল্ডার থেকে কার্ড অর্থাৎ মেট্রোরেলের কাঙ্খিত টিকিটটি সংগ্রহ
করে নিন। এভাবেই আপনি মেট্রোরেলের টিকিট কাটতে পারবেন।
মেট্রোরেলের টিকিট ব্যবহারের নিয়ম
মেট্রোরেলে যাত্রা করার জন্য টিকিট ব্যবহারের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে।
সাধারণত, মেট্রোরেলের টিকিট দুই ধরনের হয়ে থাকে যেমন- একক যাত্রার টিকিট
(Single Journey Ticket / Token) ও স্মার্ট কার্ড (Smart Card /
Rechargeable Card)। প্রত্যেকটি টিকিট ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম
ও বিধি রয়েছে। আর্টিকেলের এই অংশে আমি ঢাকা মেট্রোরেলের টিকিট
ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করবো, তো চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
১. একক যাত্রার টিকিট ব্যবহারের নিয়মঃ ঢাকা মেট্রোরেলে একবার
যাত্রার জন্য একক টিকিট (Single Journey Ticket) ব্যবহার করা হয়। এটি
টোকেন (Token) আকারে দেওয়া হয় এবং শুধুমাত্র একবারের জন্য ব্যবহারযোগ্য।
টিকিট ক্রয়ের জন্য মেট্রোরেলের স্টেশনে থাকা স্বয়ংক্রিয় টিকিট ভেন্ডিং
মেশিন (TVM) বা টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। নির্দিষ্ট
গন্তব্যের স্টেশন নির্বাচন করে টিকিটের জন্য ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। টিকিট
সাধারণত একটি টোকেন (Token) বা কাগজের কার্ডের মতো হয়। সফলভাবে লেনদেন
সম্পন্ন হলে একটি টোকেন (Token) বের হবে, যা গেটে স্ক্যান করতে হবে।
ব্যবহার বিধিঃ ঢাকা মেট্রোরেলে একবারের জন্য ব্যবহৃত একক যাত্রার
টিকিট (Single Journey Ticket) সাধারণত টোকেন (Token) আকারে প্রদান করা
হয়। স্টেশনে প্রবেশের সময় গেটে টোকেনটি অটোমেটিক ফেয়ার কালেকশন (AFC)
মেশিনে স্ক্যান করাতে হবে। সফলভাবে স্ক্যান হলে গেট খুলে যাবে, তখন ভেতরে
প্রবেশ করতে পারবেন। গেট পার হয়ে প্ল্যাটফর্মে যান এবং নির্দিষ্ট ট্রেনের
জন্য অপেক্ষা করুন। এটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট স্টেশন পর্যন্ত বৈধ এবং যাত্রা
শেষে ফেরত দিতে হয়।নির্ধারিত স্টেশনে পৌঁছানোর পর এক্সিট গেটে টোকেনটি
নির্ধারিত স্থানে ফেলে দিতে হবে। তারপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে গেট খুলে যাবে এবং
আপনি বের হতে পারবেন।
২. স্মার্ট কার্ড ব্যবহারের নিয়মঃ ঢাকা মেট্রোরেলে স্মার্ট কার্ড
হলো একাধিকবার ব্যবহারের জন্য রিচার্জযোগ্য (Rechargeable) ও সুবিধাজনক
একটি টিকিট ব্যবস্থা। এটি একবার সংগ্রহ করলে বারবার রিচার্জ করে ব্যবহার
করা যায়। একটি কার্ড শুধুমাত্র একজন যাত্রীর জন্য ব্যবহৃত হবে। স্মার্ট
কার্ড হারিয়ে গেলে নতুন কার্ড সংগ্রহ করতে হবে, তবে পুরাতন ব্যালেন্স ফেরত
পাওয়া যাবে না। স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করলে ভাড়ায় ৫% ছাড় পাওয়া যায়।
একবার প্রবেশ করার পর ৯০ মিনিটের মধ্যে বাহির হতে হবে, নতুবা জরিমানা হতে
পারে। যদি ভুল স্টেশনে নেমে যান, তাহলে অতিরিক্ত চার্জ প্রযোজ্য হতে পারে।
স্মার্ট কার্ড কোথায় পাবেনঃ মেট্রোরেল স্টেশনের কাউন্টার থেকে
স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন। কার্ডটি একবার কিনলে বারবার ব্যবহার করা
যায়। প্রথমবার কার্ড সংগ্রহের জন্য ২০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে, যার মধ্যে
১৫০ টাকা ব্যালেন্স হিসেবে পাওয়া যাবে। কার্ড রিচার্জ স্টেশনের কাউন্টারে
করা যাবে, ভবিষ্যতে অনলাইন পেমেন্টের সুবিধা চালু হতে পারে। ন্যূনতম
রিচার্জ ১০০ টাকা, সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত ব্যালেন্স রাখা যাবে।
ব্যবহার বিধিঃ স্টেশনে প্রবেশের সময় গেটে স্মার্ট কার্ডটি
নির্দিষ্ট স্ক্যানারে ট্যাপ (ছোঁয়াতে) করতে হবে। সফলভাবে স্ক্যানের পর গেট
খুলে যাবে এবং আপনি স্টেশনে প্রবেশ করতে পারবেন। গন্তব্যে পৌঁছে বাহির
হওয়ার সময় (Exit Gate) পুনরায় স্মার্ট কার্ড স্ক্যান করতে হবে। গেট খুলে
গেলে বাহির হতে পারবেন এবং স্ক্যান করার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্ডের
ব্যালেন্স থেকে আপনার নির্ধারিত ভাড়া কেটে নেওয়া হবে।
কাউন্টার থেকে মেট্রোরেলের টিকিট ক্রয় করার নিয়ম
কাউন্টার থেকে মেট্রোরেলে যাত্রা করার জন্য স্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে একক
যাত্রার টিকিট (Single Journey Ticket - Token) বা স্মার্ট কার্ড (MRT Pass)
কেনা যায়। কাউন্টার থেকে সহজেই একক যাত্রার টিকিট (টোকেন) অথবা স্মার্ট
কার্ড সংগ্রহ করা যায়। স্মার্ট কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে ভাড়ায় ৫% ছাড়
পাওয়া যায় এবং এটি পুনরায় রিচার্জ করে ব্যবহার করা যায়। নিচে কাউন্টার
থেকে টিকিট ক্রয় করার বিস্তারিত নিয়ম দেওয়া হলো।
মেট্রোরেলের প্রতিটা স্টেশন থেকে দুটি পদ্ধতিতে টিকিট কাটতে পারবে যাত্রীরা।
স্টেশনে থাকা টিকিট কাউন্টারের কর্মীদের কাছ থেকে এবং টিকিট বিক্রয় ভেন্ডিং
মেশিনের মাধ্যমে। আপনি যদি টিকিট বিক্রয় মেশিন থেকে টিকিট কিনতে স্বাচ্ছন্দ্য
বোধ না করেন, অথবা কোনো কারণে টিকিট বিক্রয় মেশিন বন্ধ থাকে তাহলেও রয়েছে
টিকিট কাটার বিকল্প ব্যবস্থা। টিকিট বিক্রয় মেশিনের উলটো দিকেই সাধারণ ভাবে
টিকিট কাটার কাউন্টার আছে।
কাউন্টারে গিয়ে টিকিট ক্রয়ের জন্য নির্ধারিত টিকিট লাইনে দাঁড়িয়ে আপনার
সিরিয়াল অপেক্ষা করুন। লাইনে দাঁড়িয়ে আপনি আপনার গন্তব্যস্থল ও টিকিটের
সংখ্যা বলে কাউন্টার থেকেই সরাসরি কিনতে পারবেন মেট্রোরেলের টিকিট। একজন
যাত্রী একবারে একটির বেশি একক যাত্রার টিকিট নিতে পারবেন না। বর্তমানে নগদ
টাকা দিয়ে ভাড়া পরিশোধ করা যায়। ভবিষ্যতে ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা চালু হতে
পারে। লেনদেন সফল হলে আপনাকে একটি টোকেন দেওয়া হবে।
মেট্রোরেলে ভ্রমণের নিয়মাবলি
মেট্রোরেলে ভ্রমন করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও বিধিনিষেধ অনুসরণ করতে
হয়। মেট্রোরেলে ভ্রমণের জন্য আপনার টিকেট কেনার জন্য কী করতে হবে, আপনি
প্রথম মেট্রোরেলে চড়তে গেলে কীভাবে উঠবেন ও নামবেন তার নিয়ম এবং কোচে উঠে
আপনার কী কী করা উচিৎ এবং কী করা উচিৎ না ইত্যাদি। যাত্রীদের নিরাপদ,
স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ যাত্রার জন্য নিম্নলিখিত নিয়মগুলো মানতে
হবে। তো চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
১. স্টেশনের বাহিরে যেসব নিয়ম মানা উচিৎঃ স্টেশন এলাকা পরিষ্কার
পরিচ্ছন্ন রাখতে সহযোগিতা করা উচিৎ। মেট্রোরেলের পিলারে কোনো পোস্টার,
লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন, চিকামারা, পেইন্টিং ইত্যাদি বিভিন্ন বিজ্ঞাপন
দেয়া উচিৎ না। কেউ এরূপ ক্রিয়াকলাপ করলেও তাকে নিষেধ করা উচিৎ ও আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা উচিৎ। মেট্রোরেল লাইন এরিয়ার আশেপাশেও ঘুড়ি উড়ানো,
ফানুস উড়ানো ইত্যাদি কোনোভাবেই ঠিক না। এগুলা উড়ে এসে মেট্রোরেলের
ইলেকট্রিক সিগন্যাকে বিঘ্ন ঘটায়। ফলে, মেট্রোরেল চলাচল ব্যহত হয় ও শিডিউল
বিপর্যয় দেখা দেয়। মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে কোনো স্টল বসানো, পার্কিং জোন
হিসাবে ব্যবহার করা ইত্যাদি নিষিদ্ধ।
২. স্টেশনে প্রবেশের নিয়মঃ সাধারণ ট্রেনের সাথে মেট্রোরেলের অন্যতম প্রধান পার্থক্য হলো, টিকিট না
কিনলে আপনি মেট্রোরেলের প্ল্যাটফর্মেই যেতেই পারবেন না। কারণ প্ল্যাটফর্ম
মূলত হলো উপরের তালায়। আর টিকিট ক্রয় করতে হয় নিচের তালা থেকে। নিচ তলাতেই
স্বয়ংক্রিয় গেট রয়েছে যাতে কার্ড সুইপ করার মাধ্যমে আপনি প্ল্যাটফর্মে ওঠার
অংশে প্রবেশ করতে পারবেন। স্বয়ংক্রিয় গেটের উপরে ‘হাতে কার্ড ধরে রাখা’
অঙ্কিত স্থানটিই মেট্রোরেলের কার্ড সুইপ করার জায়গা। গেটটি খুলতে এই স্থানে
আপনার টিকিটটি একবার সুইপ করুন। অতঃপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে গেট খুলে গেলে খুব
দ্রুত পার হয়ে যান। কারণ গেটটি পরবর্তী টিকিটধারীর জন্য আবার খুব দ্রুতই
বন্ধ হয়ে যাবে।
৩. স্টেশনে যেসব নিয়ম অনুসরণ করবেনঃ স্টেশনের অভ্যন্তরে কোনোপ্রকার
খাদ্যবস্তু গ্রহণ, ধুমপান ইত্যাদি কোনোভাবেই উচিৎ না। আপনি ধুমপানে অভ্যস্ত
হলে মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে যেয়েই করবেন। কোনোভাবেই উপরে ধুমপান করতে চেষ্টা
করবেন না, এতে স্মোক ডিটেক্টর আপনার ধুমপানের ধোয়া ডিটেক্ট করে স্টেশনকে
জরুরী এলার্ম দিতে পারে, তাতে যাত্রীরা ভয় পেয়ে যাবে এবং সার্বিক পরিস্থিতির
অবনতি ঘটবে। তাই সকল প্রকার খাওয়াদাওয়া করবেন স্টেশনের বাহিরে। কোনোপ্রকার
পোষা প্রাণী বহন করা যাবেনা। আপনার শখের বিড়াল, কুকুর ইত্যাদি কোনো প্রাণী
নিয়ে আসবেন না, এটি কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট নিষেধ আছে।
শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য ডেডিকেটেড কোচ হচ্ছে প্রথম কোচটি। অর্থাৎ, প্লাটফর্মের
একেবারের সামনের কোচে যেতে হবে। তবে অন্যান্য কোচেও মহিলারা উঠতে পারবেন তাতে
নিষেধ নাই। কিন্তু পিক আওয়ারে প্রথম কোচ অপেক্ষা পরবর্তী কোচ গুলোতে তুলনামূলক
বেশী ভীড় হয়, সেক্ষেত্রে মহিলাদের উচিৎ প্রথম কোচেই ভ্রমণ করা উচিত। তবে বিশেষ
কারণে প্রথম কোচে উঠতে না পারলে অবশ্যই অন্যান্য কোচেও সমান অধিকারে উঠতে
পারবেন।
ট্রেনের ভেতরে অন্য যাত্রীদের সাথে বিনয়ী ও শৃঙ্খলাবদ্ধ আচরণ করুন। অন্য
যাত্রীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করবেন না। প্রবীণ, শিশু, নারী ও প্রতিবন্ধী
ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত আসন ব্যবহার করবেন না, যদি আপনি উপযুক্ত না হন।
শোরগোল, উচ্চস্বরে কথা বলা বা মোবাইল ফোনে উচ্চস্বরে কথা বলা এড়িয়ে চলুন।
ট্রেন চলাচলের সময় দরজা বা জানালার সঙ্গে হেলান না দিয়ে সাবধানে দাঁড়ান।
৬. টিকিট ফেরত দেওয়াঃ সাধারণত বাংলাদেশের কোনো পরিবহনেই টিকিট ফেরত
দেওয়ার বালাই নেই। তা স্বাভাবিক বটে, কাগুজে টিকিট ফেরত দেওয়ার প্রয়োজন হবেই
বা কেন। কিন্তু মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেহেতু এটি একটি
কার্ড তাই এটি যথেষ্ট মূল্যবান। আর তাই এটি ফেরত না দিয়ে আপনি স্টেশন থেকে
বের হতে পারবেন না। চলন্ত সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসার পরেই স্বয়ংক্রিয় গেটের
কার্ড স্লটে এই কার্ডটি ফেলতে হবে। তবেই খুলবে দরজা। আর কার্ড যদি কোনো ভাবে
হারিয়ে ফেলেন, তাহলে অবশ্যই গুণতে হবে জরিমানা।
মেট্রোরেলের ভাড়া তালিকা (ঢাকা মেট্রোরেল MRT Line-6)
মেট্রোরেলের ভাড়া স্টেশন থেকে স্টেশনে ভিন্ন হয়ে থাকে। নিরাপদ, দ্রুত
ও আরামদায়ক যাত্রার জন্য মেট্রোরেল একটি অত্যাধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা।
মেট্রোরেলের ভাড়া সাধারণ সকল যাত্রীর জন্য একই রকম। উদাহরণস্বরূপ, উত্তরা
উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া ৫০ টাকা, এবং উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল
পর্যন্ত সর্বোচ্চ ভাড়া ৭০ টাকা। নিচে ঢাকা মেট্রোরেলের ভাড়ার তালিকা
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ঢাকা মেট্রোরেল (MRT লাইন-৬) বর্তমানে উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১
কিলোমিটার দীর্ঘ রুটে ১৬টি স্টেশনের মাধ্যমে সেবা প্রদান করছে। বর্তমানে
ডিটিসিএর তালিকা অনুযায়ী উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশনের ভাড়া
১০০ টাকা। উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশনের ভাড়া
৯০ টাকা। পল্লবী স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশনের ভাড়া ৮০ টাকা।
মিরপুর-১১ স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশনের ভাড়া ৭০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া
স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশনের ভাড়া ৬০ টাকা, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁ স্টেশন
থেকে মতিঝিল স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা, ফার্মগেট স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশনের
ভাড়া ৩০ টাকা এবং সচিবালয় স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশনের ভাড়া ২০ টাকা। একই
পরিমাণ ভাড়া উভয় দিকে চলাচলের জন্য প্রযোজ্য।
অন্যদিকে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ফার্মগেট ৩০ টাকা ও কারওয়ান বাজার স্টেশনে
ভাড়া লাগবে ৪০ টাকা। মিরপুর–১০ স্টেশন থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভাড়া ৫০ টাকা। মিরপুর-১০ থেকে সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে যেতে ৬০ টাকা লাগবে।
ফার্মগেট স্টেশন থেকে উঠে কারওয়ান বাজারে নামলেও এক স্টেশন থেকে আরেক
স্টেশনের সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া দিতে হবে।
তবে একই ভাড়া দিয়ে যাওয়া যাবে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন পর্যন্ত।
আর ফার্মগেট থেকে সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনের ভাড়া পড়বে ৩০ টাকা। মেট্রোরেলের
প্রতিটা স্টেশনে দুই ধরনের টিকিট কাটতে পারবেন যাত্রীরা। স্টেশনের টিকিট
কাউন্টারের কর্মীদের কাছ থেকে এবং টিকিট বিক্রয় ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে।
সিঙ্গেল জার্নির জন্য একজন যাত্রী একবারের যাত্রায় পাঁচটির বেশি টিকিট কাটতে
পারবেন না। আপনাদের বুঝার সুবিধার্থে নিচে মেট্রোরেলের ভাড়ার পূর্ণাঙ্গ
চার্ট তুলে ধরা হলোঃ
মেট্রোরেলের সময়সূচি (ঢাকা MRT Line-6)
মেট্রোরেলের সময়সূচি বর্ণনা করা হলো। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড
থেকে বলা হয়েছে, যেকোনো সরকারি ছুটি ও অনুষ্ঠানের দিন মেট্রোরেল চলাচল করবে।
এর আগেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সরকারি বিভিন্ন ছুটির দিনে মেট্রোরেল
চলাচল করেছে। বর্তমানে মেট্রোরেল উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল
করছে। শুক্র ও শনি সহ সাপ্তাহিক কর্মদিবস রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত
ঢাকা মেট্রোরেল (MRT লাইন-৬) এর সময়সূচী নিম্নরূপঃ
উত্তরা উত্তর থেকে প্রথম ট্রেন সকাল ০৭ঃ১০মিনিটে, দ্বিতীয় ট্রেন সকাল ০৭ঃ২০
মিনিটে, তবে এই ট্রেন দু’টিতে শুধুমাত্র MRT pass / Rapid Pass ব্যবহারকারীরা
যাতায়াত করতে পারবেন। তৃতীয় ট্রেন সকাল ০৭ঃ৩০ মিনিটে। চতুর্থ ট্রেন ০৭ঃ৩৮
মিনিটে। এভাবে প্রতি ৮ মিনিটস পরপর ট্রেন চলবে সকাল ১১ঃ৩৬ মিনিট পর্যন্ত।
সকাল ১১:৩৭ থেকে দুপুর ০২ঃ২৪ মিনিট পর্যন্ত প্রতি ১২ মিনিট পরপর, দুপুর ০২ঃ২৫
থেকে রাত ০৮ঃ৩২ মিনিট পর্যন্ত প্রতি ৮ মিনিট পরপর, রাত ০৮ঃ৩৩ মিনিট থেকে
প্রতি ১০ মিনিট পরপর রাত ০৯ঃ০০ পর্যন্ত।
মতিঝিল থেকে প্রথম ট্রেন সকাল ০৭ঃ৩০মিনিটে, দ্বিতীয় ট্রেন ০৭ঃ৪০মিনিটে, তৃতীয়
ট্রেন ০৭ঃ৫০মিনিটে, চতুর্থ ট্রেন সকাল ০৮ঃ০০ তে। সকাল ০৮ঃ০১ মিনিটের পর থেকে
প্রতি ০৮ মিনিটস পরপর দুপুর ১২:০৮ পর্যন্ত, দুপুর ১২ঃ০৯ থেকে দুপুর ০৩ঃ০৪
মিনিট পর্যন্ত প্রতি ১২ মিনিট পরপর, ০৩ঃ০৫ থেকে রাত ০৯ঃ১২ মিনিট পর্যন্ত
প্রতি ৮ মিনিট পরপর, রাত ০৯ঃ১৩ থেকে রাত ০৯ঃ৪০ মিনিট পর্যন্ত প্রতি ১০ মিনিটস
পরপর ট্রেন চলবে।
বিশেষ নির্দেশনাঃ মতিঝিল স্টেশন থেকে রাত ৯:১৩ এর পর ছেড়ে
যাওয়া ট্রেনগুলোতেও শুধুমাত্র MRT/র্যাপিড পাস প্রযোজ্য। শুক্রবার ব্যতীত
অন্যান্য দিন সকাল ৭:২০ থেকে রাত ৮:৫০ পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩:৩০
থেকে রাত ৮:৫০ পর্যন্ত একক যাত্রার টিকিট ক্রয় করা যাবে। রাত ৮:৫০ এর পর
স্টেশনগুলোর টিকিট বিক্রয় অফিস এবং মেশিন বন্ধ হয়ে যাবে।
মেট্রোরেলে ভ্রমণের বিধি নিষেধ
মেট্রোরেলে ভ্রমণের সময় যাত্রীদের কিছু বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয়। এগুলো
মেট্রোরেলের নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। এটির সুষ্ঠ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বেশ কিছু বিধি নিষেধ
প্রণয়ন করা হয়েছে যা আমাদের সকলেরই মেনে চলা উচিত। উল্লেখ্য যে এ সকল বিধি
নিষেধ মেট্রোরেল এবং মেট্রোরেলের প্ল্যাটফর্ম, সকল স্থানেই প্রযোজ্য। এ সকল
বিধি নিষেধগুলো হলোঃ
১. স্টেশনে প্রবেশ ও টিকিট ব্যবহার
-
যাত্রীরা শুধুমাত্র বৈধ টিকিট বা স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে স্টেশনে
প্রবেশ করতে পারবেন।
-
একবার প্রবেশ করার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্টেশন ত্যাগ করতে হবে।
- অন্যের টিকিট বা কার্ড ব্যবহার বা হস্তান্তর করা যাবে না।
-
কোনো ব্যক্তি একটি টিকিট দিয়ে একাধিকবার প্রবেশের চেষ্টা করলে শাস্তির
সম্মুখীন হতে হবে।
২. প্ল্যাটফর্মে অবস্থান ও নিরাপত্তা বিধি
-
প্ল্যাটফর্মে হলুদ সীমানা (সেফটি লাইন) অতিক্রম করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
-
ট্রেন আসার সময় প্ল্যাটফর্মের নিরাপদ দূরত্ব (হলুদ দাগের পিছনে)
দাঁড়াতে হবে।
-
চলন্ত ট্রেনে ওঠা বা নামা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক।
- ট্রেন থামার পর যাত্রীদের আগে নামতে দিতে হবে, পরে উঠতে হবে।
- শিশুদের সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ করলে, তাদের বিশেষ যত্নে রাখা আবশ্যক।
৩. ট্রেনে ওঠা ও ভ্রমণকালীন বিধিনিষেধ
-
ট্রেনে প্রবেশের সময় দরজায় ভিড় না করে ধীরস্থিরভাবে ভেতরে প্রবেশ করতে
হবে।
- ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়ানো এবং দরজা আটকানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
-
ট্রেনে ভ্রমণের সময় উচ্চস্বরে কথা বলা, গান শোনা বা মোবাইল স্পিকার
ব্যবহার নিষিদ্ধ।
- ট্রেনের ভেতরে ধাক্কাধাক্কি, আসন দখলের জন্য ঝগড়া করা যাবে না।
-
মহিলা, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী এবং শিশুদের জন্য সংরক্ষিত আসন দখল করা যাবে
না।
-
যাত্রীরা ব্যাগ বা মালপত্র নিজের সামনে রাখবেন, যেন অন্যদের চলাচলে
সমস্যা না হয়।
- ট্রেনের আসনে পা তুলে রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
-
ট্রেনে অপ্রয়োজনীয়ভাবে জরুরি দরজা বা এলার্ম ব্যবহার করা যাবে না।
৪. নিষিদ্ধ বস্তু ও কার্যকলাপ
- দাহ্য পদার্থ (পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন ইত্যাদি)।
- বিস্ফোরক বা রাসায়নিক পদার্থ।
- আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র বা অন্য কোনো বিপজ্জনক বস্তু।
- বড় ব্যাগ, ভারী মালামাল বা বৃহৎ আকারের পণ্য।
- জীবজন্তু বা পোষা প্রাণী (গাইড ডগ ব্যতিক্রম)।
- স্টেশন বা ট্রেনের ভেতরে খাবার গ্রহণ ও পানীয় পান নিষিদ্ধ।
- ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ করা যাবে না।
-
ভিক্ষাবৃত্তি, ফেরি করে পণ্য বিক্রি বা যেকোনো ব্যবসায়িক প্রচারণা
নিষিদ্ধ।
- রাজনৈতিক শ্লোগান, বিক্ষোভ বা প্রচার করা যাবে না।
-
ট্রেন বা স্টেশন নোংরা করা যাবে না, ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে।
৫. জরুরি পরিস্থিতি ও জরিমানা সংক্রান্ত বিধান
-
কোনো যাত্রী যদি ভুলবশত বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জরুরি দরজা খুলে দেন বা
এলার্ম বাজান, তাহলে তার বিরুদ্ধে জরিমানা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া
হতে পারে।
-
স্টেশনের বা ট্রেনের সম্পত্তির কোনো ধরনের ক্ষতি করলে জরিমানা ও আইনি
ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
-
নির্দিষ্ট সময়ের বেশি স্টেশনে অবস্থান করলে জরিমানা করা হতে পারে।
-
মেট্রোরেলে ভ্রমণের সময় অন্য যাত্রীদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করলে
কর্তৃপক্ষ যাত্রীকে স্টেশন থেকে বের করে দিতে পারে।
৬. স্টেশন থেকে বাহির হওয়া সংক্রান্ত বিধি
- গন্তব্যে পৌঁছে এক্সিট গেটে টিকিট বা কার্ড টাচ করে বের হতে হবে।
- সিঙ্গেল জার্নি টিকিট ব্যবহার করলে স্টেশনে ফেরত দিতে হবে।
-
যদি কারো কার্ড বা টিকিট কাজ না করে, তাহলে স্টাফদের সহায়তা নিতে হবে।
-
কোনো যাত্রী ভুলবশত ভিন্ন স্টেশনে নেমে গেলে, স্টেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে
যোগাযোগ করে সঠিক নির্দেশনা নিতে হবে।
মেট্রোরেলে যাতায়াতের সুবিধাসমূহ
মেট্রোরেলে যাতায়াতের অনেক সুবিধা রয়েছে। ঢাকা মেট্রোরেল বাংলাদেশের প্রথম
বৈদ্যুতিক দ্রুতগামী পরিবহন ব্যবস্থা, যা রাজধানীর যানজট কমানো এবং
নাগরিকদের দ্রুত, আরামদায়ক ও নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে
নির্মিত হয়েছে। এটি আধুনিক নগর জীবনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও
পরিবেশগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া
যাক মেট্রোরেলে যাতায়াতের সুবিধাসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত।
১. দ্রুতগতির ও সময় সাশ্রয়ী যাতায়াতঃ মেট্রোরেল ঘণ্টায় প্রায়
১০০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে, যা সাধারণ বাসের চেয়ে অনেক দ্রুত। যানজটের
কারণে বিলম্বিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, ফলে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে
পৌঁছানো সম্ভব। বর্তমানে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মাত্র ২০ মিনিটে
পৌঁছানো সম্ভব, যা বাস বা প্রাইভেট কারে ১-২ ঘণ্টা সময় নেয়। ভবিষ্যতে
মতিঝিল পর্যন্ত চালু হলে, উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে মাত্র ৩৮-৪০ মিনিট
লাগবে।
২. যানজট ও পরিবহন সংকট নিরসনে কার্যকরঃ ঢাকার প্রধান সড়কগুলোর
ওপর দিয়ে মেট্রোরেল চলাচল করায় প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ মেট্রোরেলে
যাতায়াত করবে, ফলে সড়কে যানবাহনের চাপ কমবে। মেট্রোরেলে যাতায়াতকারীরা
বাস বা প্রাইভেট কার ব্যবহার কমাবে, ফলে সড়কে যানজট হ্রাস পাবে। ঢাকা
শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে, যা মানুষের
চলাচলকে সহজ করবে। ব্যক্তিগত গাড়ির প্রয়োজনীয়তা কমায়, ফলে জ্বালানি ব্যয় ও
ট্রাফিক সমস্যা হ্রাস পাবে।
৩. আরামদায়ক ও নিরাপদ ভ্রমণঃ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কোচ থাকার
কারণে গরম ও ধূলাবালিমুক্ত পরিবেশে যাতায়াত করা সম্ভব। ট্রেনের অভ্যন্তরে
পর্যাপ্ত আলো, ভেন্টিলেশন ও আরামদায়ক আসন রয়েছে, যা যাত্রা স্বাচ্ছন্দ্যময়
করে। সিসিটিভি ক্যামেরা, নিরাপত্তারক্ষী ও আধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা ট্রেন ও
স্টেশনের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রেনের দরজা
স্বয়ংক্রিয় এবং ট্রেন চলার সময় দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক হয়ে যায়, যা
অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানামা বা দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানোর
জন্য প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর (PSD) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
৪. পরিবেশবান্ধব ও বিদ্যুৎচালিত পরিবহনঃ মেট্রোরেল সম্পূর্ণ
বিদ্যুৎচালিত হওয়ায় কোনো ধরণের কার্বন নিঃসরণ হয় না, যা পরিবেশ ও
বায়ুদূষণ রক্ষায় সহায়ক। এটি জ্বালানি নির্ভর গণপরিবহনের (বাস, প্রাইভেট
কার) ওপর চাপ কমাবে, ফলে পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাবে। ঢাকার বাতাসে দূষিত গ্যাস
ও ধূলিকণা কমাবে, যা নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক হবে। যানজট কমিয়ে
জ্বালানি সাশ্রয় করে, ফলে দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৫. আধুনিক প্রযুক্তি ও সুবিধাঃ ট্রেনে ওঠা-নামার জন্য স্বয়ংক্রিয়
দরজা ব্যবস্থা রয়েছে, যা যাত্রীদের নিরাপদ প্রবেশ ও প্রস্থানের নিশ্চয়তা
দেয়। স্টেশনগুলোর প্রতিটিতে এলিভেটর, এস্কেলেটর ও ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড
রয়েছে, যা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক। স্মার্ট কার্ড ও
ডিজিটাল টিকিটিং ব্যবস্থা থাকায় যাত্রীরা সহজেই টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন।
নির্দিষ্ট সময় অন্তর ট্রেন চলাচল করায় এটি একটি নির্ভরযোগ্য গণপরিবহন
ব্যবস্থা।
৬. নির্ভরযোগ্য ও সময়মত চলাচলঃ নির্দিষ্ট সময় পরপর মেট্রোরেল চলায়
যাত্রীদের জন্য নির্ভরযোগ্য গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়। অন্যান্য
গণপরিবহনের মতো ট্রাফিক জ্যামের কারণে বিলম্ব হয় না, ফলে সঠিক সময়ে
গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব। ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে চলাচল করে, ফলে নির্ধারিত
সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো নিশ্চিত হয়। দিনে প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত
মেট্রোরেল পরিচালিত হবে, যা অফিসগামী ও শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।
৭. ভ্রমণের খরচ সাশ্রয়ীঃ মেট্রোরেল ব্যবহার করলে জ্বালানি খরচ
কমবে, ফলে ব্যক্তিগত গাড়ির প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে। বাস বা সিএনজির
তুলনায় ভাড়া তুলনামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং যাতায়াতের সময়ও কমে যায়।
স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে ডিসকাউন্ট সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।
৮. অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাঃ মেট্রোরেলের মাধ্যমে
দৈনিক লাখো মানুষ দ্রুত যাতায়াত করতে পারবে, যা কর্মঘণ্টা বাঁচিয়ে
উৎপাদনশীলতা বাড়াবে। স্টেশন এলাকার বাণিজ্যিক মূল্য বৃদ্ধি পাবে, ফলে
ব্যবসা ও বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। মেট্রোরেল সংলগ্ন এলাকাগুলোতে
নতুন শপিং মল, রেস্তোরাঁ ও অফিস স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা
কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াবে।
৯. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও প্রবীণদের জন্য সুবিধাঃ বয়স্ক ও
প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত আসন রয়েছে। প্রতিটি স্টেশনে লিফট ও
র্যাম্প ব্যবস্থা রয়েছে, যা শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক।
ট্রেনের ডিজিটাল ডিসপ্লে ও ঘোষণা ব্যবস্থা থাকায় শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী
ব্যক্তিরাও সহজে ভ্রমণ করতে পারেন।
১০. জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকাঃ মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে
বাংলাদেশে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। এটি ঢাকার
গণপরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়নে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। আন্তর্জাতিক
মানের গণপরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন এবং আধুনিক শহরের ধারণা
বাস্তবে রূপ পেয়েছে।
মেট্রোরেল সম্পর্কে শেষকথা
ঢাকা মেট্রোরেল নগরবাসীর জন্য আধুনিক, দ্রুত ও আরামদায়ক পরিবহন ব্যবস্থা
নিশ্চিত করতে চালু করা হয়েছে। এটি যাত্রীদের সময় সাশ্রয়, যানজট কমানো ও
পরিবেশবান্ধব যাতায়াতের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। মেট্রোরেল শুধুমাত্র একটি
গণপরিবহন ব্যবস্থা নয়, এটি ঢাকার আধুনিক শহর ব্যবস্থাপনার অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এটি যানজট কমিয়ে, পরিবেশবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা
নিশ্চিত করে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা নগরবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে যুগান্তকারী
পরিবর্তন আনবে। মেট্রোরেল আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষা করা আমাদের
সকলের দায়িত্ব। তাই এ সম্পর্কিত বিধি নিষেধগুলো জানা ও মানাটাও আমাদের
দায়িত্ব। এছাড়াও জনজীবনকে সহজ করতে মেট্রোরেলের ভূমিকা থাকতে পারে অনেকটাই।
তাই এতে দ্রুত অভ্যস্থ হয়ে যাওয়াই কাম্য। আশা করছি, মেট্রোরেলের টিকিট কাটার
নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url