অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ পদ্ধতি
অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ পদ্ধতি এবং এর দাখিলা সংগ্রহের প্রক্রিয়াসমূহ
নিয়ে আজকের এই আর্টিকেল। ভূমি উন্নয়ন কর একটি চলমান প্রক্রিয়া যা প্রতিবছর
আদায় করতে হয় বা দিয়ে দিতে হয়। প্রতিবছর ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ না করলে তা
বকেয়ায় রূপান্তরিত হয় যা পরিশোধ করা একটি আর্থিক কষ্টের বিষয়।
পোস্ট সূচিপত্রঃ অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ পদ্ধতি
- ভূমি উন্নয়ন কর কি
- অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ পদ্ধতি
- ভূমি উন্নয়ন কর ম্যানুয়ালি পরিশোধ পদ্ধতি
- ভূমি উন্নয়ন করের দাখিলা সংগ্রহ করার পদ্ধতি
- ভূমি উন্নয়ন করের উদ্দেশ্য
- ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করলে কি হবে
- যে কারণে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা জরুরী
- ভূমি উন্নয়ন করের পরিমাণ
- ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া হলে করণীয়
- অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ সম্পর্কে শেষকথা
ভূমি উন্নয়ন কর কি
ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) হলো কোন জমি ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট হারে সরকারকে
যে অর্থ প্রদান করা হয় তাহাই মূলত ভূমি উন্নয়ন কর। আর এই অর্থ জমির পরিমাণের
ওপর ভিত্তি করে বছরে ১ বার আদায় করা হয়। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ভূমি
উন্নয়ন কর আদায়ের দায়িত্বে থাকে। এই কর পরিশোধের পর জমির মালিক একটি দাখিলা
পান, যা জমির মালিকানা প্রমাণের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের সুবিধা প্রদান করছে। অনলাইন পদ্ধতির মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ প্রক্রিয়া সহজ ও সময়সাশ্রয়ী হয়েছে, যা জমির মালিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করলে জমি খাস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই সময়মতো কর পরিশোধ করা জমির মালিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ পদ্ধতি
অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে প্রাথমিকভাবে ভূমি
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে। সরকার ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ
প্রক্রিয়াকে সহজ করার জন্য ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইন পোর্টাল (https://ldtax.gov.bd/) চালু করেছে। এই পদ্ধতিতে করদাতারা ঘরে বসেই ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে
পারবেন। বাংলাদেশে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের পদ্ধতি ডিজিটাল ও ম্যানুয়াল
উভয়ভাবে করা যায়।
ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের পদ্ধতি এখন অনেক সহজ
হয়েছে, কারণ বাংলাদেশ সরকার অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমেই কর পরিশোধের
সুবিধা চালু করেছে। বর্তমানে e-Mutation & Land Development Tax
পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করা যায়, যা আগের তুলনায়
অনেক সহজ ও দ্রুত হয়েছে। নিচে ধাপে ধাপে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ
পদ্ধতিগুলো দেখানো হলো।
প্রথম ধাপ, ট্যাক্স একাউন্ট নিবন্ধনঃ অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করার জন্য
ভিজিট করতে হবে
https://ldtax.gov.bd/ ওয়েবসাইটে। বাম পাশের মানুষ থেকে ” নাগরিক কর্নার” লিংকে যেতে হবে।
এরপরের নিচের মত একটি রেজিস্ট্রেশন ফর্ম দেখা যাবে আপনার একটি সচল মোবাইল
নাম্বার প্রদান করুন। এবং যোগফলটি টাইপ করুন এরপরে পরবর্তী পদক্ষেপ বাটনে
ক্লিক করুন। এরপরে আপনার কাছে একটি পাসওয়ার্ড চাওয়া হবে একাউন্টের সুরক্ষার
জন্য। পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্ট লগইন করুন। এরপর আপনাকে বিস্তারিত প্রোফাইলে
নিয়ে যাওয়া হবে।
আরও পড়ুনঃ খতিয়ান থেকে জমির পরিমাণ বের করার নিয়ম
দ্বিতীয় ধাপ, এনআইডি ভেরিফিকেশনঃ এই ধাপে আপনাকে একাউন্টের পরিচিতি
প্রদান করতে হবে, এজন্য আপনার এনআইডি নাম্বার এবং জন্ম তারিখ দিয়ে এনআইডি
যাচাই করে নিতে হবে। বিভিন্ন প্রোফাইল থেকে বাম পাশে এনআইডি ভেরিফাই করুন অপশনে
যেতে হবে। আপনার ১৩ কিংবা ১৭ সংখ্যার এন আই ডি নাম্বার এবং আপনার সঠিক জন্ম
তারিখ দিয়ে একাউন্টটি ভেরিফাই করে নিন।
তৃতীয় ধাপ, খতিয়ান যুক্ত করুনঃ আপনার কর যোগ্য যে পরিমাণ জমি রয়েছে
প্রত্যেকটির খতিয়ানের তথ্য আপনাকে প্রোফাইলে এড করতে হবে। জাতীয় পরিচয়
পত্র ভেরিফিকেশন করার পরে প্রোফাইলের মেনু গুলো সব পরিবর্তন হয়ে যাবে, এখানে
খতিয়ান নামক একটি অপশন খুঁজে পাওয়া যাবে। এবং অপশনে ক্লিক করে খতিয়ানের
তথ্য যুক্ত করে নিতে হবে।
এখানে,
- প্রথমে বিভাগ, জেলা, উপজেলা নির্বাচন করুন।
- এরপরে মৌজা নির্বাচন করুন, অর্থাৎ আপনার জমিটি ঠিক কোন মৌজায় অবস্থিত তা বাছাই করুন, খতিয়ানের উপরে মৌজা নম্বর লেখা থাকে।
- এরপর সর্বশেষ খতিয়ান নম্বরটি উল্লেখ করুন।
- যদি হোল্ডিং নম্বর জানা থাকে তাহলে টাইপ করুন।
- এরপরে খতিয়ানের একটি স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে।
- এবং জমির মালিকের ধরন নিশ্চিত করতে হবে।
উপরোক্ত তথ্যগুলো নিশ্চয়ন হয়ে গেলে সংরক্ষণ করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে এবং
আপনার সমস্ত তথ্যগুলো ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কিছুদিন পেন্ডিং থাকবে,
ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ আপনার তথ্য যাচাই বাছাই করে আপনার তথ্যগুলো
এপ্রুভ দিয়ে দিবে। এরপর আপনি খাজনা পরিশোধ করার সুযোগ পাবেন। আপনার তথ্যটি
অনুমোদন দেয়া হলে নিচের মত দেখা যাবে
চতুর্থ ধাপ, কর পরিশোধ করুনঃ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করার জন্য বাম
পাশের থেকে হোল্ডিং অপশনে ক্লিক করলে হবে। হোল্ডিং অপশন থেকে পদক্ষেপ
বিস্তারিত লিংকে ক্লিক করতে হবে। এরপরে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ কিংবা খাজনা
দেওয়ার জন্য বিস্তারিত ফরম চলে আসবে।
এই পেইজে আপনার ভূমি উন্নয়ন কর সংক্রান্ত অনেকগুলো তথ্য দেখতে পাবেন যেমন
আপনার সর্বশেষ কর পরিশোধের তারিখ, আপনার মোট বকেয়া কর, এবং সর্বমোট
পরিশোধযোগ্য করের পরিমাণ, এরপরে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের পদ্ধতি গুলো ,
পেমেন্ট মেথড যেমন এ চালান, মোবাইল ব্যাংকিং, ইত্যাদি। আপনার কাছে সহজলভ্য যে
পেমেন্ট মেথড রয়েছে আপনি সেটি দিয়ে খাজনা পরিশোধ করতে পারবেন।
পঞ্চম ধাপ, রশিদ ডাউনলোডঃ ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধ হয়ে গেলে
তা প্রমাণস্বরূপ একটি রশিদ প্রদান করে ভূমি মন্ত্রণালয়, এটি আপনি সংরক্ষণ
করে রাখতে পারবেন পরবর্তী যেকোনো কাজে ব্যবহার করার জন্য। প্রোফাইলের মেনু
থেকে “ দাখিলা” অপশনে গিয়ে আপনার এই পর্যন্ত যাবতীয় খাজনা দেওয়ার রশিদ
গুলো দেখতে পাবেন। এরপর আপনি আপনার রশিদটি বাছাই করে প্রিন্ট লেখাতে ক্লিক
করলে আপনার রশিদটি ডাউনলোড হয়ে যাবে।
ভূমি উন্নয়ন কর ম্যানুয়ালি পরিশোধ পদ্ধতি
যারা অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে চান না বা পারেন না, তারা
ম্যানুয়ালি (অফলাইনে) কর পরিশোধ করতে পারেন। বাংলাদেশে এখনো অনেক ভূমি
মালিক ম্যানুয়ালি (অফলাইনে) ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে থাকেন। এই
পদ্ধতিতে ভূমি অফিস এবং ব্যাংকের মাধ্যমে কর পরিশোধ করতে হয়। ভূমি উন্নয়ন
কর ম্যানুয়ালি পরিশোধ করার জন্য আপনাকে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে।
১. ভূমি উন্নয়ন কর কোথায় পরিশোধ করবেনঃ ম্যানুয়ালি ভূমি উন্নয়ন
কর পরিশোধ করতে চাইলে আপনাকে নিকটস্থ ইউনিয়ন ভূমি অফিস, উপজেলা ভূমি অফিস,
বা সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব শাখায় (যদি পৌর এলাকায় হয়)-গিয়ে ভূমি উন্নয়ন
কর পরিশোধ করতে পারবেন। যদি ভূমির মালিকানা নতুন হয় বা হস্তান্তরিত হয়,
তাহলে পূর্ববর্তী মালিকের কর পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্যও লাগতে পারে। ভূমি
উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য নিচের নথিগুলো সঙ্গে রাখুন-
- পূর্ববর্তী কর পরিশোধের রশিদ (যদি থাকে)
- জমির খতিয়ান (সি.এস, এস.এ, আর.এস, বা বিএস খতিয়ান)
- জমির দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বর
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা মালিকের আইডি কপি।
- জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র (যদি প্রয়োজন হয়)
২. ভূমি অফিসে উপস্থিত হন ও ফরম সংগ্রহ করুনঃ আপনার এলাকা ভিত্তিক ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা উপজেলা ভূমি অফিসে যান
এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা রাজস্ব কর্মকর্তার কাছ থেকে ভূমি উন্নয়ন
কর পরিশোধ ফরম সংগ্রহ করতে হবে। এই ফরমে সাধারণত নিচের তথ্য দিতে হয়
যেমনঃ-
- মালিকের নাম ও ঠিকানা।
- জমির দাগ ও খতিয়ান নম্বর।
- জমির পরিমাণ (শতক/বিঘা অনুযায়ী)
- জমির ধরন (কৃষি, আবাসিক, বাণিজ্যিক ইত্যাদি)
৩. কর নির্ধারণ করুনঃ কর্মকর্তা আপনার জমির পরিমাণ ও ধরন
অনুযায়ী কর নির্ধারণ করবেন। বাংলাদেশে ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারিত হয়
নিম্নলিখিত ভিত্তিতে ভূমির ধরন অনুযায়ী করের হার প্রতি শতক বা বিঘা
অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে যেমন-
- কৃষিজমি গ্রামের ক্ষেত্র কম কর।
- আবাসিক জমি (পৌরসভা ও শহর) মধ্যম হারে কর।
- বাণিজ্যিক জমির ক্ষেত্র বেশি হারে কর।
৪. কর পরিশোধ করুনঃ নির্ধারিত করের পরিমাণ জানার পর, আপনি সেটি
সরকারি ব্যাংকে জমা দিতে পারেন বা ভূমি অফিসের নির্ধারিত কাউন্টারে নগদ
পরিশোধ করতে পারেন।সাধারণত সরকারি ব্যাংক যেমন সোনালী ব্যাংক, জনতা
ব্যাংক, বা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত শাখায় ভূমি উন্নয়ন কর জমা
নেওয়া হয়। ব্যাংকে কর পরিশোধের পর চালান রশিদ (TR Form-6) সংগ্রহ করতে
হবে।
৫. পরিশোধের রশিদ সংগ্রহ করুন ও সংরক্ষণ করুনঃ কর পরিশোধ সম্পন্ন
হলে ভূমি অফিস থেকে একটি রশিদ (চালান কপি) সংগ্রহ করুন। এটি আপনার
পরবর্তী কর পরিশোধ ও জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাজে প্রমাণ হিসেবে কাজে
লাগবে। রশিদ সংরক্ষণের কারণঃ
- পরবর্তী কর পরিশোধের সময় প্রমাণ হিসেবে।
- জমি বিক্রয় বা হস্তান্তরের সময় প্রয়োজন হতে পারে।
- আদালত বা প্রশাসনিক কোনো কাজে জমির কর পরিশোধের প্রমাণ দিতে হলে।
৬. রেকর্ড আপডেট নিশ্চিত করুনঃ কর পরিশোধের পরে ভূমি অফিসে গিয়ে
নিশ্চিত করুন যে আপনার নামের জমির রেকর্ডে কর পরিশোধের তথ্য আপডেট হয়েছে
কিনা। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
ভূমি উন্নয়ন করের দাখিলা সংগ্রহ করার পদ্ধতি
ভূমি উন্নয়ন করের দাখিলা (রশিদ/প্রমাণপত্র) সংগ্রহ করা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি জমির মালিকানা ও কর পরিশোধের প্রমাণ হিসেবে কাজ
করে। আপনি সরকারি অফিসে গিয়ে অথবা অনলাইনে ডিজিটালভাবে ডাউনলোড করে
দাখিলা সংগ্রহ করতে পারেন। এটি আপনাকে আপনার নিজের সংগ্রহে রেখে দিতে
হবে এক বছরের জন্য। তাহলে চলুন দেখে নিই কিভাবে দাখিলাটি সংগ্রহ করতে
হবে।
১,অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন করের দাখিলা সংগ্রহ করার পদ্ধতিঃ
- আপনি যদি অনলাইনে ঘরে বসেই ভূমি উন্নয়ন কর এর দাখিলা কালেক্ট করতে চান, তাহলে আপনাকে এই লিংকে- www.ldtax.gov.bd ক্লিক করতে হবে।
- এরপর সেখান থেকে অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর এ প্রবেশ করতে হবে।
- তারপর নাগরিক লগইন নামক অপশনে প্রবেশ করতে হবে।
- এই অপশনে আপনার মোবাইল নম্বর এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে ড্যাশবোর্ড প্রবেশ করতে হবে।
- এরপর দাখিলা ডাউনলোড বা রশিদ চেক অপশনটি নির্বাচন করুন।
- পরিশেষে আপনি খেয়াল করলে একটি বিস্তারিত নামক অপশন দেখতে পাবেন।
- সেখানে আপনার জমির তথ্য (খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর বা ন্যাশনাল আইডি নম্বর) প্রদান করুন।
- যদি কর পরিশোধ করা থাকে, তাহলে আপনার দাখিলা প্রদর্শিত হবে। দাখিলাটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করুন এবং সংরক্ষণ করুন।
২. ম্যানুয়ালি দাখিলা সংগ্রহ করার পদ্ধতিঃ
যদি আপনি সরাসরি অফিস থেকে দাখিলা সংগ্রহ করতে চান, তাহলে নিচের
ধাপগুলো অনুসরণ করুনঃ
- ইউনিয়ন ভূমি অফিস (গ্রামীণ এলাকার জন্য)
- উপজেলা ভূমি অফিস (বিশেষ ক্ষেত্রে)
- সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভার ভূমি কর শাখা (শহর বা পৌর এলাকায়)
- সরকারি নির্ধারিত ব্যাংক (যেখানে কর পরিশোধ করেছেন)
সংগ্রহের ধাপসমূহঃ
- ভূমি কর পরিশোধের পর, সংশ্লিষ্ট অফিস বা ব্যাংক থেকে দাখিলা/রশিদ চেয়ে নিন।
- যদি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করেন, তবে চালান নম্বরসহ ভূমি অফিসে যোগাযোগ করুন।
- ভূমি অফিস আপনার কর পরিশোধের তথ্য যাচাই করবে।
- যাচাই শেষে, অফিস থেকে কাগজে মুদ্রিত দাখিলা (রশিদ) সরবরাহ করা হবে।
- এটি সংরক্ষণ করুন, কারণ ভবিষ্যতে জমি সংক্রান্ত যেকোনো কাজে এটি প্রয়োজন হতে পারে।
ভূমি উন্নয়ন করের উদ্দেশ্য
ভূমি উন্নয়ন করের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র সরকারি আয়ের উৎস নয়, এটি
সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি, ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার, কৃষিজমির
সংরক্ষণ, অবৈধ দখল প্রতিরোধ, ও পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। ভূমি উন্নয়ন করের মাধ্যমে সরকার ও জনগণের মধ্যে একটি
শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে উঠে, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক। ভূমি উন্নয়ন করের প্রধান উদ্দেশ্যগুলো বিশদভাবে আলোচনা করা হলো।
১. সরকারি রাজস্ব সংগ্রহ ও বাজেট সহায়তাঃ ভূমি উন্নয়ন কর
সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব উৎস। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক
কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়, যা এই কর থেকে আয় করা
অর্থের মাধ্যমে আংশিকভাবে পূরণ করা হয়। ভূমি উন্নয়ন কর থেকে প্রাপ্ত
রাজস্ব জাতীয় ও স্থানীয় বাজেটে যুক্ত হয় এবং দেশের অবকাঠামো ও
উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ব্যয় করা হয়। সরকারি প্রশাসন, ভূমি ব্যবস্থাপনা
এবং ভূমি সংক্রান্ত অন্যান্য সেবার ব্যয় নির্বাহে সহায়তা করে। করের আওতা
বৃদ্ধি ও যথাযথ সংগ্রহ নিশ্চিত হলে, দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (GDP)
ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
২. ভূমির যথাযথ ব্যবহার ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করাঃ ভূমি
একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, যা সঠিকভাবে ব্যবহৃত না হলে অপচয় ও
অব্যবস্থাপনা দেখা দিতে পারে। ভূমি উন্নয়ন কর আরোপের মাধ্যমে ভূমি
মালিকদের সঠিকভাবে ভূমি ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়। কর পরিশোধ করতে হবে
বলেই অনেক মালিক তাদের জমি চাষযোগ্য বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে
আগ্রহী হন। কৃষি, আবাসিক, বাণিজ্যিক বা শিল্প এলাকাগুলোকে আলাদা করে কর
নির্ধারণ করা হয়, যা ভূমির সুষ্ঠু বণ্টন ও ব্যবহার নিশ্চিত করে। নিয়মিত
ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা হলে, মালিকানার দাবির পক্ষে এটি একটি বৈধ
প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।
৩. ভূমি সংক্রান্ত জালিয়াতি প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা বৃদ্ধিঃ ভূমি
নিয়ে জালিয়াতি, অবৈধ দখল, ও মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা বাংলাদেশে একটি
বড় সমস্যা। ভূমি উন্নয়ন করের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো অনেকাংশে প্রতিরোধ
করা যায়। কর পরিশোধ করতে হলে খতিয়ান ও দাগ নম্বর অনুযায়ী জমির রেকর্ড
হালনাগাদ করতে হয়, যা অনিয়ম ও জালিয়াতি প্রতিরোধে সহায়ক। কর পরিশোধ
না করা থাকলে, সরকার জমি পরিত্যক্ত বা অবৈধ দখলে আছে কিনা তা শনাক্ত করতে
পারে। জমি বিক্রয় বা হস্তান্তরের সময় ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ
বাধ্যতামূলক হওয়ায়, প্রতারণা ও জাল দলিল তৈরি রোধ করা সম্ভব হয়।
৪. স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তাঃ ভূমি উন্নয়ন
কর শুধুমাত্র জাতীয় রাজস্বের জন্যই নয়, স্থানীয় পর্যায়েও এর
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ইউনিয়ন ও পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্পে রাস্তা,
ব্রিজ, পানির সংযোগ, সেচ ব্যবস্থা, ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে এই কর
থেকে অর্থ ব্যয় করা হয়। কৃষকদের জন্য সেচ, রাসায়নিক সার ও আধুনিক
প্রযুক্তির সহায়তা প্রদান করা হয়। নগর পরিকল্পনা ও জনসেবামূলক কাজের
জন্য এই করের অর্থ কাজে লাগে।
৫. ভূমির বণ্টন ও ন্যায়সঙ্গত কর কাঠামো প্রতিষ্ঠাঃ ভূমি উন্নয়ন
কর ভূমির ধরণ ও মালিকানার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়, যা সামাজিক
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।বাংলাদেশ সরকার কৃষিজমির ওপর কম
হারে কর ধার্য করে, যাতে কৃষকদের উপর বাড়তি চাপ না পড়ে। শহর বা
বাণিজ্যিক এলাকায় বেশি কর নির্ধারণ করা হয়, যাতে শহরের জমির উপর
অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না হয়। অবৈধভাবে জমি দখল করে রাখা ব্যক্তিদের ওপর
কঠোর কর আরোপ করা হয়, যাতে তারা এই জমি সরকারের কাছে ফেরত দেয় বা
ন্যায়সঙ্গত ব্যবহারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে।
৬. ভূমি সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করাঃ ভূমি উন্নয়ন করের
মাধ্যমে সরকার ভূমির টেকসই ব্যবহার ও সংরক্ষণে নজরদারি করতে পারে।
পরিকল্পিত নগরায়নের জন্য আবাসিক ও বাণিজ্যিক জমির কর আলাদাভাবে নির্ধারণ
করা হয়। কৃষিজমি যাতে আবাসিক বা শিল্প এলাকায় পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত
করতে ভূমি উন্নয়ন করের মাধ্যমে প্রভাবিত করা হয়। বনভূমি বা জলাভূমির
অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার রোধ করতে বিশেষ হারে কর আরোপ করা হয়।
৭. সরকার ও জনগণের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাঃ ভূমি
উন্নয়ন কর একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মাধ্যমে আদায় করা হয়, যা সরকার ও
জনগণের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। বর্তমানে
অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, যাতে দুর্নীতি
হ্রাস পায়। ভূমি ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায় এবং সরকারি
কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়। যারা নিয়মিত কর পরিশোধ করেন,
তারা সরকারি বিভিন্ন সুবিধা যেমন জমির নামজারি, দলিল হস্তান্তর, ব্যাংক
ঋণ সুবিধা সহজে পেতে পারেন।
ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করলে কি হবে
ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করলে জরিমানা, সুদ, মালিকানা জটিলতা, ব্যাংক
ঋণ জটিলতা এবং আইনি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ
করা প্রতিটি জমির মালিকের জন্য বাধ্যতামূলক। যদি নির্ধারিত সময়ে কর
পরিশোধ করা না হয়, তাহলে আর্থিক, প্রশাসনিক, এবং আইনি বিভিন্ন সমস্যা
সৃষ্টি হতে পারে। দীর্ঘ সময় কর পরিশোধ না করলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিতে
পারে, এমনকি জমি বাজেয়াপ্ত করারও সুযোগ থাকে।
১. বিলম্ব ফি, জরিমানা ও সুদ যুক্ত হবেঃ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের
নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হলে মূল করের সঙ্গে অতিরিক্ত সুদ ও জরিমানা যোগ
হতে থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর না দিলে সরকার দেরি হওয়ার কারণে
জরিমানা ধার্য করতে পারে। প্রতি বছর জমা না দিলে সুদের হার বাড়তে থাকে,
যা পরবর্তীতে পরিশোধ করতে গেলে মূল টাকার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। যদি
এক বছরের কর বকেয়া থাকে, তাহলে পরবর্তী বছরের করের সাথে সেটিও পরিশোধ
করতে হয়।
২. জমির মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা হতে পারেঃ ভূমি উন্নয়ন কর
পরিশোধ করলে সরকারী রেকর্ডে মালিকানা নিশ্চিত হয়। যদি কর পরিশোধ না করা
হয়, তাহলে জমির মালিকানা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। কোনো
জমি মালিক যদি তার জমির কর পরিশোধ না করেন, তাহলে তিনি জমির প্রকৃত মালিক
কিনা, তা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। জমির কর না দিলে জমির দখলদারি বা
মালিকানার দাবির ক্ষেত্রে দুর্বলতা তৈরি হয়। দীর্ঘদিন কর পরিশোধ না হলে
সরকার এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করতে পারে এবং বাজেয়াপ্ত করতে
পারে। ভবিষ্যতে জমি বিক্রয়, হস্তান্তর বা দখল সংক্রান্ত মামলায় জয়ী
হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
৩. জমির নামজারি, দলিল রেজিস্ট্রেশন ও হস্তান্তর বন্ধ হয়ে যেতে
পারেঃ
বাংলাদেশে জমির হস্তান্তর বা দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ভূমি উন্নয়ন কর
পরিশোধের দাখিলা দেখানো বাধ্যতামূলক। যদি কোনো মালিক কর পরিশোধ না করেন,
তাহলে, নতুন মালিকের নামে জমির নামজারি (খতিয়ান পরিবর্তন) করতে গেলে কর
পরিশোধের দাখিলা দেখাতে হয়। কর বকেয়া থাকলে নামজারি বন্ধ থাকবে। জমি
বিক্রি বা হস্তান্তরের জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে কর পরিশোধের দাখিলা
বাধ্যতামূলক। কেউ মারা গেলে উত্তরাধিকারদের নামে জমি হস্তান্তর করতে হলে
করের কাগজ প্রয়োজন হয়।
৪. সরকারের আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকেঃ সরকারি নিয়ম
অনুযায়ী, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করলে সরকার আইনি ব্যবস্থা নিতে
পারে। ভূমি অফিস বা প্রশাসন ওই জমির ওপর কোনো লেনদেন বা উন্নয়নমূলক
কাজের অনুমতি স্থগিত করতে পারে। দীর্ঘদিন কর না দিলে সরকার আইন অনুসারে
জমিটি বাজেয়াপ্ত করে নিলামে তুলতে পারে। যদি জমির মালিক কর পরিশোধে
অবহেলা করেন, তাহলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। এক্ষেত্রে
জমির মালিকদের আইনগত জটিলতায় পড়তে হয় এবং জমির উপর সম্পূর্ণ অধিকার
হারানোর ঝুঁকি থাকে।
৫. ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য সরকারি সুবিধা বন্ধ হতে পারেঃ ভূমি
উন্নয়ন কর পরিশোধ না করলে সংশ্লিষ্ট জমির উপর কোনো ব্যাংক ঋণ নেওয়া
সম্ভব হয় না এবং বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হতে পারেন।
কোনো ব্যক্তি যদি তার জমির উপর ঋণ নিতে চান, তবে তাকে কর পরিশোধের দাখিলা
দেখাতে হবে। কৃষি, অবকাঠামো উন্নয়ন, বা সেচ প্রকল্পের জন্য কোনো ভর্তুকি
পেতে হলে জমির কর আপ-টু-ডেট থাকা বাধ্যতামূলক। যদি পৌরসভা বা ইউনিয়ন
পর্যায়ে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়, তবে বকেয়া কর থাকলে সে
সুবিধা নাও পেতে পারেন।
৬. জরুরি জমি সংক্রান্ত সেবাগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারেঃ কর পরিশোধ
না করলে ভূমি অফিস থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে
পড়ে, যেমন- জমির রেকর্ড হালনাগাদ করতে পারবেন না, নতুন দাগ বা খতিয়ান
সংশোধন করা কঠিন হবে, কোর্টের মামলা বা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ভূমি
উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা বাধ্যতামূলক।
যে কারণে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা জরুরী
ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা অত্যান্ত জরুরী। ভূমি উন্নয়ন কর বাংলাদেশ
সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব উৎস। এটি পরিশোধ করা প্রতিটি জমির মালিকের
দায়িত্ব। যদি ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করা হয়, তাহলে জমির মালিকরা নানা
ধরনের আইনি, আর্থিক, প্রশাসনিক, এবং সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
নিচে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের বিস্তারিত কারণ ও সুবিধাগুলো ব্যাখ্যা করা
হলো।
১. জমির মালিকানা আইনগতভাবে সুরক্ষিত হয়ঃ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ
করলে সরকারের রেকর্ডে জমির মালিকানা স্বীকৃত হয়। কর পরিশোধের দাখিলা (রশিদ)
জমির প্রকৃত মালিকানা প্রমাণের অন্যতম প্রধান দলিল। জমি সংক্রান্ত কোনো আইনি
জটিলতা বা বিরোধ হলে কর পরিশোধের তথ্য মালিকের পক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে
কাজ করে।উদাহরণঃ কেউ যদি আপনার জমির মালিকানা নিয়ে দাবি করে, তাহলে ভূমি কর
পরিশোধের দাখিলা দেখিয়ে আপনি নিজের মালিকানা প্রমাণ করতে পারবেন।
২. জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন ও নামজারি সহজ হয়ঃ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ
না থাকলে নামজারি (Mutation) করা যায় না। জমি বিক্রয় বা হস্তান্তরের জন্য
দলিল রেজিস্ট্রেশন করার সময় কর পরিশোধের দাখিলা বাধ্যতামূলক।
উত্তরাধিকারসূত্রে (Inheritance) জমি পেতে গেলে কর পরিশোধের তথ্য জমা দিতে
হয়। উদাহরণস্বরুপঃ যদি আপনি জমি বিক্রি করতে চান, তাহলে রেজিস্ট্রি অফিস
আপনাকে ভূমি কর পরিশোধের দাখিলা জমা দিতে বলবে। দাখিলা না থাকলে জমির দলিল
রেজিস্ট্রেশন আটকে যেতে পারে।
৩. অতিরিক্ত সুদ ও জরিমানার ঝামেলা এড়ানো যায়ঃ নির্ধারিত সময়ে কর
পরিশোধ না করলে জরিমানা ও সুদ যুক্ত হতে থাকে। কর বকেয়া থাকলে পরবর্তী
বছরগুলোর করের সাথে সেটি যোগ হয়ে বড় অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করতে হয়। দীর্ঘদিন
কর বকেয়া থাকলে তা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং জমি মালিকদের উপর আর্থিক
চাপ সৃষ্টি হয়। উদাহরণ যেমন- যদি প্রতি বছর ১,০০০ টাকা ভূমি কর দিতে হয় এবং
আপনি ১০ বছর কর না দেন, তাহলে জরিমানা ও সুদের কারণে সেটি কয়েক গুণ বেড়ে
যেতে পারে।
৪. সরকারের আইনি ব্যবস্থা থেকে মুক্ত থাকা যায়ঃ ভূমি উন্নয়ন কর
পরিশোধ না করলে সরকার জমির উপর নিষেধাজ্ঞা (Attachment) আরোপ করতে পারে।
দীর্ঘদিন কর বকেয়া থাকলে সরকার জমি বাজেয়াপ্ত বা নিলামে বিক্রি করতে পারে।
কর পরিশোধ করলে এসব আইনি জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। বাংলাদেশে কিছু
ক্ষেত্রে সরকার জমির কর পরিশোধ না থাকলে সেই জমিকে পরিত্যক্ত বা সরকারি
মালিকানাধীন বলে ঘোষণা করতে পারে।
৫. ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য সরকারি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়ঃ জমির
উপর ব্যাংক ঋণ নিতে গেলে ভূমি কর পরিশোধের দাখিলা দেখাতে হয়। কৃষি ঋণ,
হাউজিং লোন, বা অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পাওয়ার জন্য ভূমি কর পরিশোধ করা
আবশ্যক। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, কৃষি ভর্তুকি বা প্রণোদনার ক্ষেত্রে জমির কর
আপ-টু-ডেট থাকতে হয়। উদাহরণস্বরুপ-আপনি যদি ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ নিতে চান,
তাহলে আপনাকে ভূমি কর পরিশোধের কাগজ দেখাতে হবে।
৬. জমির উন্নয়ন ও পরিকল্পনা সহজ হয়ঃ বাড়ি নির্মাণ, শিল্প-কারখানা
স্থাপন, বা বাণিজ্যিক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা
জরুরি। পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন বা জেলা প্রশাসন থেকে প্লট উন্নয়ন,
বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগ, পানি সরবরাহ অনুমোদন পেতে হলে কর পরিশোধের তথ্য জমা
দিতে হয়। উদাহরণঃ আপনি যদি আপনার জমিতে বাড়ি করতে চান, তাহলে বিদ্যুৎ ও
পানির সংযোগের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিস কর পরিশোধের দাখিলা চাইবে।
৭. জমির রেকর্ড হালনাগাদ রাখা সহজ হয়ঃ জমির খতিয়ান বা মালিকানা
সংক্রান্ত কোনো তথ্য সংশোধন করতে হলে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা দেখাতে
হয়। নতুন দাগ বা খতিয়ান সংশোধন করার জন্যও কর আপ-টু-ডেট থাকা আবশ্যক।
কোর্টের মামলা বা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা
গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজ করে। উদাহরণঃ যদি জমির মালিকানার কোনো বিরোধ
সৃষ্টি হয়, তাহলে ভূমি কর পরিশোধের রেকর্ড একজন বৈধ মালিক হিসেবে আপনার
অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে।
ভূমি উন্নয়ন করের পরিমাণ
ভূমি উন্নয়ন করের পরিমাণ জানার জন্য স্থানীয় ভূমি অফিস বা পৌরসভায় যোগাযোগ
করা উচিত, কারণ বিভিন্ন এলাকার জন্য এটি আলাদা হতে পারে। ভূমি উন্নয়ন করের
পরিমাণ নির্ধারণে কয়েকটি মূল বিষয় রয়েছে যা জমির স্থান, আকার, শ্রেণী, বাজার
মূল্য এবং স্থানীয় প্রশাসনিক নিয়মের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। এই করের
পরিমাণ এবং হার নির্ধারণে নিচে বিস্তারিত কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো।
১. জমির শ্রেণীঃ ভূমি উন্নয়ন করের পরিমাণ জমির শ্রেণী অনুযায়ী
নির্ধারিত হয়। দেশে বিভিন্ন ধরনের জমি রয়েছে এবং তাদের জন্য ভূমি উন্নয়ন করের
হার আলাদা হয়ে থাকে।
প্রধান জমির শ্রেণীঃ
- কৃষি জমিঃ সাধারণত কৃষি জমি (যেমন কৃষি উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা জমি) কম করের আওতায় আসে। তবে এটি স্থায়ীভাবে চাষাবাদে ব্যবহৃত হলে করের পরিমাণ কম হতে পারে।
- আবাসিক জমিঃ আবাসিক এলাকার জন্য করের পরিমাণ সাধারনত মাঝারি হয়ে থাকে। এর মধ্যে কিছু সাইট উন্নয়নের জন্য বা উন্নত আবাসিক এলাকায় বেশি কর নির্ধারণ হতে পারে।
- বাণিজ্যিক জমিঃ বাণিজ্যিক জমি (ব্যবসা বা শিল্প স্থাপনের জন্য ব্যবহৃত জমি) বেশি মূল্যবান হওয়ায় এর উপর ভূমি উন্নয়ন করের হার বেশি হতে পারে।
- শিল্প এলাকাঃ শিল্প এলাকায় ব্যবহৃত জমির করও সাধারনত বেশি হতে পারে, কারণ এখানে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বা শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়, যা স্থানীয় উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য অতিরিক্ত কর প্রযোজ্য হতে পারে।
২. জমির অবস্থানঃ ভূমির অবস্থানও ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণের একটি
গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। শহরের কেন্দ্রস্থলে জমির মূল্য এবং জমির উন্নয়ন
সম্ভাবনা বেশি থাকে, যার ফলে করের পরিমাণও বেশি হয়।
নগর ও গ্রামীণ এলাকায় পার্থক্যঃ
- নগর এলাকাঃ শহুরে বা নগর এলাকার জন্য জমির মূল্য বেশি হয়, এবং জমির উপর করের পরিমাণও অধিক হতে পারে। শহরে জমির উচ্চ মূল্য, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ব্যবসায়িক সুযোগের কারণে করের পরিমাণ বেশি হতে পারে।
- গ্রামীণ এলাকাঃ গ্রামীণ এলাকায় জমির মূল্য তুলনামূলক কম থাকে এবং সেখানে ভূমি উন্নয়ন করের পরিমাণও কম হতে পারে।
৩. জমির আকারঃ জমির আকার ও ক্ষেত্রফল (যেমন একর বা শতাংশে) ভূমি
উন্নয়ন কর নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত জমির আকার বড় হলে করের পরিমাণও
বেশি হয়।
উদাহরণঃ
- ১ একর জমির জন্য নির্ধারিত করের পরিমাণ ১০ শতাংশ জমির জন্য নির্ধারিত করের তুলনায় অনেক বেশি হতে পারে।
- একই ধরনের জমি যদি বড় বা ছোট আকারে থাকে, তবে করের পরিমাণও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে পরিবর্তিত হবে।
৪. জমির বাজার মূল্যঃ ভূমির বাজার মূল্য ভূমি উন্নয়ন করের পরিমাণ
নির্ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জমির মূল্য অনুযায়ী করের পরিমাণ
পরিবর্তিত হতে পারে, কারণ উচ্চমূল্যের জমির উপর করের পরিমাণও বেশি হতে
থাকে।
মূল্যায়ন ও করের পরিমাণঃ
- উচ্চ মূল্যযুক্ত জমিঃ যদি জমির বাজার মূল্য বেশি হয়, তবে ভূমি উন্নয়ন করও বেশি হতে পারে।
- কম মূল্যযুক্ত জমিঃ কম মূল্যবান জমির জন্য ভূমি উন্নয়ন কর কম হতে পারে।
৫. স্থানীয় প্রশাসনিক নিয়মাবলীঃ বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার, যেমন
পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন এবং উপজেলা প্রশাসন, ভূমি উন্নয়ন করের হার এবং নিয়ম
নির্ধারণ করে। এগুলি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আলাদা হতে পারে।
পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের প্রভাবঃ
- পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন সাধারণত স্থানীয় এলাকার ভূমি উন্নয়ন করের হার নির্ধারণ করে থাকে।
- স্থানীয় সরকার বিভিন্ন অঞ্চল অনুযায়ী করের হার এবং নীতিমালা প্রণয়ন করে, যা জায়গার খরচ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও চাহিদার উপর নির্ভর করে।
৬. সরকারী ভূমি করের হারঃ সরকার প্রতি বছর বা নির্দিষ্ট সময় পর ভূমি
উন্নয়ন করের হার নির্ধারণ করে এবং এটি বিভিন্ন বছরের জন্য পরিবর্তিত হতে
পারে। এটি সাধারণত জেলা প্রশাসন বা উপজেলা ভূমি অফিস দ্বারা নির্ধারিত হয়।
প্রধান হারের পরিমাণঃ
- ভূমির শ্রেণী, অবস্থান এবং বাজারমূল্যের ভিত্তিতে আবাসিক, বাণিজ্যিক, কৃষি বা শিল্প জমির জন্য নির্ধারিত করের হার আলাদা হয়ে থাকে।
- সরকারের নির্দেশিত হার অনুযায়ী এসব পরিমাণ প্রতি বছর বা প্রতি দুই বছরে পরিবর্তিত হতে পারে।
৭. বিশেষ জমি বা প্রকল্পের জন্য করঃ কিছু বিশেষ ধরনের জমি বা উন্নয়ন
প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ করা হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্লট উন্নয়ন বা
কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত কর দিতে হতে পারে।
- কৃষি জমিঃ প্রতি একর জমির জন্য কর হতে পারে ৫০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকা।
- আবাসিক জমিঃ প্রতি একর জমির জন্য ১,০০০ টাকা থেকে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
- বাণিজ্যিক জমিঃ প্রতি একর জমির জন্য ৩,০০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে।
- শিল্প জমিঃ এটি সাধারণত আরও বেশি, যা ৫,০০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে।
ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া হলে করণীয়
ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া হলে আপনাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা পরিশোধ করা উচিত,
না হলে জমির মালিকানা নিয়ে আইনি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। প্রথমে বকেয়া
পরিমাণ নিশ্চিত করে পরিশোধ করুন এবং জমির বাজেয়াপ্তি বা নিলাম থেকে বাঁচতে
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিশোধ করুন। ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া হলে করণীয়
সম্পর্কিত আরও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো, যাতে আপনি সঠিক পদক্ষেপ নিতে
পারেন এবং সমস্যাগুলি সহজে সমাধান করতে পারেন।
১. বকেয়া কর পরিশোধের জন্য প্রথম পদক্ষেপঃ ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া হয়ে
থাকলে প্রথমেই আপনাকে স্থানীয় ভূমি অফিস বা পৌরসভা থেকে বকেয়া করের সঠিক
পরিমাণ জানাতে হবে। এটি নিশ্চিত করার জন্য আপনি যে অফিসে জমির হিসাব বা
রেজিস্ট্রেশন করা আছে, সেখানে গিয়ে বা অনলাইনে চেক করে বকেয়া করের পরিমাণ
জানা উচিত।
কীভাবে যাচাই করবেনঃ
- ভূমি অফিস/পৌরসভায় সরাসরি যোগাযোগঃ আপনার জমির রেজিস্ট্রেশন নং দিয়ে, ভূমি অফিসে গিয়ে বকেয়া করের হিসাব চেক করুন।
- অনলাইনে যাচাইঃ কিছু সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন করের বকেয়া যাচাইয়ের সুযোগ দেয়। সেখানে আপনার জমির তথ্য দিয়ে, বকেয়া করের পরিমাণ জানা সম্ভব।
২. বকেয়া করের পরিমাণ যাচাই করার পর পরিশোধঃ একবার বকেয়া পরিমাণ
নিশ্চিত হলে, তা দ্রুত পরিশোধ করা গুরুত্বপূর্ণ। জরিমানা ও সুদ কিছু সময়
পরিশোধের পরেই যোগ হতে থাকে, তাই সময়মতো পরিশোধ করলে অতিরিক্ত খরচ এড়ানো
যাবে।
কর পরিশোধের দুটি প্রধান উপায়ঃ
- নগদ পরিশোধঃ আপনার স্থানীয় ভূমি অফিস বা পৌরসভায় গিয়ে ক্যাশে পরিশোধ করতে পারেন।
- ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানঃ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য অনেক সময় ব্যাংক বা মসৃণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমোদিত থাকে, সেখানে গিয়েও পরিশোধ করা সম্ভব।
৩. সুদ ও জরিমানা থেকে বাঁচতেঃ যদি আপনি দীর্ঘ সময় ধরে কর পরিশোধ না
করেন, তাহলে এতে সুদ এবং জরিমানা যোগ হতে পারে। এই অতিরিক্ত খরচ বাঁচাতে
প্রথমে এখনই পরিশোধ করুন।
তবে কিছু পরামর্শ রয়েছেঃ
- আংশিক পরিশোধঃ অনেক সময় স্থানীয় প্রশাসন আংশিক পরিশোধের সুযোগ দেয়, যাতে বকেয়া পরিমাণ কমিয়ে আনা যায় এবং সুদ ও জরিমানা কিছুটা মওকুফ করা যেতে পারে।
- বিশেষ মওকুফের আবেদনঃ আপনি যদি আর্থিকভাবে অসুবিধায় পড়েন, তবে কিছু প্রশাসনিক সুবিধা বা আবেদনপত্রের মাধ্যমে সুদ ও জরিমানা মওকুফের আবেদন করতে পারেন।
৪. আইনি জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে পরিশোধ করুনঃ যদি ভূমি উন্নয়ন কর
বকেয়া থাকে এবং আপনি তা দীর্ঘকাল পরিশোধ না করেন, তবে কর্তৃপক্ষ আপনার জমি
বাজেয়াপ্ত বা নিলাম করতে পারে। এটি আইনি জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে এবং জমি
হারানোর সম্ভাবনা থাকে।
আইনি জটিলতা এড়াতেঃ
- প্রথমেই পরিশোধ করুনঃ যত দ্রুত সম্ভব বকেয়া কর পরিশোধ করুন, যাতে জমির উপর কোনো আইনি সমস্যা বা নিষেধাজ্ঞা না আসে।
- বাজেয়াপ্তি ও নিলাম এড়ানোঃ জমি নিলাম হয়ে গেলে, সেটি আর আপনার হাতে থাকবে না এবং টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
৫. জমির উপর জরুরি আইনি ব্যবস্থাঃ ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া হলে জমির
মালিকানা বা উন্নয়ন কার্যক্রমের ওপর সরকারি কর্তৃপক্ষ কিছু আইনি ব্যবস্থা
নিতে পারে, যেমনঃ
- জমির বাজেয়াপ্তিঃ যদি কর দীর্ঘদিন বকেয়া থাকে, তবে আপনার জমি বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।
- পৃথক নিষেধাজ্ঞাঃ ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া থাকা অবস্থায় জমির ওপর কোন নতুন প্রকল্প বা অনুমোদন নেয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
- পুনরায় আবেদন ও সমস্যা সমাধানঃ আপনি যদি পরবর্তীতে জমি বিক্রয় বা প্রকল্প শুরু করতে চান, তবে জমির উপর জমা দেয়া সমস্ত কর পরিশোধ করা থাকা জরুরি। এছাড়া, কোন নতুন উন্নয়ন কাজ করতে গেলে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমির স্বীকৃতি নেয়া প্রয়োজন।
৬. পরবর্তী বছরের জন্য প্রস্তুতিঃ যেহেতু ভূমি উন্নয়ন কর প্রতি বছর
নির্ধারিত হয়, তাই পরবর্তী বছরের জন্য এটি সময়মতো পরিশোধ করা উচিত।
অন্যথায়, আপনি আবার একই সমস্যায় পড়তে পারেন।
ভূমি উন্নয়ন করের নির্ধারিত সময়ঃ
- দাখিলা সংগ্রহঃ পরবর্তী বছরের ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য দাখিলা বা রশিদ সংগ্রহ করে রাখুন। এটি পরবর্তীতে জমি বিক্রয় বা অন্য কোনও কাজের জন্য দরকার হতে পারে।
- এককালীন পরিশোধের সুবিধাঃ অনেক সময় এককালীন পরিশোধে অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যায়, যেমন সুদ বা জরিমানা মওকুফ বা হ্রাস।
৭. স্থানীয় প্রশাসনিক সুবিধা ও সুবিধা প্রাপ্তিঃ বকেয়া কর পরিশোধ
না করলে সরকারি বা উন্নয়ন সুবিধা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে। অনেক সরকারী
প্রকল্প বা ঋণ সুবিধার জন্য ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ প্রয়োজন হয়।
সুবিধার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেঃ
- সরকারি ঋণঃ যদি আপনি ভূমির ওপর সরকারি ঋণ বা কোনো অর্থনৈতিক সুবিধা পেতে চান, তবে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা প্রয়োজন।
- প্রকল্পের অনুমোদনঃ উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়ার জন্য জমির পরিস্কার অবস্থায় থাকা জরুরি।
অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ সম্পর্কে শেষকথা
ভূমি উন্নয়ন কর একটি চলমান প্রক্রিয়া যা প্রতি বছর প্রদান করতে হয়। আর এটি
আপনার জমির মালিকানা প্রমাণ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। তাই বলবো অবহেলা এবং
বিলম্ব না করে আপনার ভূমি উন্নয়ন করতে আপনি নিজেই প্রতিবছর সংগ্রহ করে রাখুন।
এতে করে আপনিও সরকারকে কর প্রদান করলেন এবং তার বিনিময়ে আপনার ভুমিটি সুরক্ষিত
থাকছে। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করলে মালিকানা সুরক্ষা, জরিমানা ও আইনি সমস্যা
এড়ানো, ব্যাংক ঋণ গ্রহণ, সরকারি সুযোগ পাওয়া, এবং স্থানীয় উন্নয়নে অবদান
রাখা সম্ভব।
ভূমি উন্নয়ন কর একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারী কর, যা জমির মালিকদের তাদের
মালিকানাধীন জমির জন্য দিতে হয়। এটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং অবকাঠামো
উন্নয়নের জন্য একটি প্রয়োজনীয় উৎস হিসেবে কাজ করে। কর পরিশোধের মাধ্যমে জমির
মালিকরা সরকারি সেবা এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে অবদান রাখেন, যা সামগ্রিকভাবে
দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। ভূমি উন্নয়ন কর সঠিক সময়ে পরিশোধ করা জমির
মালিকদের দায়িত্ব, যা আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ ও উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো সফলভাবে
বাস্তবায়নে সহায়ক।
জমির আইনি বৈধতা বজায় রাখতে এবং ভবিষ্যৎ সমস্যা এড়াতে নিয়মিত কর পরিশোধ করা
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর পরিশোধের পর, জমির মালিকের উচিত রশিদ সংগ্রহ করা, যা
পরিশোধের প্রমাণপত্র হিসেবে কাজ করে। এটি ভবিষ্যতে জমি সংক্রান্ত কোনো বিরোধ বা
আইনি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সঠিকভাবে রশিদ সংগ্রহ ও
সংরক্ষণ জমির মালিককে ভবিষ্যতের জটিলতা থেকে রক্ষা করে এবং আইনি সুরক্ষা প্রদান
করে। আশা করছি, অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url