পোস্ট সূচিপত্রঃ জিংক বি ট্যাবলেট এর উপকারিতা
- জিংক বি ট্যাবলেটের গঠন ও উপাদান
- জিংক বি ট্যাবলেট এর উপকারিতা
- জিংক বি ট্যাবলেট এর কাজ
- জিংক সমৃদ্ধ খাবাররের তালিকা
- জিংক বি ট্যাবলেট খাওয়ার সঠিক নিয়ম
- জিংক বি ট্যাবলেট খাওয়ার সঠিক সময়
- জিংকের অভাব হলে যেসব সমস্যা হতে পারে
- জিংকের অভাব পূরণে করণীয়
- জিংক বি ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- শেষকথাঃ জিংক বি ট্যাবলেট এর উপকারিতা
জিংক বি ট্যাবলেটের গঠন ও উপাদান
জিংক বি ট্যাবলেটের মূল উপাদান জিংক এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। জিংক বি
ট্যাবলেট শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় কাজ যেমন ইমিউন সিস্টেম
শক্তিশালী করা, কোষ পুনর্গঠন, পেশি শক্তি বৃদ্ধি, হজমশক্তি উন্নত করা, চুল ও
ত্বকের যত্ন ইত্যাদিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি শরীরের সার্বিক সুস্থতার
জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি সাপ্লিমেন্ট। জিংক বি সাধারণত নিম্নলিখিত
উপাদানগুলো নিয়ে তৈরি হয়ঃ
১. জিংকঃ জিংক হলো একটি অত্যাবশ্যকীয় খনিজ যা শরীরের বহু শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য। এটি ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করা, কোষ পুনর্গঠন, পেশি শক্তিশালী করা, হজমশক্তি উন্নত করা, এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। জিংক শরীরের সার্বিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি সাপ্লিমেন্ট। জিংক শরীরের ৩০০টিরও বেশি এনজাইমের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে।
আরও পড়ুনঃ ভিটামিন ই-ক্যাপ এর উপকারিতা
২. ভিটামিন বি কমপ্লেক্সঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স হলো আটটি (৮) বি-ভিটামিনের একটি সমন্বিত গ্রুপ, যা শরীরের শক্তি উৎপাদন, হজম প্রক্রিয়া, স্নায়ু কার্যকারিতা, রক্ত উৎপাদন, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন বি গ্রুপের প্রতিটি উপাদান শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভূমিকা রাখে। এগুলো শরীরের শক্তি উৎপাদন, হজমশক্তি বৃদ্ধি, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নতকরণ এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
ভিটামিন | পরিমাণ (প্রায়) | প্রধান কার্যকারিতা |
---|---|---|
ভিটামিন বি১ (থিয়ামিন) | ১.১-১.৫ মিলিগ্রাম | কার্বোহাইড্রেটকে শক্তিতে রূপান্তর করে, স্নায়ুবিক কার্যকারিতা উন্নত করে |
ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন) | ১.৩-১.৭ মিলিগ্রাম | এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে |
ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন) | ১৪-১৮ মিলিগ্রাম | হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, রক্তসঞ্চালন উন্নত করে |
ভিটামিন বি৫ (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড) | ৫-৭ মিলিগ্রাম | হরমোন উৎপাদনে সহায়ক, মানসিক চাপ কমায় |
ভিটামিন বি৬ (পিরিডক্সিন) | ১.৩-২ মিলিগ্রাম | হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে, স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নত করে |
ভিটামিন বি৭ (বায়োটিন) | ৩০-১০০ মাইক্রোগ্রাম | চুল, ত্বক ও নখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে, বিপাকক্রিয়া উন্নত করে |
ভিটামিন বি৯ (ফোলিক অ্যাসিড) | ৪০০ মাইক্রোগ্রাম | লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন করে, গর্ভবতী নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ |
ভিটামিন বি১২ (কোবালামিন) | ২.৪-৬ মাইক্রোগ্রাম | স্নায়ুর স্বাস্থ্য ভালো রাখে, শক্তি উৎপাদন ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে |
জিংক বি ট্যাবলেট এর উপকারিতা
জিংক বি ট্যাবলেট এর উপকারিতা রয়েছে প্রচুর যা মুখে বলে শেষ করা যাবে না। জিংক
বি ট্যাবলেট মূলত জিংক এবং ভিটামিন বি এর সমন্বয়ে তৈরি একটি স্বাস্থ্য
পরিপূরক, যা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিচালনায় সহায়তা করে। জিংক একটি
অত্যাবশ্যকীয় খনিজ পদার্থ, যা মানবদেহের কোষের বৃদ্ধি, ইমিউন সিস্টেম
শক্তিশালী করা, ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার জন্য
গুরুত্বপূর্ণ। নিচে জিংক বি ট্যাবলেটের উপকারিতা গুলো উল্লেখ করা হলো।
১. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করেঃ জিংক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে এবং ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা
করে। জিংক বি ট্যাবলেট, যা প্রধানত জিংক (Zinc) ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স
সমৃদ্ধ, এটি ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এটি
শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধি, প্রদাহ কমানো, ক্ষত দ্রুত সারানো এবং ভাইরাস ও
ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। নিয়মিত গ্রহণ করলে শরীরের
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়।
২. সর্দি-কাশি ও ফ্লু প্রতিরোধ করেঃ জিংক শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা
উন্নত করে, যা সাধারণ ঠান্ডা, ফ্লু এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
সর্দি-কাশি ও ফ্লু সাধারণত ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে হয়, যা শরীরের ইমিউন
সিস্টেম দুর্বল হলে সহজেই আক্রমণ করতে পারে। জিংক বি ট্যাবলেট, যা জিংক
(Zinc) এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ। এটি ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা কমিয়ে,
ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, শ্লেষ্মা দূর করে এবং প্রদাহ কমিয়ে দ্রুত
আরোগ্য লাভে সাহায্য করে। নিয়মিত গ্রহণ করলে ঠান্ডা-কাশির সমস্যা কমবে এবং
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
৩. ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করেঃ ত্বক আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ
এবং এটি সুস্থ রাখার জন্য জিংক ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। জিংক একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা
ব্রণের অন্যতম কারণ প্রোপিওনিব্যাকটেরিয়াম অ্যাকনিস, ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে
সাহায্য করে। জিংক বি ট্যাবলেট ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে,
বিশেষ করে ব্রণ কমানো, দাগ দূর করা, ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা এবং ত্বকের
বার্ধক্য প্রতিরোধে কার্যকরী। এটি নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে, যা ক্ষত দ্রুত
সারিয়ে তোলে।
৪. চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়ঃ সুস্থ ও লম্বা চুলের জন্য জিংক (Zinc) এবং
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চুলের গোঁড়ায় পুষ্টি সরবরাহ, চুল
পড়া কমানো এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করার জন্য জিংক বি ট্যাবলেট কার্যকর
ভূমিকা পালন করে। জিংক বি ট্যাবলেট চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে, চুল পড়া
কমাতে ও নতুন চুল গজাতে অত্যন্ত কার্যকর। এটি চুলের ফলিকলকে মজবুত করে, খুশকি
কমায়, চুলের বৃদ্ধির হার বাড়ায় এবং চুলকে স্বাস্থ্যবান ও উজ্জ্বল করে তোলে।
নিয়মিত গ্রহণ করলে চুল আরও ঘন, লম্বা ও শক্তিশালী হবে।
৫. নখ মজবুত ও স্বাস্থ্যকর রাখেঃ নখের সুস্থতা আমাদের সামগ্রিক
স্বাস্থ্যের প্রতিচ্ছবি। যদি নখ ভঙ্গুর, দুর্বল বা ফাটা হয়, তাহলে এটি জিংক ও
ভিটামিন বি-এর অভাবের লক্ষণ হতে পারে। জিংক বি ট্যাবলেট নখের গঠন শক্তিশালী
করতে, দ্রুত বৃদ্ধি করতে এবং ফাটা বা ভাঙা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। জিংক
নখের প্রধান উপাদান কেরাটিন (Keratin) উৎপাদন বাড়ায়, যা নখকে শক্তিশালী করে।
এটি নখকে বাঁকা, ফাটা বা পাতলা হওয়া থেকে রক্ষা করে। জিংক নতুন কোষ গঠনে
সাহায্য করে, যা নখের শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়।
৬. দ্রুত ক্ষত সারাতে সাহায্য করেঃ জিংক বি ট্যাবলেট দ্রুত ক্ষত সারাতে অত্যন্ত কার্যকর। শরীরে কোনো কাটাছেঁড়া, ক্ষত বা দগদগে ঘা হলে তা দ্রুত সারানোর জন্য জিংক
(Zinc) ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জিংক বি
ট্যাবলেট ক্ষতস্থানে নতুন টিস্যু তৈরি, প্রদাহ কমানো এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ
করে দ্রুত আরোগ্য লাভে সাহায্য করে। জিংকের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি
(Anti-inflammatory) বৈশিষ্ট্য আছে, যা প্রদাহ কমিয়ে ক্ষতস্থানে ব্যথা ও
জ্বালা-পোড়া কমায়। এটি ক্ষতস্থানের ফোলা ও লালচে ভাব দূর করে।
৭. হাড় শক্তিশালী করেঃ শক্তিশালী হাড়ের জন্য জিংক (Zinc) ও ভিটামিন বি
কমপ্লেক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জিংক বি ট্যাবলেট হাড়ের ঘনত্ব
বাড়ায়, ক্যালসিয়ামের শোষণ উন্নত করে এবং হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে
অস্টিওপোরোসিস (হাড় ক্ষয় রোগ) প্রতিরোধে এটি কার্যকর। বয়স বাড়ার সাথে সাথে
হাড় দুর্বল হয়ে যায়, বিশেষত অস্টিওপোরোসিস (Osteoporosis) হলে। জিংক হাড়ের
ক্ষয় রোধ করে এবং হাড়ের মজবুত কাঠামো বজায় রাখে। যাদের হাড় সহজে ভেঙে যায় বা
দুর্বল, তাদের জন্য জিংক বি ট্যাবলেট উপকারী।
৮. রক্ত সঞ্চালন উন্নত করেঃ শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিকভাবে কাজ করার
জন্য সঠিক রক্তসঞ্চালন (Blood Circulation) অত্যন্ত জরুরি। জিংক বি ট্যাবলেট
রক্তসঞ্চালন উন্নত করতে কার্যকরী। এটি রক্তনালী মজবুত করে, রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে রাখে, অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায় এবং হৃদযন্ত্রের সুস্থতা নিশ্চিত
করে। জিংক রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, ফলে রক্ত চলাচল বাধাহীনভাবে হতে
পারে। এটি ধমনী ও শিরার ক্ষতি প্রতিরোধ করে, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে
সহায়ক।নিয়মিত গ্রহণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে ও সারা শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত
চলাচল নিশ্চিত হবে।
৯. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ জিংক বি ট্যাবলেট ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর।ডায়াবেটিস (বিশেষত টাইপ ২ ডায়াবেটিস) একটি
দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যেখানে শরীর ইনসুলিন উৎপাদন বা ব্যবহার করতে সক্ষম হয় না,
ফলে রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা বেড়ে যায়। জিংক ইনসুলিন সংবেদনশীলতা
বাড়িয়ে শরীরের গ্লুকোজ গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা রক্তে শর্করা
নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত গ্রহণ
করলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে এবং স্বাস্থ্য আরও ভালো থাকবে।
১০. হজমশক্তি বৃদ্ধি করেঃ হজমশক্তি সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরের
পুষ্টির শোষণ কমে যায়, ফলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। জিংক (Zinc)
ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স হজম প্রক্রিয়াকে সমর্থন দেয়, পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে
এবং হজমের সমস্যা যেমন অম্বল, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য
করে। জিংক পিএইচ স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে, যা পাকস্থলীর এসিডিক
পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হজমকে সহজ করে। নিয়মিত গ্রহণ করলে হজমশক্তি
বৃদ্ধি পাবে এবং পাচন প্রক্রিয়া সহজ হবে।
১১. হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ হৃদযন্ত্রের সুস্থতা শরীরের
সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জিংক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, যা হৃদযন্ত্রের চারপাশে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হার্টের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি
করে। জিংক (Zinc) ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স মিশ্রিত ট্যাবলেটের নিয়মিত সেবন
হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে। এই উপাদানগুলো হৃদরোগের
ঝুঁকি কমাতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং হৃদপেশির সুস্থতা বজায় রাখতে
সাহায্য করে।
১২. রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করেঃ রক্তস্বল্পতা (Anemia) হচ্ছে এমন একটি
শারীরিক অবস্থা যেখানে রক্তে লোহিত রক্তকণিকার (RBC) সংখ্যা বা হিমোগ্লোবিনের
মাত্রা কমে যায়, যার ফলে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায় এবং ক্লান্তি,
দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। জিংক লোহিত রক্তকণিকার (RBC)
উৎপাদন বৃদ্ধি করে, যা রক্তের শ্বেত ও লোহিত কণিকার সংখ্যা বাড়ায়। এটি
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে
সহায়ক। জিংক (Zinc) এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য
করে, কারণ এগুলো রক্ত তৈরির প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে এবং রক্তের উপাদানগুলির
কার্যকারিতা বাড়ায়।
১৩. লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করেঃ লিভার শরীরের অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা পাচন, বিষক্রিয়া নিরসন, পুষ্টি শোষণ, এবং বিপাকীয়
প্রক্রিয়া সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে। জিংক (Zinc) এবং ভিটামিন বি
কমপ্লেক্স লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক। এই উপাদানগুলো লিভারের
কোষের সুস্থতা বজায় রাখে, লিভারের পুষ্টি প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং লিভারের
বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। জিংক একটি শক্তিশালী
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা লিভারের কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
এটি লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থেকে রক্ষা করে, বিশেষ করে লিভার সিরোসিস বা
অন্যান্য লিভার সম্পর্কিত রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
১৪. দাঁতের ক্ষয় রোধ করেঃ দাঁতের ক্ষয় হচ্ছে এমন একটি সমস্যা, যেখানে
দাঁতের এনামেল (enamel) ক্ষয় হয়ে যায়, যার ফলে দাঁতে গহ্বর (cavity) তৈরি হয়।
জিংক দাঁতের এনামেল শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, যা দাঁতকে বিষাক্ত
ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। এটি দাঁতের ফ্লোরাইড
শোষণ বাড়ায়, যা দাঁতের এনামেলকে শক্তিশালী করে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধে সহায়ক
ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত সেবন করলে দাঁতের ক্ষয় কমবে এবং দাঁতের গহ্বর ও
অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি কমে যাবে।
১৫. মূত্রনালী সংক্রমণ প্রতিরোধ করেঃ জিংক বি ট্যাবলেট মূত্রনালী
সংক্রমণ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী। মূত্রনালী সংক্রমণ (UTI) হলো মূত্রাশয়,
মূত্রনালী, বা কিডনির ইনফেকশন, যা সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে ঘটে।
জিংক একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা মূত্রনালীতে ক্ষতিকর
ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। এটি ই. কোলাই (E. Coli) বা অন্যান্য
সংক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে, যা মূত্রনালী সংক্রমণের মূল
কারণ। এটি মূত্রনালীর স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে সহায়তা
করে, এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে।
১৬. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ স্মৃতিশক্তি আমাদের মস্তিষ্কের
গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী, যা তথ্য সংরক্ষণ, মনে রাখা, এবং পরবর্তী সময়ে প্রয়োগের
সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে। জিংক মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধি এবং পুনর্নিমাণে সাহায্য
করে, যা স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তা শক্তি উন্নত করতে সহায়ক। মস্তিষ্কে ডোপামিন এবং
সেরোটোনিন সহ অন্যান্য নিউরোট্রান্সমিটার এর ভারসাম্য বজায় রাখে, যা মস্তিষ্কের
কার্যক্ষমতা এবং স্মৃতির প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এটি স্মৃতি, মনোযোগ এবং
জ্ঞান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। নিয়মিত সেবন করলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি হবে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
১৭. স্ট্রেস ও ডিপ্রেশন কমায়ঃ স্ট্রেস এবং ডিপ্রেশন (অবসাদ) বর্তমানে
অনেকের জীবনের একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যাগুলো মস্তিষ্কের বিভিন্ন
অংশে পরিবর্তন ঘটায়, যা মনের অবস্থাকে প্রভাবিত করে। জিংক মস্তিষ্কে ডোপামিন
এবং সেরোটোনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে, যা স্ট্রেসের ফলে মস্তিষ্কে ক্ষতি
হতে রোধ করে। জিংক (Zinc) এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স মিশ্রিত ট্যাবলেট এই সমস্যা
দূর করতে সহায়ক হতে পারে, কারণ এই উপাদানগুলো মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি,
হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা, এবং মনোযোগ ও মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করে।
১৮. ঘুমের মান উন্নত করেঃ ঘুমের মান আমাদের শারীরিক এবং মানসিক
স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত এবং মানসম্মত ঘুম না হলে
আমাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপের উপর প্রভাব পড়ে, যার ফলে মনোযোগ, মেজাজ এবং
শারীরিক শক্তি কমে যেতে পারে। এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি, মেলাটোনিন
এবং সেরোটোনিনের উৎপাদন বাড়ায়, এবং মানসিক চাপ কমায়, যা ঘুমের মান উন্নত করতে
সহায়ক। জিংক ও ভিটামিন বি৬ মেলাটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ঘুমের সমস্যা দূর
করে।
১৯. মনোযোগ ও ধৈর্য বৃদ্ধি করেঃ জিংক বি ট্যাবলেট মনোযোগ ও ধৈর্য
বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এটি নিউরোট্রান্সমিটার ভারসাম্য, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা,
এবং মনোযোগের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এটি
খুব উপকারী, কারণ এটি মনোযোগ ও একাগ্রতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। জিংক
মস্তিষ্কের কোষের কার্যক্ষমতা এবং চিন্তার প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে, যার ফলে
ধৈর্য ধরে কাজ করা সহজ হয় এবং মনোযোগের ক্ষমতা বাড়ে। এটি ডোপামিন এবং
সেরোটোনিন এর মতো রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ সমন্বয় করে, যা মনোযোগ এবং মেজাজ
নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।
২০. স্নায়ুর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করেঃ জিংক বি ট্যাবলেট স্নায়ু
সিস্টেমের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত কার্যকরী। এটি নিউরোট্রান্সমিটার
ভারসাম্য, স্নায়ু সিগন্যালিং, এবং নিউরনের সুরক্ষা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
জিংক মস্তিষ্কের নিউরনের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, যা স্নায়ু সংকেত প্রেরণ এবং
অন্য অংশে তথ্য সরবরাহ করতে সাহায্য করে। এটি নিউরোট্রান্সমিটারস (যেমন
ডোপামিন এবং সেরোটোনিন) এর উৎপাদনে সহায়তা করে, যা স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম
এবং স্নায়ু সিগন্যালিংকে সুসংগত করে। নিয়মিত সেবন করলে স্নায়ুতন্ত্রের
কার্যক্ষমতা উন্নত হবে এবং মানসিক সুস্থতা বজায় থাকবে।
২১. শক্তি বৃদ্ধি করেঃ জিংক শরীরের শক্তি উৎপাদন বাড়ায় এবং ক্লান্তি
দূর করতে সাহায্য করে। এটি এনার্জি মেটাবলিজম প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে এবং
আমাদের শরীরের সেলগুলিকে কার্যকরী শক্তির উৎস প্রদান করে। জিংক শরীরের
প্রাকৃতিক শক্তির উৎসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, বিশেষ করে যে সকল মৌলিক
রাসায়নিক প্রক্রিয়া শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে (যেমন অ্যাডেনোসিন ট্রাইফসফেট
বা ATP উৎপাদন)। এটি এনার্জি উৎপাদন, মেটাবলিক প্রক্রিয়া, এবং শক্তির সঞ্চয়
উন্নত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত সেবন করলে আপনার শরীরে শক্তির স্তর বৃদ্ধি
পাবে, এবং আপনি বেশি শক্তি নিয়ে দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।
২২. পুরুষের টেস্টোস্টেরন মাত্রা ঠিক রাখেঃ জিংক শুক্রাণুর গুণগত মান
বৃদ্ধি করে এবং বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে সহায়তা করে। টেস্টোস্টেরন হল পুরুষদের
একটি প্রধান হরমোন, যা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। জিংক
স্নায়ু সিস্টেমের কার্যকারিতা বজায় রাখে এবং স্ট্রেস হরমোন কোর্টিসল কমাতে
সাহায্য করে। কোর্টিসল বৃদ্ধি টেস্টোস্টেরন মাত্রা কমাতে পারে, তাই জিংক
কোর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা টেস্টোস্টেরন স্তর বজায় রাখে।
এর মাত্রা সঠিকভাবে বজায় রাখা পুরুষদের স্বাস্থ্য, শক্তি, মাংসপেশী বৃদ্ধি,
এবং যৌন ক্ষমতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।
২৩. নারীদের হরমোন নিয়ন্ত্রণ করেঃ জিংক বি ট্যাবলেট নারীদের হরমোন
নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী। পিরিয়ড অনিয়মিত হলে বা মেনোপজের সমস্যা থাকলে জিংক
সাহায্য করতে পারে। জিংক শরীরে হরমোনের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য
করে। এটি লিউটিনাইজিং হরমোন (LH) এবং ফোলিকুলার স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH) এর
উৎপাদনে সহায়তা করে, যা নারীদের মাসিক চক্র এবং প্রজনন স্বাস্থ্যে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জিংক ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের
ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যার ফলে মাসিক সমস্যা, পিএমএস (PMS) এবং
হরমোনাল অস্বাভাবিকতা কমে। নিয়মিত সেবন করলে নারীরা পিএমএস, হরমোনাল
অস্বাভাবিকতা, এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন, এবং
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন উপভোগ করতে পারবেন।
২৪. বাচ্চাদের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করেঃ জিংক বি ট্যাবলেট বাচ্চাদের
শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে কার্যকরী। এটি শারীরিক শক্তি,
এনার্জি উৎপাদন, ইমিউন সিস্টেম, এবং মস্তিষ্কের কার্যক্রম উন্নত করতে সাহায্য
করে। জিংক শরীরের প্রোটিন সংশ্লেষণ এবং এনজাইম কার্যকলাপ সমর্থন করে, যা
শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি কোষ বিভাজন এবং
নতুন কোষের গঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে, যা শারীরিক বৃদ্ধির জন্য
অপরিহার্য। জিংক বাচ্চাদের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, যা
তাদের বিকাশের পথে বাধা হতে পারে এমন অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে। শক্তিশালী
ইমিউন সিস্টেম শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সহায়ক।
২৫. পেশির গঠন ও শক্তি বৃদ্ধি করেঃ জিংক পেশির গঠন ও পুনরুদ্ধারে
সাহায্য করে, বিশেষ করে অ্যাথলেট ও ব্যায়ামকারীদের জন্য উপকারী। জিংক শরীরে
প্রোটিন সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে, যা পেশির বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। পেশির সঠিক গঠন এবং শক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রোটিনের উৎপাদন এবং
কার্যকারিতা অপরিহার্য। জিংক শরীরে গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম এর কার্যকারিতা
সমর্থন করে, যা শক্তির উৎপাদন এবং পেশির সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি
এনার্জি মেটাবলিজম উন্নত করে, যা পেশির শক্তি বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। জিংক কোষের
বিভাজন এবং নতুন কোষের গঠন ত্বরান্বিত করে, যা পেশির উন্নতি এবং বৃদ্ধি
নিশ্চিত করতে সহায়ক। এটি পেশির মেরামত এবং পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
২৬. শরীরের কোষ পুনর্গঠন করেঃ জিংক বি ট্যাবলেট কোষ পুনর্গঠন এবং
শরীরের মেরামত প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে কার্যকরী। জিংক কোষের বিভাজন
প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে, যা শরীরের নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে যা
কোষের মেরামত এবং পুনর্গঠনের জন্য অপরিহার্য। এটি ডিএনএ সংশ্লেষণ এবং প্রোটিন
সংশ্লেষণ সমর্থন করে, যা কোষের সঠিক গঠন এবং ফাংশন বজায় রাখতে সহায়ক। এটি
কোষের বিভাজন, প্রোটিন সংশ্লেষণ, শক্তি উৎপাদন, এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী
করতে সহায়তা করে। নিয়মিত সেবন করলে শরীরের কোষগুলি দ্রুত পুনর্গঠিত হবে, যার
ফলে শরীরের স্বাস্থ্য এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আশা করছি, জিংক বি
ট্যাবলেট এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
জিংক বি ট্যাবলেট এর কাজ
জিংক বি ট্যাবলেট হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ জিংক ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ
সাপ্লিমেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, চুল ও ত্বকের যত্ন,
স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নতকরণ, শক্তি বৃদ্ধি, হরমোন ব্যালেন্স বজায় রাখা এবং
হাড় ও পেশির শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জিংক মানব দেহের
জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান যা শরীরের প্রায় তিনশত টির বেশি এনজাইমের
ক্রিয়াকলাপ সম্পন্ন করে থাকে।
এসব উৎসেচক মানব দেহের বিপাক ক্রিয়া থেকে শুরু করে অসংখ্য কার্য সম্পাদন করে।
জিংক বি ট্যাবলেট সেবনের ফলে আমাদের শরীরে জিংক ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অভাব
দূর হয়। শরীরের বিভিন্ন ধরনের বায়োলজিক্যাল ফাংশনের সাহায্য করে জিংক বি।
জিংক বি ট্যাবলেট খাওয়ার ফলে মানব দেহে এন্টিবডি তৈরি হয়। প্রাপ্ত বয়স্কদের
ক্ষেত্রে জিংক বি ক্ষুধা মন্দা দূর করে খাবারে স্বাদ ও ঘ্রাণ গ্রহণের ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে।
শিশুদের জন্য জিংক বি ট্যাবলেট ও সিরাপ দুটোই কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধে জিংক বি বিশেষ ভুমিকা পালন করে। জিংক বি ট্যাবলেট
খাওয়ার ফলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দূর করার পাশাপাশি ত্বকের প্রয়োজনীয়
পুষ্টি উপাদান নিশ্চিত করে থাকে। এছাড়াও জিংক বি হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
খাবারের প্রতি রুচি বাড়িয়ে দেয়। মোট কথা জিংক বি ট্যাবলেট খাওয়ার ফলে রোগ
প্রতিরোধে ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ফলে শরীর সব দিক থেকে সুস্থ ও সবল থাকে।
জিংক সমৃদ্ধ খাবাররের তালিকা
জিংক সমৃদ্ধ খাবাররের তালিকা সম্পর্কে আর্টিকেলের এই অংশে আলোচনা করবো। জিংক
একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, যা শরীরের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, যেমন
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করা, ক্ষত দ্রুত সারানো, এবং কোষের বৃদ্ধি ও পুনর্গঠন।
জিংক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এই খনিজের অভাব পূরণ করা সম্ভব। যে সমস্ত
খাবার গুলোতে জিংক রয়েছে তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. মাংসঃ যারা জিংকের ঘাটতিতে ভুগছেন, তাদের জন্য মাংস একটি ভালো উৎস। বিশেষ করে লাল মাংস (গরু ও খাসির মাংস) এবং মুরগির মাংস শরীরের জন্য
গুরুত্বপূর্ণ পরিমাণে জিংক সরবরাহ করে।এতে প্রোটিনের পাশাপাশি জিংক, আয়রন এবং
ভিটামিন বি-১২ সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও রয়েছে। বিশেষ করে লাল মাংসে (গরু
বা খাসির মাংস) জিংক পরিমাণ বেশি থাকে।
- গরুর মাংসঃ গরুর মাংসে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে জিংক পাওয়া যায়, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেম ও কোষের পুনর্গঠনে সহায়ক। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে প্রায় ৪.৮ – ৭ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে এবং ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।
- মুরগির মাংসঃ মুরগির মাংসে জিংক কম পরিমাণে থাকে, তবে এটি সহজলভ্য এবং পুষ্টিকর খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম মুরগির মাংসে ১.৫ – ২.৫ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি হালকা ও সহজে হজমযোগ্য, যা শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য উপকারী।
- খাসির মাংসঃ খাসির মাংসে অধিক পরিমাণে জিংক থাকে, যা শরীরের জন্য উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম খাসির মাংসে প্রায় ৪.৫ – ৬.২ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি পেশি গঠনে সাহায্য করে এবং শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে।
২. সীফুডঃ সীফুড, সমুদ্রজাত খাবার হলো জিংকের অন্যতম উৎকৃষ্ট
উৎস। বিশেষ করে ঝিনুক (Oysters), চিংড়ি (Shrimp), কাঁকড়া (Crab), এবং বিভিন্ন
সামুদ্রিক মাছ শরীরের জন্য উচ্চমাত্রার জিংক সরবরাহ করে। এবং মাছ জিংক-এর
অন্যতম প্রধান উৎস। সীফুড জিংকের একটি দুর্দান্ত উৎস এবং এটি সুষম
খাদ্যতালিকায় রাখা হলে শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে। বিশেষ করে যারা ত্বকের
উজ্জ্বলতা, ইমিউন সিস্টেমের শক্তি, ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে চান,
তাদের জন্য সীফুড অত্যন্ত উপকারী।
- ঝিনুকঃ ঝিনুক পৃথিবীর অন্যতম সেরা জিংক উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম ঝিনুকে ২৫-৫০ মিগ্রা জিংক থাকে, যা দৈনিক চাহিদার কয়েকগুণ বেশি। এটি ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে এবং হরমোন ব্যালান্স বজায় রাখে। পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ঝিনুক বিশেষ ভূমিকা রাখে, কারণ এটি টেস্টোস্টেরন উৎপাদন বাড়ায়।
- কাঁকড়াঃ প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁকড়ায় প্রায় ৬-৭ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। কাঁকড়ার মাংস হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী এবং এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।
- চিংড়িঃ প্রতি ১০০ গ্রাম চিংড়িতে ২-৩ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। চিংড়ি হালকা ও সহজে হজমযোগ্য, তাই অনেকের জন্য নিরাপদ খাদ্য।
- সামুদ্রিক মাছঃ স্যালমন (Salmon), টুনা (Tuna), ম্যাকারেল (Mackerel), সার্ডিন (Sardine), এবং হেরিং (Herring) এ জিংক পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম সামুদ্রিক মাছ গড়ে ০.৫-২ মিগ্রা জিংক সরবরাহ করে। এই মাছগুলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও প্রোটিন সমৃদ্ধ, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
৩. বাদাম ও বীজঃ বাদাম ও বীজ জিংকের ভালো উৎস, যা বিভিন্ন শারীরিক
কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। এগুলো ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী
করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে। এগুলো
সহজলভ্য, পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সহজ।
এছাড়া এগুলো হেলদি ফ্যাট, প্রোটিন, এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ।
- কুমড়ার বীজঃ কুমড়ো বীজে প্রচুর পরিমাণে জিংক রয়েছে, যা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।প্রতি ১০০ গ্রামে ৭-৮ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে এবং প্রোস্টেট স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। স্মৃতিশক্তি উন্নত করে এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
- তিলের বীজঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ৫-৬ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং হাড় মজবুত রাখে। স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নত করে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
- কাজু বাদামঃ কাজু বাদামতে জিংক থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রতি ১০০ গ্রামে ৫.৮ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি শক্তি বৃদ্ধি করে এবং হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং স্ট্রেস ও ডিপ্রেশন কমায়।
- আমন্ড বা বাদামঃ বাদামে জিংক রয়েছে এবং এটি হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। প্রতি ১০০ গ্রামে ৩-৪ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং চুল ও নখ মজবুত করে। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- আখরোটঃ আখরোটে জিংক ছাড়াও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের জন্য উপকারী।প্রতি ১০০ গ্রামে ৩-৪ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা কোষ পুনর্গঠনে সহায়ক।
- চিনাবাদামঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ২-৩ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি পেশির গঠনে সহায়ক এবং শরীরে শক্তি জোগায়। হজমশক্তি বাড়ায় এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- সূর্যমুখীর বীজঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ৫ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং শরীরের ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে। স্ট্রেস কমায় এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
৪. দানা ও শস্যঃ শস্য এবং দানায় জিংক পরিমাণে ভালো থাকে এবং এগুলো
শরীরের শক্তি এবং পুষ্টি সরবরাহ করে। দানা ও শস্য হলো জিংকের অন্যতম
প্রাকৃতিক উৎস যা সহজলভ্য এবং প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সহজেই যুক্ত করা
যায়। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, পেশির গঠন মজবুত করে এবং
শরীরের সার্বিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে পূর্ণ
শস্যজাতীয় খাবার (whole grains) শরীরে জিংকের ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখে।
- গমঃ প্রচুর পরিমাণে জিংক সমৃদ্ধ গম ও গমের পণ্য যেমন ব্রেড, পাস্তা ইত্যাদিতেও জিংক পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম পূর্ণ শস্যের গমে ২.৮-৩.৫ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের সমস্যা কমায় এবং শরীরের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
- ওটসঃ Oats স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর শস্য ওটসের মধ্যে জিংক পাওয়া যায়, যা শরীরের জন্য উপকারী এবং হজমে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রাম ওটসে ৩-৪ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি হজমশক্তি বাড়ায় এবং শক্তি বৃদ্ধি করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে।
- চালঃ বাদামি চাল বেশি উপকারী বাদামি চাল (Brown Rice) প্রতি ১০০ গ্রামে ২ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি পেশির গঠন ও শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। হজম ক্ষমতা উন্নত করে এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।
- ভুট্টাঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ১.৫-২ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং হজমশক্তি উন্নত করে। শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- বার্লিঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ২-২.৫ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। স্নায়ুর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
- কুইনোয়াঃ প্রোটিন ও জিংক সমৃদ্ধ শস্য এটি একটি পূর্ণাঙ্গ শস্য, যা উচ্চমাত্রার প্রোটিন এবং জিংক সরবরাহ করে। প্রতি ১০০ গ্রামে ৩-৩.৫ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি চুল ও নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং শরীরের শক্তি বাড়ায়।
- বাজরাঃ বাজরা গ্লুটেনমুক্ত ও পুষ্টিকর দানা। প্রতি ১০০ গ্রামে ২.৫-৩ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে এবং হাড়ের গঠন মজবুত করে। শিশুদের বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
৫. ডাল ও শিমঃ ডাল ও শিম জিংক সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে অন্যতম, যেগুলো
সাধারণত সস্তা এবং পুষ্টিকর। ডাল ও শিম হলো উদ্ভিদভিত্তিক প্রোটিনের চমৎকার
উৎস, যা শরীরে জিংকের ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি শরীরের
সার্বিক সুস্থতা নিশ্চিত করে, পেশি ও হাড় শক্তিশালী করে এবং রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ায়। নিরামিষভোজীদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী, কারণ এতে প্রচুর
পরিমাণে জিংক, ফাইবার ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে।
- মসুর ডালঃ মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে জিংক রয়েছে, যা শরীরের কোষের পুনর্গঠনে সহায়তা করে। প্রতি ১০০ গ্রামে ৩-৫ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে এবং হজমশক্তি উন্নত করে। ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- মুগ ডালঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ২.৫-৩.৫ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের শক্তি বাড়ায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে।
- ছোলাঃ ছোলা উচ্চ জিংক ও প্রোটিন সমৃদ্ধ প্রতি ১০০ গ্রামে ৩-৪ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি হাড় মজবুত করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
- সয়াবিনঃ সয়াবিন উদ্ভিদ প্রোটিনের সেরা উৎস, প্রতি ১০০ গ্রামে ৪-৫ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি পেশির গঠনে সহায়ক এবং নারী-পুরুষের হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখে। স্ট্রেস কমাতে ও ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
- মটরশুঁটিঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ২-৩ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ও স্নায়ুর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
৬. দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যঃ দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য হলো জিংকের অন্যতম
সমৃদ্ধ উৎস। এগুলো শুধু ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের জন্যই নয়, বরং শরীরে জিংকের
ঘাটতি পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দুগ্ধজাত খাবার সহজেই হজম হয় এবং এতে
উপস্থিত জিংক শরীর দ্রুত শোষণ করতে পারে। দুধ এবং তার সাথে তৈরি বিভিন্ন
পণ্য, যেমন দই এবং পনিরেও কিছু পরিমাণে জিংক থাকে। এগুলো শিশু ও বড়দের
হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়তা করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের সার্বিক
সুস্থতা নিশ্চিত করে।
- দুধঃ দুধে প্রাকৃতিকভাবে জিংক রয়েছে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ মিলে ০.৪-০.৬ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে। শিশুদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং শক্তি বাড়ায়।
- দইঃ দইয়ে জিংক ছাড়াও প্রোবায়োটিক রয়েছে, যা পাচনশক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৬-০.৮ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে এবং হজমে সহায়তা করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়।
- ছানাঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ২.৫-৩ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি পেশির গঠন ও শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- চিজঃ চিজ উচ্চ জিংকযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য প্রতি ১০০ গ্রামে ৩.৫-৫ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি স্নায়ুর কার্যকারিতা বাড়ায় এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে। স্ট্রেস ও ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে।
- মাখনঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৪-০.৬ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি শরীরের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে। ত্বক মসৃণ রাখে ও শুষ্কতা দূর করে।
- গাওয়া ঘিঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৫-০.৭ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি শক্তি বাড়ায় এবং হাড়ের সংযোগস্থল মজবুত রাখে। হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
৭. শাকসবজিঃ শাকসবজি বেশ কিছু পরিমাণে জিংক সরবরাহ করে এবং শরীরের
জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়,
হজমশক্তি উন্নত করে, ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী এবং সার্বিক সুস্থতা নিশ্চিত
করে। যদিও প্রাণিজ উৎসের তুলনায় উদ্ভিদভিত্তিক উৎস থেকে জিংক শোষণের হার কম,
তবে নিয়মিত শাকসবজি খেলে এটি শরীরের জিংকের চাহিদা অনেকটাই পূরণ করতে পারে।
- পালংশাকঃ পালং শাকে জিংক ছাড়াও আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সি থাকে, যা শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৫-০.৮ মিগ্রা জিংক থাকে।এটি রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে এবং হাড় মজবুত রাখে এবং স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়।
- ব্রোকলিঃ ব্রকলি একটি সবুজ শাকসবজি, যা জিংক ছাড়াও ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৪-০.৬ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- মিষ্টি আলুঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৩-০.৫ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি শক্তি বাড়ায় এবং চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। হজমশক্তি উন্নত করে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- কুমড়াঃ কুমড়া উচ্চ জিংকযুক্ত একটি সবজি। প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৫-০.৭ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- বাঁধাকপিঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৩-০.৫ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখে এবং ত্বক সুন্দর করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- শালগমঃ শালগম পাতা জিংক এবং ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ, যা হাড়ের জন্য উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৪-০.৬ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হাড় মজবুত করে।শক্তি বাড়ায় ও ক্লান্তি দূর করে।
- গাজরঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৩-০.৫ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এবং ত্বক উজ্জ্বল করে। হজম শক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- লাল শাকঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৬-০.৮ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে। ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- করলাঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৪-০.৬ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হজমশক্তি বাড়ায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে।
৮. ফলমূলঃ ফলমূল হলো ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। যদিও শাকসবজি বা প্রাণিজ উৎসের তুলনায় ফলের
জিংকের পরিমাণ কম, তবে কিছু নির্দিষ্ট ফল নিয়মিত খেলে শরীরের জিংকের চাহিদা
অনেকটাই পূরণ হতে পারে। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমশক্তি
উন্নত করে, ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী এবং সার্বিক সুস্থতা নিশ্চিত করে।
- কলাঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ০.২-০.৩ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি শক্তি বাড়ায় এবং হজমশক্তি উন্নত করে। স্নায়ুর কার্যকারিতা ভালো রাখে এবং ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে।
- আপেলঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ০.১-০.২ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং হাড় মজবুত রাখে। হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।
- ডুমুরঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৪-০.৫ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। হজমশক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- আঙুরঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ০.১-০.৩ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং ত্বক সুস্থ রাখে। রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- ডালিমঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৩-০.৪ মিগ্রা জিংক থাকে।এটি রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে। ত্বক উজ্জ্বল করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- খেজুরঃ খেজুর হলো উচ্চ জিংকযুক্ত ফল, প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৫-০.৭ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি শক্তি বৃদ্ধি করে ও রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে। হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে।
- আমঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ০.২-০.৩ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি হজমশক্তি বাড়ায় ও ত্বকের জন্য উপকারী। শরীরে শক্তি যোগায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- আভোকাডোঃ অ্যাভোকাডো একটি পুষ্টিকর ফল, যা ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম সরবরাহ করে। এতে জিংকও রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৬-০.৮ মিগ্রা জিংক থাকে।এটি হৃদরোগ প্রতিরোধ করে ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- স্ট্রবেরিঃ প্রতি ১০০ গ্রামে ০.২-০.৩ মিগ্রা জিংক থাকে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখে। স্নায়ুর কার্যকারিতা বাড়ায় ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে।
৯. ডিমঃ ডিম হলো প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলে সমৃদ্ধ একটি অত্যন্ত
পুষ্টিকর খাদ্য। ডিমে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রোটিন এবং বেশ কিছু খনিজ উপাদান থাকে,
যার মধ্যে জিংকও রয়েছে। এটি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় জিংকের অন্যতম ভালো উৎস, যা
হাড়, ত্বক, চুল, স্নায়ু ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। প্রতি ১০০
গ্রাম ডিমে প্রায় ১.২-১.৫ মিগ্রা জিংক থাকে। ১টি বড় ডিমে (৫০ গ্রাম) প্রায়
০.৬-০.৮ মিগ্রা জিংক থাকে। ডিমের কুসুমে জিংকের পরিমাণ বেশি থাকে।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url