পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়-বিস্তারিত জেনে নিন

পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় এর সঠিক কারণ হয়তো অনেকেই জানেন না।আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যাদের প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে। কোনো কারণে কিংবা অতিরিক্ত রোদে কাজ করার কারণে জ্বালাপোড়া করে। এগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কিংবা রোগের কারণেও হতে পারে। 
পুরুষদের-প্রস্রাবের-রাস্তায় -জ্বালাপোড়া-হওয়ার-কারণ
তবে এই সমস্যাটি কিসের লক্ষণ অথবা পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় এটা কি জানেন?হয়তো অনেকেই জানেন না। তাই আপনাদের চিন্তা মাথায় রেখে আজকে আমি এই আর্টিকেলে প্রসাবে জ্বালাপোড়া কিসের লক্ষণ এবং প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে যাবেন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়

পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়

পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় তার অন্যতম কারণ মূত্রনালীর প্রদাহ। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে মূত্রনালীর সংক্রমণ হতে পারে। প্রস্রাব কিডনি থেকে মূত্রাশয়ের মাধ্যমে মূত্রনালীতে প্রবাহিত হয়। এই অঙ্গগুলোর যেকোনো একটি প্রদাহের কারণে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হয়। গরমের সময় এই রোগ অনেক বেশি হয়ে থাকে। তবে শীতকালে কমলেও কিন্তু কম হয় না। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়।
১. ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনঃ ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) ইউটিআই হলো মূত্রনালী, মূত্রথলি, কিডনি বা মূত্রপথে ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য জীবাণুর সংক্রমণ। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীর যেকোনো অংশে (মূত্রথলি, ইউরেথ্রা, ইউরেটার বা কিডনি) সংক্রমণ ঘটায়। এর কারণ প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার, এবং এতে ঘোলা প্রস্রাব, জ্বালাপোড়া, এবং কখনো রক্তাক্ত প্রস্রাব দেখা যেতে পারে। নারী এবং পুরুষদের উভয়েরই ইউটিআই হতে পারে, তবে নারীদের মধ্যে এটি বেশি হয়।

২. ইউরেথ্রাইটিসঃ ইউরেথ্রাইটিস হলো মূত্রনালীর প্রদাহ, জ্বালা এবং ব্যথার সৃষ্টি করে। এই অবস্থা সাধারণত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হয়। ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে প্রবেশ করলে মূত্রনালীর সংক্রমণ হয়। যখন সংক্রমণ মূত্রাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে বলা হয় সিস্টাইটিস।যখন এটি মূত্রনালীতে ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে ইউরেথ্রাইটিস বলে। ইউরেথ্রাইটিস এমন একটি অবস্থা যেখানে মূত্রনালীতে প্রদাহ হয়, এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে। ইউরেথ্রাইটিস প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা প্রস্রাবের ইচ্ছা বৃদ্ধি করে।

৩. ভেনেরিয়াল ডিসিজঃ ভেনেরিয়াল ডিজিজ যা যৌন সংক্রামক রোগ (STI) হিসেবে পরিচিত। এটি এমন রোগ যা সাধারণত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এক ব্যক্তির থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। এসব রোগের মধ্যে অনেকগুলো গুরুতর হতে পারে, যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়। কিছু STI সাধারণত বংশগতভাবে বা শরীরের অন্যান্য মাধ্যমেও ছড়াতে পারে, তবে বেশিরভাগ STI যৌন মিলনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যৌন সংক্রামক রোগ (যেমন গনোরিয়া, ক্ল্যামিডিয়া, হারপিস) মূত্রনালীতে সংক্রমণ ঘটিয়ে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করতে পারে। এতে একসাথে যৌনমিলন এবং প্রস্রাবে অস্বস্তি বাড়ে।

৪. ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার ও মূত্রনালীতে সংকোচনঃ পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় তার আরেকটি সমস্যা হলো ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার, মূত্রনালীতে সংকোচন, যার ফলে তুলনামূলক প্রস্রাব হয় না এবং প্রস্রাবের রাস্তা জ্বালাপোড়া করে। ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচারহলো মূত্রনালী (Urethra) বা প্রস্রাবের পথের সংকোচন বা সরু হয়ে যাওয়া। এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে ইউরেথ্রার মধ্যে চিহ্নিত কোনও বাধা তৈরি হয়, যা প্রস্রাবের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে। এটি পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়, তবে যদি কখনো হয়, তবে তা গুরুতর এবং চিকিৎসা জরুরি হতে পারে।

৫. গনোরিয়াঃ গনোরিয়া একটি যৌনবাহিত সংক্রমণ (STI), যা সাধারণত ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে দেখা যায়। এই সংক্রমণের একটি প্রধান লক্ষণ হল প্রস্রাবের সময় প্রদাহ। এছাড়াও, গনোরিয়ার কারণে পুরুষদের লিঙ্গ থেকে অনিয়মিত স্রাব এবং লিঙ্গের চারপাশে ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। গনোরিয়া সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসকরা সাধারণত একবার ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে সেফট্রিয়্যাক্সোন ওষুধ দিয়ে থাকেন।

৫. মূত্রনালীর সংক্রমণঃ মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI) মূত্রথলি, কিডনি বা মূত্রনালীতে হওয়া ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হতে পারে। তলপেটে ব্যথা, প্রস্রাবের সাথে রক্ত পড়া, প্রদাহ এই সংক্রমণের একটি সাধারণ লক্ষণ। এছাড়াও, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ এবং প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হতে পারে। UTI সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার ধরনের উপর নির্ভর করে চিকিৎসকরা উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন।

৬. সিস্টাইটিস বা মূত্রাশয়ের আস্তরণের প্রদাহঃ পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় তার আরেকটি কারণ হল সিস্টাইটিস বা মূত্রাশয়ের আস্তরণের প্রদাহ। ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস বেদনাদায়ক মূত্রাশয় সিন্ড্রোম নামে পরিচিত। এই ধরনের সিস্টাইটিসের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়াসহ মূত্রাশয় এবং শ্রোণী অঞ্চলে ব্যথা।

৭. অবস্ট্রাকটিভ ইউরোপ্যাথিঃ অবস্ট্রাকটিভ ইউরোপ্যাথি হল যখন আপনার প্রস্রাব কোন প্রকার বাধার কারণে আপনার মূত্রনালী, মূত্রাশয় বা মূত্রনালী দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না বা হয় আংশিক।কিডনি থেকে মূত্রাশয় প্রবাহিত হওয়ার পরিবর্তে প্রস্রাব কিডনির দিকে প্রবাহিত হয়।যখন ইউরেটার, মূত্রাশয় বা মূত্রনালী বাধাগ্রস্ত হয়, তখন প্রস্রাব কিডনিতে প্রবাহিত হয়, যার ফলে অবস্ট্রাকটিভ ইউরোপ্যাথি হয়।
 
৯. কিডনিতে পাথর থাকলেঃ মানবদেহের উপাদান ও খনিজ দিয়ে আমাদের শরীরের কয়েকটি অঙ্গে পাথর তৈরি হতে পারে,তার মধ্যে কিডনি অন্যতম। কিডনি ও মূত্রথলির পাথর আমাদের দেশে প্রায়ই দেখা যায়। কিডনিতে পাথর থাকলে আরামে প্রস্রাব করা কঠিন হয় যার ফলে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হয়।

১০. পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান না করাঃ প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার মূল কারণ হলো পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান না করা। পানি আমাদের দেহের বেশীর ভাগ রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে। অপর্যাপ্ত পানি দেহের নানাবিধ রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পর্যাপ্ত পানির অভাবে প্রস্রাবে জ্বলাপোড়া হয়। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সাধারণত তাদের মাঝেই দেখা দেয় যারা দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান করে না।

১১. ডায়াবেটিস থাকলেঃ ডায়াবেটিসের অন্যতম লক্ষণ হলো বারবার প্রস্রাব। এক্ষেত্রে টাইপ এবং টাইপ 2 এই দুই ধরনের ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেই লক্ষণটি দেখা দিতে পারে। মূলত ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের শরীরে উপস্থিত অতিরিক্ত গ্লুকোজ মুত্রের মাধ্যমে বাইরে বের হয়ে যায় ফলে বারবার প্রস্রাব পায়। এরকম সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে সুগার টেস্ট করে নিতে হবে।

১২. প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে সমস্যাঃ পুরুষদের যে তলপেট রয়েছে তার নিচের দিকে রয়েছে প্রস্টেট গ্ল্যান্ড। এই গ্ল্যান্ডে কিছু তরল তৈরি হয় যা ইজাকুলেশনের সময় বেরিয়ে আসে। যদি কোন কারনে এই অঙ্গটি আকারে বেড়ে যায় বা কোন কারনে টিউমার হয় তাহলে সেখানে ইউরিনারি সিস্টেমের ওপর চাপ পড়ে তখন বারবার প্রস্রাব পায়। শুধু তাই নয় পাশাপাশি জ্বালাপোড়াও করে।

প্রসাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়ার লক্ষণ সমূহ

প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া একটি অস্বস্তিকর উপসর্গ, যা সাধারণত ইউরিনারি ট্র্যাক্টের (মূত্রনালী, মূত্রথলি, কিডনি) কোনো সমস্যার লক্ষণ হয়ে থাকে। এটি ইউরিনারি ইনফেকশন (UTI), কিডনি স্টোন, যৌন সংক্রামক রোগ (STIs), অথবা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে হতে পারে। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা হলে খুব তাড়াতাড়ি প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার বিস্তারিত লক্ষণসমূহ নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ
১. প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা তীব্র অস্বস্তিঃ প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা তীব্র অস্বস্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ, যা প্রায়শই ইউরিনারি ট্র্যাক্টের (মূত্রনালী, মূত্রথলি, কিডনি) কোনো সমস্যা বা সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয়। এটি সাধারণত একা দেখা যায় না, বরং অন্যান্য উপসর্গের সঙ্গে মিলেও আসে। প্রস্রাব করার সময় মূত্রনালী বা মূত্রথলি অঞ্চলে তীব্র জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। এটি এক জায়গায় বা পুরো মূত্রনালীতেই হতে পারে।

২. ঘোলা বা গন্ধযুক্ত প্রস্রাবঃ ঘোলা বা গন্ধযুক্ত প্রস্রাব অনেক সময় শরীরের ভেতরের সমস্যার একটি লক্ষণ হতে পারে। এটি সাধারণত ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI), ডিহাইড্রেশন, বা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে। যদি প্রস্রাব ঘোলা বা অস্বাভাবিক গন্ধযুক্ত হয়, তাহলে এটি ইউটিআই বা অন্য কোনো ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। সংক্রমণের কারণে প্রস্রাবে পুঁজ বা ব্যাকটেরিয়া জমে প্রস্রাব ঘোলা দেখায় এবং দুর্গন্ধ হয়। কিডনিতে পাথর বা সংক্রমণ থাকলে প্রস্রাবে রক্ত, পুঁজ বা ক্যালসিয়ামের অবশিষ্টাংশ জমে ঘোলা ভাব দেখা দেয়।

৩. রক্তাক্ত প্রস্রাবঃ রক্তাক্ত প্রস্রাব মানে হলো প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি। এটি খুবই গুরুতর একটি লক্ষণ হতে পারে এবং একে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। রক্ত চোখে দেখা যেতে পারে অথবা শুধু পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে। কখনো কখনো ইউরিনারি ইনফেকশন বা মূত্রথলির পাথরের কারণে প্রস্রাবের মধ্যে রক্ত দেখা দিতে পারে। ইনফেকশনের কারণে ইউরিনারি লাইনে ক্ষত হয়ে রক্তপাত হতে পারে এই ক্ষেত্রে, প্রস্রাবের রঙ গোলাপী বা লাল হয়ে যেতে পারে।

৪. প্রস্রাবের পরও পূর্ণতার অনুভূতিঃ প্রস্রাবের পরও পূর্ণতার অনুভূতি একটি অস্বস্তিকর ও দুশ্চিন্তাজনক উপসর্গ হতে পারে। মনে হয় যেন প্রস্রাব পুরোপুরি শেষ হয়নি, বা আরও কিছু বাকি আছে অথচ চাপ দিলেও আর কিছু বের হয় না। এটি অনেক সময় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট, প্রোস্টেট, বা নারীদের ক্ষেত্রে ব্লাডারের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। সংক্রমণের কারণে মূত্রথলি পুরোপুরি খালি হয় না বা ভুল সংকেত দেয়। এটি মূত্রথলির প্রদাহ বা অস্বাভাবিক চাপের কারণে হতে পারে।

৫. বেশি প্রস্রাবের তাগিদ বা জরুরি প্রস্রাবঃ বেশি প্রস্রাবের তাগিদ বা জরুরি প্রস্রাব হলো এমন এক অনুভূতি, যেখানে হঠাৎ করে খুব তাড়াতাড়ি প্রস্রাব করতে ইচ্ছা হয় এবং চেপে রাখা কঠিন হয়ে যায়। কখনও কখনও সময়মতো টয়লেটে না পৌঁছানো পর্যন্ত প্রস্রাব বের হয়ে যেতে পারে। মূত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে ব্লাডার অতিসংবেদনশীল হয়ে পড়ে। ব্লাডারের পেশি অস্বাভাবিকভাবে সংকুচিত হয়ে হঠাৎ প্রস্রাবের তাগিদ তৈরি করে ও প্রস্রাবের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে ব্লাডার বারবার সংকেত পাঠায়। এটি পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে এবং এটা অনেক ভিন্ন ভিন্ন সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

৬. পেটের নিচে ব্যথা বা চাপঃ পেটের নিচে ব্যথা বা চাপ একটি সাধারণ লক্ষণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ, যা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ভিন্ন ভিন্ন কারণে হতে পারে। অনেক সময় এটি সাময়িক সমস্যার ইঙ্গিত দেয়, আবার কখনো গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণও হতে পারে। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) সংক্রমণের কারণে ব্লাডার ফুলে যায় বা প্রদাহ হয়, যার ফলে চাপ বা ব্যথা লাগে। এটি সিস্টাইটিস বা কিডনি স্টোনের লক্ষণ হতে পারে।

৭. অস্বাভাবিক অনুভূতি বা চুলকানিঃ অস্বাভাবিক অনুভূতি বা চুলকানি মূত্রনালী বা গোপনাঙ্গে হলে এটি অনেক সময় সংক্রমণ বা অ্যালার্জির ইঙ্গিত দেয়। এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে, এবং সাধারণত সংক্রমণ, হাইজিন, বা চামড়াজনিত কারণে হয়। মূত্রনালী বা মূত্রথলিতে অস্বাভাবিক চুলকানি, ঝিঁঝিঁ, বা ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। এটি ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) কারণেও হতে পারে।প্রস্রাবের পথে ইনফেকশন হলে জ্বালাপোড়া ও হালকা চুলকানি হতে পারে। যৌন সংক্রামক রোগ (STI) যেমন ক্ল্যামিডিয়া, গনোরিয়া, হার্পিস ইত্যাদি চুলকানির অন্যতম কারণ

৮. তীব্র তৃষ্ণা বা অতিরিক্ত পানি পান করার ইচ্ছাঃ তীব্র তৃষ্ণা বা অতিরিক্ত পানি পান করার ইচ্ছা যদি হঠাৎ শুরু হয় বা দীর্ঘদিন থাকে, তবে এটি শরীরের ভেতরে থাকা কিছু সমস্যার স্পষ্ট ইঙ্গিত হতে পারে। বিশেষ করে যখন এটি ঘন ঘন প্রস্রাব, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, বা শক্তি কমে যাওয়ার মতো উপসর্গের সঙ্গে দেখা দেয়। ডিহাইড্রেশন বা ইউরিনারি ইনফেকশনের কারণে শরীরের পানির চাহিদা বেড়ে যেতে পারে। শরীর যখন রক্তের অতিরিক্ত সুগার ইউরিনের মাধ্যমে বের করতে চায়, তখন অতিরিক্ত প্রস্রাব হয় এবং ফলে বেশি তৃষ্ণা লাগে।

পুরুষদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে করণীয়

১. প্রচুর পানি পান করাঃ প্রচুর পানি পান করা যে শুধু শরীরের সুস্থতা বজায় রাখে তা নয়, পানি পান করা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমাতে একটি খুবই কার্যকর এবং প্রথমিক পদক্ষেপ। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সাধারণত মূত্রনালী বা মূত্রথলির সংক্রমণ বা প্রদাহের কারণে হয়, এবং পানি পান করলে তা অনেকাংশে উপশম দেয়। পানি মূত্রনালী এবং মূত্রথলির মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু ধুয়ে ফেলে, যা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) থেকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন যাতে প্রস্রাব পাতলা হয় এবং ইনফেকশন ধুয়ে যায়।
২. নারকেল পানিঃ নারকেল পানি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন এবং ইউরিনারি ট্র্যাক্টের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে, যা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। নারকেল পানিতে প্রায় ৯৪% পানি থাকে, যা শরীরকে ভালভাবে হাইড্রেটেড রাখে। এর ফলে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট পরিষ্কার থাকে এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি কমে। নারকেল পানিতে কিছু প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান থাকে, যা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) থেকে জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। এতে প্রাকৃতিকভাবে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং সোডিয়াম সরবরাহ করে, যা শরীরের সঠিক ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখে এবং মূত্রনালীতে চাপ কমাতে সাহায্য করে।

৩. লেবুর রস দিয়ে পানি পানঃ লেবুর রস দিয়ে পানি পান করাও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমাতে অনেক উপকারী। লেবুর রস শরীরের pH স্তরকে ক্ষারীয় করে তোলে, যা ইউরিনারি সিস্টেমে অ্যাসিডিক পরিবেশ কমাতে সাহায্য করে এবং জ্বালাপোড়া কমায়। লেবুর রস শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়, যা ইউরিনারি ট্র্যাক্টকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। এতে থাকা ভিটামিন C এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ইউরিনারি সিস্টেমে ব্যাকটেরিয়া এবং ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়তা করে। লেবুর রস দিয়ে পানি পান করলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে, যা মূত্রনালী পরিষ্কার রাখতে এবং ইউরিনারি ট্র্যাক্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।

৪. শসার জুসঃ শসার জুস আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করতে পারে। শসা একটি প্রাকৃতিক ডিইউরেটিক (diuretic) এবং এতে রয়েছে প্রচুর পানি, যা ইউরিনারি সিস্টেমকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। শসায় প্রায় ৯৬% পানি থাকে, যা শরীরকে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করতে সহায়ক এবং প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করে, ইউরিনারি সিস্টেম পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। ফলে ইউরিনারি ইনফেকশনের ঝুঁকি কমে।

৫. কাঁচা তুলসী পাতাঃ কাঁচা তুলসী পাতা ব্যবহার করা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমাতে একটি অত্যন্ত কার্যকর প্রাকৃতিক পদ্ধতি। কাঁচা তুলসী পাতা ইউরিনারি ট্র্যাক্টের ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু ধ্বংস করতে সহায়ক। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ ইউরিনারি ইনফেকশন (UTI) থেকে জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।তুলসী পাতার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ইউরিনারি সিস্টেমের প্রদাহ কমায়, যা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, সিস্টাইটিস ইত্যাদি সমস্যায় উপকারী। তুলসী পাতায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান শরীর থেকে টক্সিন বের করে, যা ইউরিনারি সিস্টেম পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং সাধারণভাবে শরীরের সুস্থতা বজায় রাখে।

৬. মশলাযুক্ত খাবারঃ মশলাযুক্ত খাবার অনেকেরই পছন্দের খাবার, কিন্তু যখন আপনি প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) বা অন্যান্য ইউরিনারি সমস্যায় ভুগছেন, তখন মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। মশলাযুক্ত খাবারে মরিচ, আদা, রসুন, তেল ইত্যাদি থাকে, যা ইউরিনারি ট্র্যাক্টের শ্লেষ্মা বা মূত্রনালীর স্নায়ুতে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। এটি প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। মশলা ইউরিনারি ট্র্যাক্টে প্রদাহ বৃদ্ধি করতে পারে, বিশেষত যাদের পূর্বে ইউরিনারি ইনফেকশন বা সিস্টাইটিস হয়েছে, তাদের জন্য এটি আরও সমস্যা তৈরি করতে পারে।

৭. অ্যালকোহলঃ অ্যালকোহল শরীরকে ডিহাইড্রেট করে, যার ফলে ইউরিনারি সিস্টেম ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এতে ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যা ইনফেকশন বা জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। অ্যালকোহল মূত্রনালীর শ্লেষ্মা এবং ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ইরিটেশন সৃষ্টি করতে পারে, যা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ইউরিনারি সিস্টেমের প্রদাহ বৃদ্ধি করতে পারে। অ্যালকোহল শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির জন্য প্রযোজ্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। এটি ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ইনফেকশন সৃষ্টি করার সম্ভাবনা বাড়ায়, যা আরও বেশি জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।

প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়ার ঘরোয়া চিকিৎসা

প্রসাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়ার সমস্যা অত্যাধিক কষ্টকর ও বেদনাদায়ক। এই সমস্যা শুরু হলে অনেক ক্ষতিকর রোগের সৃষ্টি হতে পারে। যার কারনে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা দূর করার জন্য প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া চিকিৎসা করা প্রয়োজন। আর যদি অবস্থা অনেক খারাপের দিকে যায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন।আসুন জেনে নিই ছেলেদের প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা।

১. পর্যাপ্ত পানি পান করাঃ নিয়ম মেনে পানি পান না করলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া তৈরি হয়। পানির অভাবের কারণে শরীরে ডিহাইড্রেশন হয়। ডিহাইড্রেশনের ফলে প্রস্রাব জ্বালাপোড়া করে এবং বারবার প্রস্রাব হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার ফলে দেহ হাইড্রেট হয় যার কারণে এই সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। প্রতিদিন পরিমিত পরিমানে পানি পান করা প্রয়োজন। দিনে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ লিটার পানিপান করুন।

২. ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়াঃ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার শরীরের প্রদাহ দূর করে। যার কারনে ভিটামিন সি জাতীয় খাবারের ফলে প্রস্রাবের সংক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়াও ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাসের কারণে প্রস্রাবে বেশি পরিমাণ এসিডিটি হয়ে ওঠে যা ইনফেকশন হওয়া ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।

৩. সবুজ শাক-সবজি খাওয়াঃ প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া দূর করতে সবুজ শাক-সবজির অত্যান্ত উপকারী। শাক-সবজির মাঝে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা দেহের প্রয়োজনীয় পানির অভাব পূরণ করে। দৈনিক খাদ্য তালিকায় আমিষের পরিমাণ কমিয়ে শাক সবজির পরিমান বাড়ানো উচিত। তাছাড়া কিছুকিছু শাক সবজি দেহের শর্করার চাহিদাও মেটায়। তাই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক সবজি খেতে হবে।

৪. লেবুপানি পান করাঃ লেবুর রস মিশ্রিত পানি পান করা শরীরের জন্য ভালো। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যায় লেবুপানি পান করলে অনেকটা উপকার পাবেন। প্রতিদিন সকালে উঠে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। লেবুর রস কতটুকু খাবেন? এক চা চামচ মিশিয়ে নিলেই যথেষ্ট। এভাবে কয়েকদিন পান করলেই সমস্যা কমে আসবে। এর কারণ হলো লেবুর রসে আছে ভিটামিন সি। এটি সব ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করে। সেইসঙ্গে এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টেও ভরা।

৫. শসার জুস খেতে পারেনঃ প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমানোর আরেকটি কার্যকরী উপায় হতে পারে শসার জুস খাওয়া। শসায় আছে অনেক উপকারিতা। এটি শরীর ঠান্ডা রাখতে কাজ করে। শসার সালাদও খেতে পারেন। তবে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমাতে চাইলে শসার জুস তৈরি করে খাওয়া বেশি উপকারী। প্রথমে শসার জুস তৈরি করে তার সঙ্গে সামান্য মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এবার এই জুস পান করুন। এভাবে প্রতিদিন একবার খেলে সমস্যা দ্রুত দূর হবে।

৬. ডাবের পানি পান করুনঃ ডাবের পানি নানাভাবে আমাদের শরীরের উপকার করে থাকে। বিশেষ করে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে তা দূর করতে এটি খুব ভালো কাজ করে। ডাবের পানি পান করলে তার মাধ্যমে শরীরে অনেকটা ইলেক্ট্রোলাইট প্রবেশ করে। আমাদের শরীর ঠান্ডা রাখতে কাজ করে এই উপাদান। সেইসঙ্গে রাখে সুস্থও। তাই নিয়মিত ডাবের পানি পান করুন। ঘরোয়া উপায় মেনে চলার পরও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া না কমলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

৭. দই খেতে পারেনঃ দই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে খুবই কার্যকরী। দইয়ে থাকে "ল্যাকটোব্যাসিলাস" নামক ভালো ব্যাকটেরিয়া, যা আমাদের অন্ত্রে ও ইউরিনারি সিস্টেমে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। নিয়মিত প্রোবায়োটিক খাবার (যেমন দই) খেলে বারবার ইউরিনারি ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা কমে। দই হজমে সহায়তা করে এবং শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে, যা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করতে পারে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ১-২ কাপ দই রাখুন।

৮. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করাঃ প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমাতে এবং ইউরিনারি ইনফেকশন থেকে রক্ষা পেতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শুধু প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া নয়, আরও অনেক যৌন ও মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকেও আপনাকে রক্ষা করে। প্রতিদিন অন্তত একবার হালকা গরম পানি ও মাইল্ড সাবান দিয়ে যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করুন। প্রস্রাবের পর শুকনো টিস্যু বা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে আলতো করে মুছে নিন।

৯. গরম চাপ দেওয়াঃ প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কমাতে গরম চাপ বা গরম পানির সেঁক একটি কার্যকর ঘরোয়া উপায় হতে পারে, বিশেষ করে যখন নিচের পেট বা প্রস্রাবের পথে অস্বস্তি, ব্যথা বা চাপ অনুভূত হয়। এটি ব্যথা ও টান কমাতে সাহায্য করে এবং পেশিকে রিল্যাক্স করে। গরম কাপড় কিংবা হট ওয়াটার ব্যাগ তলপেটের আশেপাশে এবং পিঠের নিচের অংশে লাগাতে পারেন। এতে করে আপনার ব্লাডারের উপরের অতিরিক্ত চাপ অনেকটাই কমে যাবে এবং ব্যাথাটাও অনেকটা দূর হবে।

পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়ার ঔষধ

পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়ার ঔষধ বা চিকিৎসা নির্ভর করবে সমস্যার কারণের উপর। পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI), প্রস্ট্যাটাইটিস, কিডনি পাথর, যৌনসংক্রমিত রোগ (STD) ইত্যাদি। তাই, এর চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যার কারণের উপর। করবেন। তবে কিছু সাধারণ ঔষধ যা এই ধরনের সমস্যায় ব্যবহৃত হতে পারে, তা হলোঃ
পুরুষদের-প্রস্রাবের-রাস্তায়-জ্বালাপোড়ার-ঔষধ
১. অ্যান্টিবায়োটিকঃ যদি প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে হয়, তবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়। ব্যাকটেরিয়া সাধারণত ইউটিআই বা প্রস্ট্যাটাইটিসের কারণ হয়ে থাকে। সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক নির্বাচন করতে সাধারণত, চিকিৎসক সংক্রমণের ধরন এবং স্থান অনুযায়ী উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক বেছে নেবেন। সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিকগুলোঃ

  • নিট্রোফুরান্টোইনঃ এটি ইউটিআই এবং সাধারণ মূত্রনালী সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি বিশেষভাবে মূত্রনালীর ইনফেকশন দূর করতে কার্যকর।
  • সিপ্রোফ্লোক্সাসিনঃ এটি ফ্লুরোকুইনোলোন শ্রেণীর একটি অ্যান্টিবায়োটিক যা ইউটিআই এবং প্রস্ট্যাটাইটিসের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে।
  • অ্যামোক্সিসিলিনঃ এটি একটি পেনিসিলিন শ্রেণীর অ্যান্টিবায়োটিক যা ইউটিআই, প্রস্ট্যাটাইটিস এবং অন্যান্য মূত্রথলি সংক্রমণ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
  • ট্রিমেথোপ্রিম-সালফামেথোক্সাজোলঃ এটি ইউটিআই এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত একটি সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক।
২. এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ঔষধঃ যদি প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা প্রদাহের কারণে হয়ে থাকে, তবে চিকিৎসক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও ব্যথানাশক ঔষধ নির্ধারণ করতে পারেন। এসব ঔষধ প্রদাহ কমাতে সহায়ক। সাধারণ ঔষধ যেমনঃ

  • আইবুপ্রোফেনঃ এটি একটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (NSAID) ও ব্যথানাশক ঔষধ। এটি প্রদাহ কমাতে এবং ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে।
  • নাপ্রোকসেনঃ এটি আইবুপ্রোফেনের মতো একটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ঔষধ, যা প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • প্যারাসিটামলঃ এটি সহজে পাওয়া যায় এবং হালকা ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়। তবে, এটি শুধুমাত্র ব্যথা উপশম করে, প্রদাহ কমাতে না।
৩. অ্যান্টিসেপটিক মলমঃ অ্যান্টিসেপটিক মলম হলো এক ধরণের ত্বক বা মিউকাস মেমব্রেন (যেমন মূত্রনালী, যোনি) এর ওপর প্রয়োগ করার জন্য ব্যবহৃত মলম, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, অথবা ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে কার্যকর, এবং ক্ষত বা প্রদাহপূর্ণ অঞ্চলকে জীবাণুমুক্ত রাখতে সহায়ক।

  • মেট্রোনিডাজোল মলমঃ এটি একটি অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টি-প্রোটোজোয়াল মলম যা যৌনসংক্রমিত রোগ (STD) যেমন ট্রাইকোমোনিয়াসিস, ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাগিনোসিস, এবং অন্যান্য মিউকাস মেমব্রেন সংক্রমণ চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি প্রদাহ কমাতে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • পেরক্সাইডঃ এটি একটি শক্তিশালী জীবাণুনাশক, যা সাধারণত ক্ষত পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ত্বকের ক্ষত বা ছোট আঘাতে জীবাণু প্রতিরোধে এটি সহায়ক হতে পারে। তবে, দীর্ঘকালীন ব্যবহারে ত্বক শুষ্ক হতে পারে।
৪. প্রস্ট্যাটাইটিসের জন্য ঔষধঃ প্রস্ট্যাটাইটিস হলো প্রস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ, যা পুরুষদের মধ্যে প্রস্রাবের রাস্তায় ব্যথা বা জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে। এটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন ব্যাকটেরিয়াল প্রস্ট্যাটাইটিস (যেটি সংক্রমণের কারণে হয়) এবং ননব্যাকটেরিয়াল প্রস্ট্যাটাইটিস (যেটি সাধারণত অন্য কারণে হয়)। প্রস্ট্যাটাইটিসের চিকিৎসা ঔষধের মাধ্যমে করা হয়, যা প্রদাহ কমাতে এবং লক্ষণ উপশম করতে সহায়ক।

  • ফ্লুকোনাজোলঃ ফ্লুকোনাজোল একটি অ্যান্টিফাঙ্গাল ঔষধ যা মূলত ফাঙ্গাল সংক্রমণ (যেমন ক্যান্ডিডিয়াসিস) এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি এক্রোলিস শ্রেণীর অ্যান্টিফাঙ্গাল ঔষধ এবং সাধারণত মূত্রনালী বা যৌনাঙ্গের ফাঙ্গাল সংক্রমণ, গহ্বরে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে হওয়া ফাঙ্গাল সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
  • অ্যালফা-ব্লকারসঃ এটি এমন ঔষধ যা প্রস্টেট এবং মূত্রথলির পেশিকে শিথিল করে, ফলে প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া কমে যায়। প্রস্ট্যাটাইটিসের কারণে মূত্রনালী বা প্রস্টেটের আশেপাশের পেশিতে টান বা সঙ্কোচন হতে পারে, যা এই ধরনের ঔষধ দ্বারা সহজতর করা হয়।
৫. অ্যান্টিহিস্টামাইনসঃ অ্যান্টিহিস্টামাইনস হলো এমন ধরনের ঔষধ যা হিস্টামাইন নামক রাসায়নিকের কার্যকারিতা প্রতিরোধ করে। Histamine এক ধরনের প্রাকৃতিক রাসায়নিক যা শরীরে সেল থেকে মুক্তি পায় যখন শরীর কোনো এলার্জি বা সংক্রমণের সম্মুখীন হয়। যদি প্রদাহ বা সংক্রমণ তীব্র না হয় এবং শুধুমাত্র অ্যালার্জি বা অস্বস্তির কারণে জ্বালাপোড়া হয়, তবে অ্যান্টিহিস্টামাইনস ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • ডিপেনহাইড্রামিনঃ এটি অ্যালার্জি এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে, যার ফলে মূত্রথলির স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ানো যেতে পারে।

পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়ার চিকিৎসা

পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) একটি সাধারণ সমস্যা, যা মূত্রনালী, মূত্রাশয়, কিডনি বা ইউরেটার (মূত্রনালী থেকে কিডনিতে যাওয়া নল) সংক্রমণের কারণে হতে পারে। এই সংক্রমণ ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে এবং বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে, যার মধ্যে প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া, ব্যথা, অস্বস্তি এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। নিচে পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়ার চিকিৎসা বেখ্যা করা হলোঃ

১. অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধঃ অ্যান্টিবায়োটিক হলো এমন একটি ওষুধ যা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণ প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করতে ব্যবহৃত হয়। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) বা মূত্রনালীর সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রায়শই ব্যবহৃত হয়। তবে, সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক নির্বাচন এবং তার ডোজ রোগীর অবস্থা ও সংক্রমণের ধরনের ওপর নির্ভর করে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত, কারণ ভুল ব্যবহারে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করতে পারে।

ইউটিআই-এর জন্য সাধারণ ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকঃ

  • নিট্রোফুরানটোইনঃ এটি ইউটিআই-এর জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যান্টিবায়োটিকগুলির মধ্যে একটি। এটি বিশেষত মূত্রাশয় এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।
  • ট্রাইমেথোপ্রিম-সালফামেথক্সাজলঃ এটি একটি সংমিশ্রিত অ্যান্টিবায়োটিক যা ইউটিআই-এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি ব্যাকটেরিয়া থেকে পেটান এবং তাদের বিস্তার প্রতিরোধ করে।
  • ফ্লুওরোকুইনোলোনসঃ সিপ্রোফ্লক্সাসিন, লিভোফ্লক্সাসিন ইত্যাদি এই শ্রেণীর অন্তর্গত। এগুলি সাধারণত ইউটিআই বা অন্যান্য গুরুতর সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে, এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলি সাধারণত শুধুমাত্র গুরুতর সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়, কারণ এগুলি অন্যান্য ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  • ফসফোমাইসিনঃ এটি একটি একক ডোজ অ্যান্টিবায়োটিক যা মূত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
  • পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিনঃ এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলি সাধারণত ইউটিআই বা অন্যান্য সংক্রমণ সমাধানে ব্যবহৃত হয়। তবে, এই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে সহজ এবং কম জটিল ইউটিআই-এ ব্যবহৃত হয়।
২. অ্যান্টিসেপটিকঃ ইউটিআই-এর চিকিৎসায় কিছু বিশেষ অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহৃত হয়, যা মূত্রনালীতে সংক্রমণ কমাতে সহায়ক। অ্যান্টিসেপটিক হলো এমন একটি পদার্থ যা জীবাণু, বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ইত্যাদি ধ্বংস বা তাদের বৃদ্ধি রোধ করতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে, অ্যান্টিসেপটিকগুলো জীবাণু বা সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য ব্যবহৃত হয় যেমন ক্র্যানবেরি রস (Cranberry juice) মূত্রাশয়ে ব্যাকটেরিয়া আটকে রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে ইউটিআই-এর প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। তবে, এটি শুধুমাত্র পরিপূরক চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।

৩. পানি বেশি পান করাঃ ইউটিআই-এ আক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি বেশি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শরীরের প্রায় ৬০%-৭০% অংশই জল দিয়ে তৈরি, এবং পানি আমাদের জীবনের প্রতিটি প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য। যথাযথ পরিমাণে পানি পান করলে শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম সঠিকভাবে কাজ করে এবং অনেক শারীরিক সমস্যাও প্রতিরোধ করা যায়। পানি মূত্রনালীতে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া পরিষ্কার করতে সহায়ক হয়। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত যাতে মূত্রনালীতে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া বের হয়ে যায় এবং সংক্রমণ কমে।

৪. হাইজিন বজায় রাখাঃ মূত্রনালী সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সঠিক হাইজিন বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাইজিন বজায় রাখা বা স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শরীরের শুদ্ধতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সুস্থতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। ভালো স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, সংক্রমণ বা রোগ এড়াতে এবং একটি সুস্থ জীবনযাপন করতে হাইজিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে, প্রস্রাব করার সময় সামনে থেকে পিছনে পরিষ্কার করা উচিত। এটি ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে প্রবাহিত হওয়া রোধ করে। এছাড়াও, প্রস্রাবের পর ভালোভাবে হাত ধোয়া এবং সুতির অন্তর্বাস পরিধান করা পরামর্শ দেওয়া হয়।

৫. বিশ্রাম ও মানসিক চাপ কমানোঃ মানসিক চাপ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যা সংক্রমণ বাড়াতে পারে। মানসিক চাপ যদি দীর্ঘদিন ধরে থাকে, তাহলে তা শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ঘুমের সমস্যা, এবং মানসিক অবসাদ। তাই মানসিক চাপ কমানো এবং যথাযথ বিশ্রাম নেওয়া খুবই জরুরি। বিশ্রাম শরীর এবং মনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেওয়া মানে আপনার শরীরকে পুনরুদ্ধারের জন্য পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া, যা দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই মনোরম পরিবেশে বিশ্রাম নেওয়া উচিত এবং কিছু শিথিলতামূলক কার্যকলাপ, যেমন ধ্যান, শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা সহায়ক হতে পারে। 

৬. অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যাফেইন বা মিষ্টি খাবার পরিহার করাঃ অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যাফেইন বা মিষ্টি খাবার পরিহার করা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাফেইন এবং অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার শরীরের ওপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ইউটিআই-এর সময় অতিরিক্ত ক্যাফেইন, অ্যালকোহল বা মিষ্টি খাবার পরিহার করা উচিত, কারণ এগুলি মূত্রনালীতে অতিরিক্ত জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে।

৭. উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থাঃ ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের প্রাথমিক চিকিৎসা হলো অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি। এটি সংক্রমণের কারণ হওয়া ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং রোগীর আরোগ্য দ্রুততর করতে সহায়ক। তবে, সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের জন্য, ব্যাকটেরিয়ার ধরন নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি ইউটিআই গুরুতর হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, যেমন কিডনির সংক্রমণ, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইনফিউশন থেরাপি বা অ্যাডভান্সড অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি শুরু করতে হতে পারে। এটি হাসপাতালে নিরীক্ষণের মাধ্যমে করা যেতে পারে।

পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়ার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি সাধারণত ইউটিআই (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) অথবা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থেকে হতে পারে। এই ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে কিছু সতর্কতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ইউটিআই এবং অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সঠিক জীবনযাপন ও যত্ন গুরুত্বপূর্ণ। নিচে বিস্তারিতভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বর্ণনা করা হলো:

১. পর্যাপ্ত পানি পান করাঃ পানি শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীর থেকে টক্সিন এবং ব্যাকটেরিয়া বের হয়ে যায়, যা ইউটিআই এবং অন্যান্য সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে ব্যাকটেরিয়া এবং টক্সিন বের করে দেয়। যদি কিডনি বা ইউটিআই সম্পর্কিত সমস্যা থাকে, তবে পানি পান করার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। পানি পান করা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে, যা ইউরিনারি ট্র্যাক্টকে সুস্থ রাখে এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি কমায়।

২. শরীরের হাইজিন বজায় রাখাঃ ইউটিআই ও অন্যান্য প্রস্রাবের রাস্তায় সমস্যা কমাতে শারীরিক পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষভাবে পুরুষদের জন্য পেশাবের রাস্তা বা অঙ্গ পরিষ্কার করে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। দিনের শেষে অন্তর্বাস পরিবর্তন করুন। এটি ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। সুতির অন্তর্বাস পরিধান করলে আর্দ্রতা কম থাকবে। সারা দিন আর্দ্র থাকা অবস্থায় শরীরের কিছু অংশে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই শরীরের কোন অংশ আর্দ্র থাকলে তা দ্রুত শুকানোর ব্যবস্থা করা উচিত।

৩. ক্যাফেইন এবং মিষ্টি খাবার পরিহার করাঃ অতিরিক্ত ক্যাফেইন (কফি, চা, সোডা) এবং মিষ্টি খাবার (যেমন কেক, চকলেট, ক্যান্ডি) ইউটিআই বা প্রস্রাবের রাস্তার জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করতে পারে। ক্যাফেইন মূত্রবর্ধক হয়ে মূত্রনালীর অস্বস্তি সৃষ্টি করে, এবং মিষ্টি খাবারের কারণে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। অতিরিক্ত ক্যাফেইন পান না করা উচিত। এটি প্রস্রাবের রাস্তার মিউকাস মেমব্রেনকে অস্বস্তি দিতে পারে। অতিরিক্ত চিনির খাবারের বদলে ফলমূল বা স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। সোডা, কোল্ড ড্রিংকস এবং উচ্চ চিনির পানীয় ইউটিআইয়ের কারণ হতে পারে, তাই এসব থেকে বিরত থাকা উচিত।

৪. প্রতিদিন কিছু শারীরিক ব্যায়াম করাঃ ফিজিক্যাল একটিভিটি ইউরিনারি ট্র্যাক্টে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এ কারণে নিয়মিত ব্যায়াম করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাঁটা, সাইকেল চালানো, যোগব্যায়াম বা অন্যান্য ব্যায়াম ইউরিনারি ট্র্যাক্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। স্থূলতা ইউটিআই এবং অন্যান্য প্রস্রাবের রাস্তার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখা উচিত।

৫. যৌনস্বাস্থ্য সচেতনতাঃ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ইউরিনারি ট্র্যাক্টে প্রবাহিত হতে পারে। পুরুষদের জন্য এই ধরনের সমস্যা প্রতিরোধে যৌনস্বাস্থ্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যৌন মিলনের পর শৌচকর্ম করা উচিত, কারণ এটি মূত্রাশয়ে আটকে থাকা ব্যাকটেরিয়া বের করে দেয়। যদি যৌন সঙ্গীর সংক্রমণ থাকে, তবে এটি পুরুষদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই যৌন সঙ্গীকে পরীক্ষা করা এবং সঠিক সুরক্ষা ব্যবহার করা উচিত।

৬. প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহারঃ ক্র্যানবেরি জুস এবং প্রোবায়োটিকস (যেমন দই বা কেফির) ইউটিআই এবং প্রস্রাবের রাস্তার ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়ক। ক্র্যানবেরি জুস ইউটিআই প্রতিরোধে সহায়ক, কারণ এটি ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীর দেওয়ালে আটকে থাকতে দেয় না। ক্র্যানবেরির অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী ইউটিআই কমাতে সাহায্য করতে পারে। দই, কেফির, এবং অন্যান্য প্রোবায়োটিক খাদ্য ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রোবায়োটিকস শরীরের ভালো ব্যাকটেরিয়াকে বৃদ্ধি করে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে।

৭. যৌনমিলনের পরে প্রস্রাব করাঃ প্রস্রাব করা সহজ কাজ মনে হলেও এর মাধ্যমেও ইউটিআই প্রতিরোধ করা সম্ভব। যৌনমিলনের পরে প্রস্রাব করা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) এবং অন্যান্য প্রস্রাবের রাস্তার সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। যৌনমিলনের পর প্রস্রাব করার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু মূত্রাশয়ে প্রবাহিত হতে পারে না, এবং এটি ইউটিআই বা অন্যান্য সংক্রমণ এড়াতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় এবং ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

৮. স্ট্রেস কমানোঃ স্ট্রেস কমানো বা মানসিক চাপ কমানোর বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যা শরীর এবং মনের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত স্ট্রেস শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে এবং বিভিন্ন শারীরিক বা মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যেমন: হাইপারটেনশন, অস্থিরতা, উদ্বেগ, ব্যথা, এবং ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন। স্ট্রেস কমানোর মাধ্যমে আপনি আরও ভালো মানসিক শান্তি, শরীরিক সুস্থতা এবং জীবনে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন।

৯. প্রতিরোধমূলক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারঃ প্রতিরোধমূলক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে কোনো সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক আগে থেকেই দেওয়া হয়, যাতে সংক্রমণ হওয়ার আগে তা প্রতিরোধ করা যায়। এটি সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট অবস্থায় ব্যবহৃত হয়, যেমন- অপারেশনের পর, কিছু রোগের প্রতিরোধে, বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন এর পুনরাবৃত্তি কমানোর জন্য। যদি পুরুষের ইউটিআই পুনরাবৃত্তি হতে থাকে, তবে চিকিৎসক প্রতিরোধমূলক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে পারেন। দীর্ঘমেয়াদী অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি পুনরাবৃত্তি ইউটিআইর ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যাদের ক্রনিক ইউটিআই রয়েছে, তাদের জন্য এটি উপকারী হতে পারে।

প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়ার ডায়াগনোসিস এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা

পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় ও প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়ার সঠিক কারণ নির্ণয়ে ডায়াগনোসিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া একটি সাধারণ উপসর্গ যা প্রস্রাবের রাস্তার কোনো সমস্যা, সংক্রমণ বা রোগের ফলে হতে পারে। এই সমস্যা প্রায়ই ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন এর একটি প্রধান উপসর্গ। নিচে পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়ার ডায়াগনোসিস এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা বর্ণনা করা হলোঃ
ডায়াগনোসিস-এবং-পরীক্ষা-নিরীক্ষা
১. শারীরিক পরীক্ষাঃ চিকিৎসক শারীরিকভাবে পরীক্ষা করবেন যাতে তারা পেট, মূত্রথলি, এবং অন্যান্য অঙ্গের অবস্থা মূল্যায়ন করতে পারেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে জেনিটাল অঞ্চল এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্টেট পরীক্ষা করা হতে পারে।

২. প্রস্রাবের পরীক্ষাঃ প্রস্রাব পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা। এতে ব্যাকটেরিয়া, লিউকোসাইট (white blood cells), রক্ত, প্রোটিন বা অন্যান্য অস্বাভাবিক উপাদান দেখতে পাওয়া যায়। এটি ইউটিআই বা অন্যান্য সংক্রমণের উপস্থিতি নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।

৩. ব্যাকটেরিয়াল কালচারঃ যদি প্রস্রাব পরীক্ষায় কোনো ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকে, তবে প্রস্রাব কালচার করা হয় যাতে ব্যাকটেরিয়ার ধরন এবং এটি কোন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীল তা জানা যায়। এই পরীক্ষাটি ইউটিআই-এর জন্য খুবই কার্যকরী।

৪. পিপিআর (PVR) স্ক্যানঃ যদি চিকিৎসক মনে করেন যে মূত্রথলিতে অতিরিক্ত প্রস্রাব জমে যাচ্ছে বা মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি হচ্ছে না, তবে পোস্টভিদ্যাল রেসিডুয়াল স্ক্যান করা হতে পারে। এতে মূত্রাশয় খালি হচ্ছে কিনা এবং প্রস্রাবের জমে থাকা পরিমাণ জানা যায়।

৫. কিডনি আলট্রাসোনোগ্রাফিঃ যদি কিডনি পাথর বা মূত্রথলির কোনো অস্বাভাবিকতা (যেমন, পাথর, টিউমার) সন্দেহ করা হয়, তবে কিডনি আলট্রাসোনোগ্রাফি করা হতে পারে। এটি কিডনি এবং মূত্রথলি পর্যালোচনা করার একটি অতি কার্যকরী পদ্ধতি।

৬. সিস্টোস্কোপিঃ যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী বা পুনরাবৃত্তি হয়, তবে সিস্টোস্কোপি নামক একটি পদ্ধতিতে মূত্রনালী এবং মূত্রথলি পরীক্ষা করা হতে পারে। এটি একটি ছোট ক্যামেরা দ্বারা করা হয় যা মূত্রনালী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মূত্রথলি পরীক্ষা করে।

৭. হরমোনাল পরীক্ষাঃ যদি মহিলাদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকে, তাদের জন্য হরমোনাল পরীক্ষা (বিশেষত মেনোপজ বা গর্ভধারণের ক্ষেত্রে) করা হতে পারে, কারণ হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে ইউটিআই হতে পারে।

৮. ডায়াবেটিস পরীক্ষাঃ যেহেতু ডায়াবেটিসের রোগীরা বেশি ইউটিআই এবং প্রস্রাবের সমস্যায় ভোগেন, তাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরীক্ষা করা যেতে পারে।

শেষকথাঃ পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়

পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় এই সমস্যার মূল কারণ নির্ধারণ করতে সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে, স্বাস্থ্যের কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যৌন স্বাস্থ্য এবং শারীরিক পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ডায়াগনোসিস এবং চিকিৎসার মাধ্যমে সমস্যা দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। পুরুষদের জন্য যথাযথ হাইজিন বজায় রাখা, যৌন সম্পর্কের সময় সতর্কতা অবলম্বন এবং কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।

পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর কারণ নানা হতে পারে, এবং এটি সঠিকভাবে শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষদের মধ্যে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে ইউটিআই (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন), প্রস্ট্যাটাইটিস (প্রস্টেটের প্রদাহ), কিডনি পাথর, যৌনসংক্রমণ (STD), এবং মূত্রথলির সংক্রমণ অন্তর্ভুক্ত। ইউটিআই পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে এটি পুরুষদেরও আক্রান্ত করতে পারে।

প্রস্ট্যাটাইটিস পুরুষদের মধ্যে খুবই সাধারণ একটি কারণ, যেখানে প্রস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ এবং ব্যথা হয়, যার ফলে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। এছাড়া, পুরুষদের মধ্যে কিডনিতে পাথর এবং মূত্রথলির ব্লকেজ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। তবে, যৌনসংক্রমিত রোগ যেমন- গনোরিয়া বা চিকনোসিয়া, যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে পুরুষের মূত্রনালীতে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে, যৌন স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে এ ধরনের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url