ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানেন না। আজকের
এই আর্টিকেলে আপনি কিভাবে ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খুলবেন সে সম্পর্কে
আলোচনা করব। দেশের ব্যাংকিং ক্ষেত্রে ডাচ বাংলা ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। ডাচ বাংলা ব্যাংকের বাংলাদেশে ৬৪টি জেলায় সর্বোমোট ২১০ টি
শাখা রয়েছে।
যার জন্য আপনি দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে লেনদেন করতে পারবেন। এই লেনদেনের জন্য
অবশ্যই আপনার একটি ডাচ বাংলার একাউন্ট লাগবে। ডাচ বাংলা ব্যাংক বাংলাদেশের একটি
লিডিং ব্যাংক। এই ব্যাংকে একাউন্ট খোলা অনেক সহজ একটি কাজ। যেটা অন্যান্য সকল
ব্যাংকের থেকে তুলনামূলক অনেক সহজ।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
- ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্টের প্রকারভেদ
- ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
- ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে
- ডাচ বাংলা ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
- স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে
- ডাচ বাংলা ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট চার্জ
- ডাচ বাংলা ব্যাংক লোন পদ্ধতি
- ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম
- শেষ কথাঃ ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্টের প্রকারভেদ
ডাচ-বাংলা ব্যাংক (DBBL) গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন ধরণের একাউন্ট অফার করে, যা
তাদের আর্থিক প্রয়োজন ও লক্ষ্য অনুযায়ী উপযোগী। ডাচ বাংলা ব্যাংকের অধীনে
কতগুলো একাউন্ট খুলতে পারবেন। আর কোন কোন একাউন্ট খুলতে পারবেন এই নিয়ে আপনারা
বরাবরই দ্বিধাগ্রস্থ থাকেন। এখন আপনারা জানতে পারবেন ডাচ বাংলা ব্যাংকের
একাউন্টের প্রকারভেদ গুলো সম্পর্কে। তো চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া
যাক।
আপনি সাধারণত ডাচ বাংলা ব্যাংকের অধীনে দুই ধরনের ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুবিধা
উপভোগ করতে পারবেন। এ দুই ধরনের ব্যাংক একাউন্ট গুলো হলো-(১) ডাচ বাংলা ব্যাংক
স্টুডেন্ট একাউন্ট। (২) ডাচ বাংলা ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট। এই দুটি অ্যাকাউন্ট
হলো ডাচ বাংলা ব্যাংকের প্রধান একাউন্ট। তবে এগুলোর আওতায় আরো মোট ৭ ধরনের
একাউন্টে ডাচ বাংলা ব্যাংক সেবা প্রদান করে থাকে। সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত
জেনে নিনঃ
১. সেভিংস ডিপোজিট একাউন্ট স্ট্যান্ডার্ডঃ আপনি যদি সেভিংস ডিপোজিট
একাউন্ট স্ট্যান্ডার্ড একাউন্ট টি ডাচ বাংলা ব্যাংকে তৈরি করতে চান, তাহলে
আপনাকে একাউন্টে ৫০০ টাকা জমা রাখার জন্য দেওয়া লাগবে। এর কম টাকায় এ একাউন্ট
আপনি চালু করতে পারবেন না।
২. সেভিংস ডিপোজিট একাউন্ট প্লাসঃ সেভিংস ডিপোজিট একাউন্ট প্লাস এ
ক্যাটাগরিতে যদি আপনি একাউন্ট তৈরি করতে চান তাহলে মিনিমাম আপনাকে ৫০০০ টাকা
জমা রাখতে হবে। এর কম টাকা দিয়ে এ ধরনের একাউন্ট আপনি ডাচ বাংলা ব্যাংকে চালু
করতে পারবেন না। তবে এ টাকা আপনার জমা থাকবে, পরবর্তীতে তুলতে পারবেন।
৩. এক্সেল সেভিংস একাউন্টঃ ডাচ বাংলা ব্যাংকে যদি আপনি এক্সেল সেভিংস
একাউন্ট খুলতে চান তাহলে একাউন্ট তৈরির জন্য আপনাকে ৫০০ টাকা প্রদান করতে
হবে। এ টাকা আপনার জমা হিসেবে রাখা হবে এবং পরবর্তীতে তুলতে পারবেন না।
৪. ডিবিবিএল স্কুল সেভার্স একাউন্টঃ ডাচ বাংলা ব্যাংকে যদি আপনি ডিবিবিএল
স্কুল সেভার্স একাউন্ট খুলতে চান তাহলে ১০০ টাকা আপনার একাউন্ট চালু করার
জন্য রাখতে হবে। এ একাউন্টে একটি বিশেষ সুবিধা হলো, কোনো প্রকার চার্জ প্রদান
করতে হয় না।
৫. ইন্টারেস্ট ফ্রি সেভিংস ডিপোজিট একাউন্টঃ ডাচ বাংলা ব্যাংকে যারা সুদ
মুক্ত একাউন্ট খুলে রাখতে চান তাদের জন্য ইন্টারেস্ট ফ্রি সেভিংস ডিপোজিট
একাউন্ট। বিশেষ করে ধর্মপ্রিয় মুসলিম ব্যাক্তিরায় এ ধরনের একাউন্ট খুলতে চায়।
এ একাউন্টটি তৈরির জন্য ৫০০০ টাকা প্রদান করতে হয়, যা পরবর্তীতে তুলতে পারবেন
না।
৬. কারেন্ট ডিপোজিট একাউন্টঃ ডাচ বাংলা ব্যাংকে যদি আপনি কারেন্ট ডিপোজিট
একাউন্ট তৈরি করতে চান তাহলে ৫০০ টাকা আপনাকে প্রদান করতে হবে। এছারাও
প্রতিবছর একাউন্ট রক্ষণাবেক্ষণ, এটিএম কার্ড, এসএমএস এলার্ট ইত্যাদির জন্য
নির্দিষ্ট পরিমাণে চার্জ দিতে হবে।
৭. স্পেশাল নোটিস ডিপোজিট একাউন্টঃ ডাচ বাংলা ব্যাংকে যদি আপনি স্পেশাল
নোটিশ ডিপোজিট একাউন্ট তৈরি করতে চান তাহলে আপনাকে আপনার ব্যালেন্সে ২০০০
টাকা জমা রাখতে হবে। এছারাও প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ দেওয়া লাগবে।
ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে অনেকের জানা নেই কিভাবে ডাচ
বাংলা ব্যাংকের একাউন্ট খুলতে হয়। ডাচ বাংলা ব্যাংক এ ৭ টি ক্যাটাগরিতে একাউন্ট
আপনি খুলতে পারবেন। সেগুলো হলো-স্ট্যান্ডার্ড, এক্সেল সেভিংস একাউন্ট, সেভিংস
ডিপোচিট প্লাস একাউন্ট, ডিবিবিএল স্কুল সেভার একাউন্ট, সুদ মুক্ত সেভিংস
ডিপোজিট একাউন্ট, কারেন্ট ডিপোজিট একাউন্ট এবং বিশেষ নোটিশ জমা একাউন্ট।
ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে প্রথমে ডাচ বাংলা ব্যাংকের
নিকটস্থ স্থায়ী শাখা অফিসে যেতে হবে। তারপরে সেখানে গিয়ে কর্মকর্তাগণকে
জানাবেন আপনি এখানে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে চান। এরপর তারা আপনাকে একটা আবেদনের
জন্য ফরম দিবে। আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ক্যাটাগরি অনুযায়ী ফরম পূরণ করে
তাদের প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র আর তার সাথে ব্যাংকের প্রাথমিক ডিপোজিটের টাকা
জমা দিতে হবে। ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন কি কি লাগবে জেনে নিনঃ
- আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- আপনার একাউন্টের জন্য যিনি নমিনি হবেন তার জাতীয় পরিচয় পত্রের ২টি ফটোকপি।
- আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ৪ কপি সদ্যতোলা রঙিন ছবি এবং নমিনির ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি লাগবে।
- ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্টে রয়েছে এমন একজন রেফারেন্স দরকার হবে।
- কারেন্ট বিল, গ্যাস বিল, ইউটিলিট বিলের ফটোকপির প্রয়োজন হতে পারে।
- কোনো ব্যাবসায়ী যদি একাউন্ট খুলতে চায়, তাহলে ব্যবসায়ীর ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হয়।
সাধারনত উপরের বলা কাগজপত্রগুলো ডাচ বাংলা একাউন্ট খুলতে প্রয়োজন হবে। তবে
এগুলো ছাড়াও আপনি কোন ক্যাটাগরিতে একাউন্ট খুলবেন সে অনুযায়ী কিছু কাগজপত্র
ভিন্ন লাগে। তাই আপনি কোন ক্যাটাগরিতে একাউন্ট খুলতে চান, সেটি প্রথমে বাছাই
করে নিবেন এবং সে অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ করবেন। এরপর আপনার সকল তথ্যগুলো যদি সঠিক
থাকে তাহলে সেই ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ আপনার তথ্যগুলো যাচাই বাছাই করার পরে
আপনার জন্য একটি ব্যাংকের হিসাব নম্বর তৈরি করবে।
ব্যাংকের এসব নম্বর তৈরি করে তার একটি রিসিট আপনার হাতে দিবে। তাহলে বুঝে নেবেন
আপনার ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্ট খোলা কমপ্লিট হয়ে গেছে। তবে অনলাইনের
মাধ্যমেও খুব সহজে নির্ভুল একাউন্ট খোলা যায়। অনলাইনে ডাচ ব্যাংলা ব্যাংকের
একাউন্ট খুলতে চাইলে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ওয়েবসাইট বা অ্যাপে প্রবেশ করবেন,
সেখানে কি কি তথ্য লাগবে বলা আছে। সে অনুযায়ী আপনাকে অনলাইন ফরম পূরন করতে হবে
এবং সাবমিট করতে হবে। এভাবেই উপরের নিয়মগুলো ফলো করে খুলে নিতে পারবেন ডাচ
বাংলা ব্যাংক একাউন্ট।
ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে
ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে তা নির্ভর করে আপনি কোন ধরণের
একাউন্ট খুলবেন তার উপর। ডাচ বাংলা ব্যাংক বর্তমানে একটি জনপ্রিয় ব্যাংক
তারা গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। আপনি যখন ডাচ বাংলার
সেভিংস একাউন্ট খুলতে যাবেন তখন আপনাকে একটি ফর্ম দেওয়া হবে। আর এই ফর্মের
সাথে আপনাকে কিছু ডকুমেন্ট প্রদান করতে হবে। চলুন জেনে নেই কোন কোন
ডকুমেন্টেগুলা অ্যাকাউন্ট খোলার সময় প্রয়োজন হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি ফটোকপি।
- আপনাকে অবশ্যই সাবালোক হতে হবে। অর্থাৎ আপনার বয়স ১৮ বছরের উর্ধ্বে হতে হবে।
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের চার কপি রঙিন ছবি।
- আপনার একাউন্টে যে ব্যক্তি নমিনি হবে তার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
- নমিনির দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আপনাকে ন্যূনতম ৫০০ টাকা জমা রাখতে হবে।
- ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে এমন একজন ব্যক্তির সুপারিশ লাগবে।
- আর যদি আপনি একজন ব্যবসায়ী হয়ে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার ট্রেড লাইসেন্স এর প্রয়োজন হবে।
ডাচ বাংলা ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
ডাচ বাংলা ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম অন্য যে কোনো ব্যাংকের তুলনায়
সহজ। ডাচ বাংলা ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য প্রথমে আপনাকে প্রয়োজনিয়
কিছু ডকুমেন্টস, যেমন: জন্ম নিবন্ধন, স্টুডেন্ট কার্ড, ইত্যাদি নিয়ে আপনার
নিকটস্থ ডাচ বাংলা ব্যাংক শাখায় যেতে হবে। এরপর সেখানে গিয়ে আপনি তাদেরকে অবগত
করবেন যে, আপনি তাদের এই ব্রাঞ্চে একটি স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে চান।
সেখানে তারা আপনাকে স্টুডেন্ট একাউন্ট তৈরির জন্য একটি ফর্ম দেবে। ফর্মটি পূরণ
করে ডকুমেন্টস সহ ব্যাংকে জমা দিন। সেই সাথে আপনার প্রাইমারি ডিপোজিট সম্পন্ন
করলে আপনার একাউন্ট খোলার কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। স্টুডেন্ট একাউন্টের জন্য ফরম
জমা দেওয়ার পরেই কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার জন্য একটি স্টুডেন্ট একাউন্ট তৈরি
হয়ে যাবে। ফর্ম, ডকুমেন্টস ও টাকা জমা দেয়ার পর আপনার কাছ থেকে ব্যাংক হয়তো
একদিন সময় নিতে পারে।
এরপর আপনাকে ম্যাসেজ এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে আপনার একাউন্ট খোলা সম্পন্ন
হয়েছে কিনা। এখানে স্টুডেন্টদের জন্য প্রচলিত সেভিংস একাউন্টের থেকে ভিন্ন কিছু
ডকুমেন্টস দরকার হয়ে থাকে। আপনি যদি চান তাহলে এই স্টুডেন্ট একাউন্ট এর জন্য
একটি ইনস্ট্যান্ট ATM কার্ডও নিতে পারবেন। এই ডাচ বাংলা ব্যাংকের স্টুডেন্ট
একাউন্ট শুধুমাত্র ছাত্র-ছাত্রীরা খুলতে পারবে। এছাড়া অন্য কেউ এই স্টুডেন্ট
একাউন্ট খুলতে পারবে না।
স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়।
বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ডাচ-বাংলা ব্যাংকে স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট ওপেন
করে থাকেন। ডাচ-বাংলা ব্যাংকে স্টুডেন্টের দুই ধরনের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। একটি
হচ্ছে ১৮ বছরের নিচে, যার নাম হচ্ছে DBBL স্কুল সেভার্স অ্যাকাউন্ট এবং অন্যটি
১৮ বছরের উপরে, সাধারণ স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট। এই ধরনের অ্যাকাউন্ট ওপেন করার
জন্য নিম্নে উল্লেখিত কাগজপত্র প্রয়োজন হয়।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url